Home ইতিহাস ও জীবনী সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’: আজও মুগ্ধ করে সকলকে

সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’: আজও মুগ্ধ করে সকলকে

সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’র ইতিহাস অতি প্রাচীন। অল্প সোনার কাজ করা, বর্ণহীন হলুদ কাচের তৈরি এই পাত্র সিরিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু কবে ‘তাজ্জা’ তৈরি করা হত, এবং কে এর মালিক ছিলেন, সেই ইতিহাস অনেকেরই অজানা। আজ আমরা সেটি নিয়ে আলোচনা করব।

‘তাজ্জা’র সৌন্দর্যই নজর কাড়ে

‘তাজ্জা’ অনেকটা পেয়ালার মতো দেখতে, এর তিনটি অংশ থাকে। একেবারে উপরে থাকে বাটির মতো গোল অংশ, লম্বা দণ্ড এবং নীচের চ্যাপ্টা অংশ, যার উপর ভর দিয়ে ‘তাজ্জা’ দাঁড়িয়ে থাকে। হলুদ কাচের তৈরি এই সিরিয়ান পাত্রে নীল, লাল, হলুদ, কালো এবং সবুজ ইত্যাদি নানা রংয়ের এনামেল দিয়ে ঠাসবুনোটে নকশা করা থাকে। ‘তাজ্জা’র কাচের গায়ে অজস্র ছোট-বড় আকারের বুদবুদ থাকে। আর যেহেতু ‘তাজ্জা’র গায়ে অজস্র নকশা কাটা থাকে, তাই এর এনামেল গ্লাসের সূক্ষ্মতার দিকটিতে বেশি নজর দেওয়া হয় না।

আরও পড়তে পারেন-

কারণ ‘তাজ্জা’ হাতে নিলেই অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে আপনার চোখ ওই অপূর্ব কারুকাজ করা নকশাতেই চলে যেতে বাধ্য! সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’র উপরের অংশকে বাটির আকার দিতে একধরনের যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়। এই একই পদ্ধতিতে নীচের অংশটিও বানানো হয় এবং আলাদা করে বানিয়ে একে একটি লম্বা দণ্ডের সাহায্যে জুড়ে দেওয়া হয়। পাত্রের বেড়ে মালার ন্যায় সোনালি নকশা করা থাকে।

সুলতানদের প্রিয় সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’

‘তাজ্জা’র উপরের গোল বাটির মতো অংশটি দু’টি চারভাগে বিভক্ত অংশ দিয়ে সজ্জিত এবং একটি বৃহত্তর কেন্দ্রীয় অংশ দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকে। এগুলিতে পরপর নানারকম আকৃতি এবং নকশি লিপিতে দু’লাইন করে লেখা থাকে। এই ভাগ করা অংশগুলি আবার একটি গোল চাকতির মতো অংশ দিয়ে পরস্পরকে ছেদ করে। এই চাকতির মতো অংশটিতে সাদা জমিনের মধ্যে থাকে একটি কালো ঈগলের ছবি, এবং এর দুইপাশে কিছু পাখির ছবি থাকে।

এই গোলাকার চাকতির মতো অংশটি সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’র নীচের দিকেও দেখতে পাওয়া যায়। এগুলিতে পরপর ছ’টি বাহুবিশিষ্ট তারা এবং লতানে নকশা থাকে। যদিও এই পাত্রের ঢাকনা খুঁজে পাওয়া যায়নি, কিন্তু তাতেও ‘তাজ্জা’র সৌন্দর্য একচুলও কমে না! কিন্তু কবে থেকে এল সুলতানদের প্রিয় এই সিরিয়ান বাটি? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ঘাঁটতে হবে ইতিহাস। মোটামুটি ত্রয়োদশ শতকে বাহরি মামলুকদের রাজত্বকালকেই ‘তাজ্জা’র উৎপত্তির সময়কাল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। সিরিয়ান শহর রাক্কায় অন্য অনেক জিনিসের সঙ্গে এগুলিও পাওয়া গিয়েছে।

প্রাচীনকালে সিরিয়াতেই এনামেল বানানোর এবং কাচের মধ্যে সোনালি নকশার প্রচলন প্রথম শুরু হয়। এরপর আয়ুব এবং বাহরি মামলুকদের সময়কালে সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’ প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

প্রাচীন সিরিয়ার সংস্কৃতিই ‘তাজ্জা’র প্রাণ

রং দিয়ে সূক্ষ্ণ কারুকাজ, সোনার ব্যবহারের সঙ্গে নকশার মেলবন্ধন এইসময়কার সিরিয়ার সংস্কৃতিকেই সূচিত করে। বিশেষ করে মামলুকদের রাজত্বকালেই ‘তাজ্জা’র উপর ঈগলের অলংকরণ শুরু হয়, কিন্তু কেন শুধু ঈগলই, এর কারণ এখনও অজানা।

তবে দু’পাশে পাখি এবং মাঝখানে ঈগল, এই নিশান ব্যবহারের হদিশ পাওয়া গিয়েছে বারাকা খান (১২৭৭ খ্রিস্টাব্দ- ১২৭৯ খ্রিস্টাব্দ)-এর রাজত্বকালে। বেয়বারদের আমলেও লিখিত এক পুঁথিতে এইধরনের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়, যদিও এর কারণ জানা যায় না। মনে করা হয়, নেহাত ঐতিহ্যের ধারক হিসেবেই একে ব্যবহার করা হল। চতুর্দশ শতকের শুরুর দিকে এক পুঁথিতেও এইরকম চিহ্ন দেখা গিয়েছে।

এছাড়াও, কেন ‘তাজ্জা’য় কাব্য খোদাই করা থাকত, তার কারণও অজানা। এইসমস্ত কবিতায় কোথাও বা প্রেমিকার মুখকে পূর্ণচন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা হত আবার কোথাও প্রেমিকার দেহসৌষ্ঠব বর্ণনা করা হত। কিন্তু কেন এইধরনের পাত্র তৈরি শুরু হয়, তাতে সুলতানরা ওয়াইন পান করতেন কিনা, সেটি ঐতিহাসিকদের কাছেও অজানা।

এপ্রসঙ্গে বলা যায়, উৎকীর্ণ কবিতার শেষাংশে বলা হয়েছে, মাদক পানীয় প্রেমিকার শরীরকে আরও চিকন করে তুলবে। যদিও এই নিয়ে কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি, তবে সিরিয়ান পাত্র ‘তাজ্জা’কে কী কাজে ব্যবহার করা হত, এবং এর মালিকই বা কে ছিলেন, তার উত্তর এখনও ঐতিহাসিকেরা খুঁজে চলেছেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।