Home ইতিহাস ও জীবনী নবীজির ওপর কুরাইশদের অকথ্য নির্যাতন

নবীজির ওপর কুরাইশদের অকথ্য নির্যাতন

যখন কোনোভাবেই মহানবী (সা.) ও সাহাবিদের ইসলামবিমুখ করা গেল না, তখন তারা মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন শুরু করে। মুসলিম তৎপরতা ঠেকাতে মক্কার শীর্ষস্থানীয় ২৫ ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। যার নেতৃত্বে ছিল আবু লাহাব ইবনে আবদুল মুত্তালিব। তারা মুসলিমদের ওপর সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার অনুমোদন করে।

মহানবী (সা.)-এর অনন্য ব্যক্তিত্ব, বংশীয় মর্যাদা ও আবু তালিবের আশ্রয়ের কারণে তাঁর ওপর সরাসরি আঘাত করা সহজ ছিল না। তাই তাদের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয় দরিদ্র্য ও অসহায় মুসলিমরা। রাসুলুল্লাহ (সা.), আবু বকর ও উসমান (রা.)-এর মতো অভিজাত ব্যক্তিরা প্রথমে নির্যাতন থেকে মুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে তারাও নানা অত্যাচার ও লাঞ্ছনার শিকার হন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৯৮-৯৯)

একবার পবিত্র কাবা তাওয়াফ করার সময় মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে নানা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করল। প্রথম দুবার চুপ করে থাকলেন। তৃতীয়বার বললেন, ‘কুরাইশের লোকেরা, আমি তোমাদের জন্য ধ্বংস বয়ে এনেছি।’ তাঁর কথায় কুরাইশরা হতভম্ব হয়ে গেল, কিছুই বলতে পারল না।

কিন্তু পরের দিন মহানবী (সা.) তাওয়াফ করতে গেলে মুশরিকরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গলায় চাদর পেঁচিয়ে ধরে যেন দম আঁটকে যায়। আবু বকর (রা.) তাদের প্রতিহত করেন। এরপর তারা নবীজি (সা.)-কে ছেড়ে দিলেন কিন্তু আবু বকর (রা.)-কে বেদম প্রহার করে, তাঁর দাঁড়ি ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যায়। ফলে তার মুখ ও মাথা ফুলে যায়।

আরও পড়তে পারেন-

আরেক দিন মহানবী (সা.) মসজিদুল হারামে সেজদারত অবস্থায় ছিলেন। তখন উকবা ইবনে আবি মুয়িত আল্লাহর রাসুলের মাথার ওপর মরা উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেয়। ফলে তিনি উঠতে পারছিলেন না। ফাতিমা (রা.) দৌড়ে এসে তাঁর ওপর থেকে নাড়িভুঁড়ি সরিয়ে দেন। ভারমুক্ত হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই পাষণ্ডসহ আরো কয়েকজনের নাম ধরে বদদোয়া করেন।

তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আবু জাহেলকে পাকড়াও করো, উতবা ইবনে রাবিয়া, শায়বা ইবনে রাবিয়া, ওয়ালিদ ইবনে উতবা, উমাইয়া ইবনে খালফ এবং উকবা ইবনে আবি মুয়িতকে পাকড়াও করুন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যাদের বদদোয়া করেছিলেন তাদের বদরের দিন কূপের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেছি।’ (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ১৩৫ ও ১৩৭; আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১০৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার মক্কার লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হে লোকেরা, বলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; তোমরা সফল হবে।’ তখন লোকেরা তাঁকে গালি দিল এবং তার চেহারা মোবারকে ধুলো নিক্ষেপ করল। তাঁর পুরো শরীর ধুলাধূসরিত হয়ে গেল।

তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মেয়ে জয়নব (রা.) তাঁর চেহারা মোবারক ধুয়ে দেন। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মেয়ে, তুমি তোমার পিতার ব্যাপারে এমন আশঙ্কা করো না যে তিনি আকস্মিক মারা যাবেন বা লাঞ্ছিত হবেন।’

রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন জুলুমে জর্জরিত হয়ে পড়তেন, মহান আল্লাহ তাকে ওহি অবতীর্ণ করে সান্ত্বনা দিতেন।

যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আপনার প্রতিপালক আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। আপনার জন্য পরবর্তী সময় তো পূর্ববর্তী সময় অপেক্ষা শ্রেয়। অচিরেই আপনার প্রতিপালক আপনাকে অনুগ্রহ দান করবেন আর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।’ (সুরা দুহা, আয়াত : ৩-৫; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩০৬)

গ্রন্থনা : আতাউর রহমান খসরু।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।