ইবন জুহর ছিলেন মধ্যযুগের সবথেকে বিখ্যাত শল্যচিকিৎসক। তাঁর হাত ধরেই অস্ত্রোপচারের দুনিয়ায় বিপ্লব আসে। তিনিই সর্বপ্রথম ক্যান্সার শনাক্ত করেছিলেন।
পশ্চিমা দেশে তিনি অভেনজোয়ার নামে পরিচিত এবং তাঁর লেখা “আল-তায়সির ফিল-মুদাবত ওয়াল-তদবির” (Al-Taysīr fil-Mudāwāt wal-Tadbīr) ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষাতে অনূদিত হয়েছিল এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রভূত প্রভাব বিস্তার করেছিল সেই সময়ে। তিনি আরব দুনিয়ার সম্ভবত সবথেকে বিখ্যাত ডাক্তার-শল্যচিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি একজন কবিও ছিলেন।
ইবন জুহর ও তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন
স্পেনের সেভিয়ায় ১০৯৪ অব্দে সিরিয়ার আরবীয় ইয়াদ উপজাতির বিশিষ্ট বানু জুহর বংশে জন্মগ্রহণ করেন ইবন জুহর।
জানা যায় এই বংশে ষষ্ঠ প্রজন্ম অব্দি প্রখ্যাত ডাক্তার রা জন্মেছিলেন। সাধারণ মুসলিম পরিবারের মত তিনি ছোটবেলায় ধর্ম এবং সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো শুরু করেন।
তাঁর পিতা আবুল আলা জুহরের হাত ধরেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে শিক্ষালাভ শুরু হয়। তাঁর আব্বা তাঁকে বিখ্যাত রোমান চিকিৎসক গ্যালেন এবং পৃথিবী বিখ্যাত গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটের কাজের সাথে পরিচয় করান।
তিনি কর্মজীবন শুরু করেন আলমোরাভিদ সাম্রাজ্যের প্রাসাদে যদিও পরবর্তীতে তাদের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে তিনি কারাগারে বন্দিও থাকেন। এরপর ১১৪৭ থেকে ১১৬২ অব্দি আমৃত্যু তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা এবং উন্নতিকল্পে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
ধর্মের প্রতি অগাধ আস্থা থাকা এই মুসলিম ডাক্তার-বিজ্ঞানী বলতেন, “বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া মানবজাতির জন্য জরুরি, যেমন জরুরি এটা জানা যে জ্ঞান আল্লাহ প্রদান করে আর কিছু কিছু জিনিস আছে যা এখনও আমাদের বোঝার বাইরে।”
ইবন জুহরের উল্লেখ্য কাজ
তিনি সর্বপ্রথম পাকস্থলী, খাদ্যনালী এবং জরায়ুর ক্যান্সার শনাক্ত করেন। তিনি ক্যান্সারের নাম দিয়েছিলেন ‘আকিলা’ যার অর্থ খেয়ে ফেলা এবং তিনি ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণে আনার অনেক পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করে গেছিলেন।
শ্বাসনালীর অস্ত্রোপচারে তিনি বিপ্লব এনেছিলেন। ছাগলের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিনি তা মানবদেহে প্রয়োগ করতেন এবং তার এই পদ্ধতি শতাব্দী পরেও বিখ্যাত ডাক্তার-শল্যচিকিৎসকরা ব্যবহার করে মরণাপন্ন রোগীকে জীবনদান করতেন।
তিনি মানবদেহে ফুসফুসের অস্ত্রোপচারের জন্য মৃত ভেড়ার ফুসফুস নিয়ে গবেষণা করতেন।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
ইবন জুহরের লেখা গ্রন্থগুলি চিকিৎসাশাস্ত্রে অমূল্য রচনা। তাঁর লেখা কিতাব আল-ইকতিসাদ গ্রন্থে সাধারণ রোগ এবং তা থেকে আরোগ্য লেভার উপায় বর্ণনা করা আছে। কিতাব আল-আগদিয়া গ্রন্থে তিনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ইত্যাদির বর্ণনা দিয়েছেন।
মৃত্যুর আগে তাঁর লেখা শেষ এবং সব থেকে বিখ্যাত গ্রন্থ কিতাব আল-তায়সির এ তিনি ঔষধ নিয়ে তাঁর গবেষণা লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
এই বইটি ষোড়শ খ্রিস্টাব্দ অবধি ১০ বারেরও বেশি বার ছাপানো হয় এবং সেই সময়ের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হত। তাঁর আবিষ্কৃত ট্র্যাকিওটোমি পদ্ধতি ইবন জুহর-কে অমর করে দিয়েছে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ