Home মহিলাঙ্গন ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে নারীর তুলনামূলক অবস্থান

ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে নারীর তুলনামূলক অবস্থান

।। মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান ।।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের পূর্ব থেকেই আরবদেশে অধর্ম, অবিচার, ব্যভিচার এবং বিভিন্ন কুসংস্কার বহাল ছিল। তৎকালে আরবীয় সমাজে পশুর মতো নারীকেও হাটে-বাজারে বিক্রয় করা হতো। সেই সমাজে নারীর কোন মানবিক মর্যাদা স্বীকৃত ছিলনা। নারীকে পণ্য এবং যৌনসামগ্রীই ভাবা হতো। তার কোন অধিকার ভোগ করার উপায় ছিলনা। ইসলামে নারীর অবস্থান সম্পর্কে আলোচনার শুরুতেই অন্যান্য ধর্মের বিধানে নারীর অবস্থান কোথায় তা নির্ণয় করা সমীচিন মনে করছি।

ইহুদী এবং খ্রীস্টান সমাজে নারীকে ‘শয়তানের সহচরী’ ভাবা হতো। খ্রীস্ট ধর্ম প্রচারকরা নারী সংসর্গ এড়াবার জন্য অকৃতদার থাকতো। বিবাহ ছিল ধর্ম পথে বাধা। অবশ্য পরবর্তী সময়ে ধর্মপ্রচারক মিশনে নারীর অন্তর্ভুক্তি স্বীকৃত হয়। তাও অবশ্য সিস্টার/মাদার নামে অবিবাহিতা অবস্থায়। এটাও এক ধরনের নারী নিগ্রহ নয় কি? খ্রীস্টান ধর্মযাজক পাদ্রীদের সাথে নান-সিষ্টারদের অবাধ যৌনলীলা ও তদ্বারা জারজ সন্তান উৎপাদন ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। ইবাদতের দোহাই দিয়ে খ্রীস্টান পাদ্রীদের বিবাহ না করা এবং বিবাহ্ বাহির্ভূত অবৈধ অবাধ যৌনলীলা সুস্থ স্বাভাবিক সমাজকে করেছিল কলুষিতও আবর্জনাযুক্ত।

হিন্দু ধর্মে নারীকে ‘নরকের দ্বার’ মনে করা হতো। ‘স্ত্রীনাং শুদ্রানাং নশ্র€তি গোচরে বেদঃ’- এ শাস্ত্রবাক্য দ্বারা বেদ (ধর্মগ্রন্থ) শ্রবণও নারীর জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। হিন্দুধর্মে আজও নারীর উত্তরাধিকার স্বীকৃত নয়। পিতা কিংবা স্বামীর সম্পত্তিতে তার কোন অধিকার নেই। এক সময় স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে তার সংগে জীবন্ত অবস্থায় সহমরণে চিতায় ভস্মীভূত করা হতো। বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্তার পুনর্বিবাহ শাস্ত্রসম্মত ছিল না। ব্রিটিশ শাসনামলে রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় সতীদাহ (স্বামীর সংগে চিতারোহন) প্রথা রহিত হয়ে যায়। কিছুকাল পরে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় বিধবা বিবাহ আইন পাশ করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি হিন্দু সমাজে বিধবা বিবাহকে সুনজরে দেখা হয় না। আর, তালাক এবং তালাক পরবর্তী পুনর্বিবাহ আইন সেকালে পাশ করা হয়নি। বর্তমানে পাশ্চাত্যরীতিতে সমাজে তা প্রচলিত থাকলেও হেয় কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হিন্দুদের শাস্ত্রগ্রন্থ ‘মনুসংহিতা’ থেকে নারীর অবস্থান সম্পর্কে কতিপয় শ্লোক আলোচনা করে দেখা যাক। পঞ্চম অধ্যায়ের ১৫৪ নং শ্লোক-

বিশীলঃ কামবৃত্তো বা গুণৈর্বা পরিবর্জ্জিতঃ।
উপচর্য্যঃ স্ত্রিয়া সাধ্ব্যা সততং দেববৎ পতিঃ॥

পতি সদাচারশূন্য, পরদাররত বা গুণহীন হলেও সাধ্বী স্ত্রী স্বামীকে দেবতার মতো পূজা করবেন।
নাস্তি স্ত্রীনাং পৃথগ্যজ্ঞো নব্রতং নাপ্যুপোষিতম্। পতিং শুশ্রূষতে যেনতেন স্বর্গে মহীয়তে॥ -১৫৫

রমণীদের স্বামী বিনে পৃথক যজ্ঞ নেই। পতির অনুমতি ভিন্ন কোন ব্রত বা উপবাস নেই। একমাত্র স্বামীর সেবার সাহায্যেই তিনি স্বর্গলোক গমন করেন।

কামন্তু ক্ষপয়েদ্দেহং পুষ্পমুলফলৈঃ শুভৈঃ। নতু নামাপি গৃহ্নীয়াৎ পত্যৈ প্রেতে পরস্য তু॥ -১৫৭

পতির মৃত্যু হলে স্ত্রী বরং পবিত্র পুষ্পফল ও মূল দ্বারা অল্পাহারে দেহ ক্ষয় করবেন, তবুও পরপুরুষের নামোচ্চারণ করবেন না।

অস্বতন্ত্রাঃ স্ত্রিয়ঃ কার্য্যাঃ পুরুষৈঃ স্বৈর্দিবানিশম্। বিষয়েষুচ সজ্জন্তুঃ সংস্থাপ্যা আত্মনো বশে॥ – ২ (৯ম অধ্যায়)।

স্বামী প্রমুখ স্বজনগণ স্ত্রী লোকদেরকে দিবা-রাত্রির মধ্যে কখনও স্বাধীনভাবে থাকতে দেবেন না। অনিষিদ্ধ বিষয় ভোগে নিযুক্ত রেখে সকল সময় তাদেরকে নিজেদের বশে রাখবেন।

নাস্তি স্ত্রীনাং ক্রিয়া মন্ত্রৈরিতি ধর্মে ব্যবস্থিতিঃ।
নিরিন্দ্রিয়া হ্যমন্দ্রাশ্চ স্ত্রিয়োহ নৃতমিতি স্থিতিঃ॥ -১৮ (৯ম অধ্যায়)।

শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্ত্রীজাতির কোন সংস্কার মন্তের দ্বারা নিষ্পন্ন হয় না। এই জন্যই এদের চিত্ত শুদ্ধ হয় না। এরা স্মৃতি ও শ্রুতি রহিত, তাই এরা ধর্মজ্ঞ হতে পারে না। এরা মন্ত্রহীন তাই পাপের স্পর্শ ঘটলে তারা মন্তের সাহায্যে পাপ স্খলন করতে পারে না। এজন্য তারা মিথ্যার মতোই অশুভ।

দেবরাদ্বা সপিণ্ডাদ্বা স্ত্রিয়া সম্যঙ্ নিযুক্তয়া।
প্রজেপ্সিতাধি গন্তব্যা সন্তানস্য পরিক্ষরে॥ -৫৯ (৯ম অধ্যায়)।

সন্তান না জন্মালে স্ত্রী সম্যক নিযুক্তা হয়ে দেবর বা সপিণ্ড ব্যক্তির দ্বারা নিজের ঈপ্সিত সন্তান লাভ করবে।

বিধবায়াং নিযুক্তস্য ঘৃতাক্তো বাগ্যতো নিশি। এক মৃৎপাদয়েৎ পুত্রং ন দ্বিতীয়ং কথঞ্চন॥ -৬০ (৯ম অধ্যায়)

যদি বিধবার পুত্রোৎপাদন প্রয়োজন হয় তবে নিযুক্ত ব্যক্তি ঘৃতাক্ত দেহে মৌন অবস্থায় রাত্রিতে ঐ বিধবা রমণীতে উপগত হয়ে একটি মাত্র পুত্রোৎপাদন করতে পারবে, কিন্তু একাধিক পুত্রোৎপাদন কখনও করবে না।

ধনং যো বিভৃয়াদ ভ্রাতুর্মৃতস্য স্ত্রিয়মেব চ। সোহপত্যং ভ্রাতুরুৎপাদ্য দদ্যাৎ তস্যৈব তদ্ধধনম। -১৪৬ (৯ম অধ্যায়)।

কনিষ্ঠ ভ্রাতা যদি মৃত ভ্রাতার সম্পত্তি রক্ষা করে এবং তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ করে, তবে সে ভ্রাতৃজায়াতে নিয়োগ ধর্মানুসারে পুত্রোৎপাদন করে ভ্রাতার সমস্ত সম্পত্তি তাকে দিবে।

অধিক উদ্ধৃতি নিষ্প্রয়োজন। যে পর্যন্ত আলোচনায় এসেছে, তাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, হিন্দুদের শাস্ত্রে নারীকে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ এই চারিবর্গের কোথায়ও ব্যক্তি স্বাধীনতা দেয়নি। নারীকে বানানো হয়েছে পুরুষ হস্তের ক্রীড়নক মাত্র। সে স্বামীসেবা ব্যতীত কোন ধর্ম-কর্ম করতে পারবে না। বিধবা হলে পুনর্বিবাহ করা যাবে না। পুত্রের আবশ্যক হলে অন্য পুরুষ নিযুক্ত করে পুত্রোৎপাদন করতে পারবে। এখানে সন্তান উৎপাদনকে বৈধ করা হয়েছে কিন্তু দেহধর্ম (কামপ্রবৃত্তি) চরিতার্থ করার সুযোগ রাখা হয়নি। কেননা, বিধবা মাত্র একটি পুত্রোৎপাদন করতে পারবে শাস্ত্র সম্মত বিধান অনুসারে। তারপরও তার যৌনক্ষুধা থাকতে পারে, সে ব্যাপারে শাস্ত্র কিছু বলেনি। নারীর জন্ম বিষয়েও শাস্ত্র নিরব। বিবাহ সম্পর্কে শাস্ত্রবাক্যঃ ‘পুত্রার্থে ক্রিয়াতে ভার্য্যা’- পুত্রের জন্যই ভার্যা গ্রহণ। কেননা, ‘পুণ্যাম্’ নামক ভয়ংকর নরক থেকে পিতৃপুরুষকে উদ্ধার করার অধিকারী একমাত্র পুত্র সন্তানই। তাই পুত্রের জন্য বিবাহ। কন্যার জন্ম তাই অনভিপ্রেত।

নারীকে নিয়ে হিন্দু সমাজে আরও বহু কুসংস্কার ছিল। গৌরীপূজা এবং দেবদাসী প্রথার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। গৌরীপূজা এবং দেবদাসী প্রথার নামে নারীদেহ সম্ভোগের সুযোগ নেওয়া ব্যতিরেকে অন্য কিছু নয়। এতে নারীর ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা এবং অধিকারকেই ক্ষুণ্ন করা হয়। সমাজে ব্যভিচারের মাত্রা বাড়িয়ে ধর্মানুষ্ঠান হয় না। হিন্দু-বৌদ্ধ সমাজে বিবাহিতা স্ত্রীকে বর্জন করে সন্নাস-বৈরাগ্য-প্রবজ্যা গ্রহণ একরূপ নারী নির্যাতনই। দেখা যায়, সংসার বিরাগীদের আশ্রমে নারীর সংগে সহাবস্থান বৈধ। অথচ বিবাহিতা স্ত্রীর সেখানে বসবাসের অধিকার নেই।

আরও পড়তে পারেন-

পৃথিবীতে কোথাও আদিবাসী-উপজাতিদের মধ্যে নারীতান্ত্রিক সমাজ থাকতে পারে। কিন্তু মুখ্যতঃ প্রায় সর্বত্রই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত। ইসলামও পুরুষতন্তের পক্ষপাতী। পবিত্র কুরআন বলে- “পুরুষদের নারীর উপর কর্তৃত্ব আছে। কেননা, আল্লাহ্ তাদের একজনকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।” রাষ্ট্রে, সমাজে নারীর নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব করার অধিকার না থাকলেও তাকে অন্যান্য দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। নারীর এবং পরিবারের অন্যান্য সকলের ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের উপর অর্পিত। তারপরেও ইসলাম নারীকে পিতা এবং স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দিয়েছে। বিবাহে নারীকে মোহ্রানা (আর্থিক সুবিধা) পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যাবতীয় ধর্মানুষ্ঠানে (ইবাদত) পুরুষের মতোই তার অধিকার রয়েছে। স্বামীর হুকুমেও তাকে ইবাদত থেকে বিরত রাখার সুযোগ নেই। অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব স্বীকৃত হলেও ধর্মীয় আদেশ পালন এবং নিষেধ বর্জনে নারীর স্বাধীনতা রয়েছে। এ ব্যাপারে পুরুষের কর্তৃত্ব তাকে মেনে চলতে হবে না। নারীর ভরণপোষণ ব্যতিরেকেও তাকে পুরোপুরি যৌনতৃপ্তি প্রদানের দায়িত্বও পুরুষের। তাই আর্থিক এবং দৈহিক সংগতি না থাকলে পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়নি। যৌন অক্ষম স্বামীকে তালাক প্রদানের সুযোগ নারীরও রয়েছে।

অধুনা পৃথিবীর বহুদেশে সভ্যতা এবং প্রগতির নামে নারীকে রাষ্ট্রে এবং সমাজে প্রভূত স্বাধীনতা এবং অধিকার দেওয়া হয়েছে যা ইসলাম পরিপন্থী। তার ঢেউ এসে লেগেছে রক্ষণশীল দেশের সমাজেও। আধুনিক ও সভ্য বলে দাবীদার মানুষরা বলে- নারীরাও মানুষ। ইসলামও একথা অস্বীকার করেনি। শুধু নারীর একটা পৃথক সত্তা স্বীকৃত হয়েছে, যা সর্বৈব সত্যি। শরীরে এবং মানসিকতায় নারী এবং পুরুষে কিঞ্চিৎ পার্থক্য আছে। সে কারণে উভয়ের জন্য সর্বক্ষেত্রে সহাবস্থান বিপত্তি ঘটায়। এটা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার পড়ে না। এ কারণে নারীর জন্য ইসলাম কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। প্রথমতঃ নারীকে পর্দা মেনে চলতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। এ কারণে নারী পুরুষের সংগে রাষ্ট্রের ও সমাজের সকল ক্ষেত্রে অংশ নেবার অধিকারীনী নয়। একজন পুরুষ কার্যোপলক্ষে যখন তখন যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে পারে, যেখানে সেখানে রাত্রি যাপন করতে পারে। একমাত্র চোর-ডাকাত ব্যতীত অন্য কেউ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। হয়তো শত্রুতা হেতু খুন হওয়াও বিচিত্র নয়। এতদ্ব্যতীত অন্য কোন হয়রানির আশংকা তার নেই। উন্মুক্ত বিচরণ এবং অবস্থানে নারীর ইজ্জত নিয়েই টানাটানি হয়। সহজ কথায় তার যৌন হয়রানির কবলে পড়ার আশংকা ষোলআনা। এমতাবস্থায় পর্দা এবং নিয়ন্ত্রিত গমনাগমন তার পক্ষে কল্যাণকর। ইসলাম সেই কথাই বলে। এটা নারীর প্রতি অবমাননাকর তো নয়-ই বরং মর্যাদাকর।

পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমাদের দেশে তসলিমা নাসরিনের মত নারীবাদী লেখক-লেখিকারা নারীর সমান অধিকারের পক্ষপাতি। অর্থাৎ পুরুষের যা করণীয়, যেসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে এবং সমাজে পুরুষের অধিকার রয়েছে, নারীর বেলায় তাতে কোন বাধা-নিষেধ থাকবে না। বিশ্বের বহু অমুসলমান শাসিত দেশে তো বটেই, এমনকি আমাদের দেশসহ মুসলমানদের দেশেও নারীকে ইসলাম অসমর্থিত অধিকার দেওয়া হচ্ছে। নারীরা ক্ষেতে-খামারে, কল-কারখানায় পুরুষের মতো শ্রম দিচ্ছে। যুদ্ধে যাচ্ছে, বিমান চালাচ্ছে, দোকান-পাটে বেচাকেনা করছে। এতদ্ব্যতীত অফিস-আদালতেও তারা কর্মকর্তা-কর্মচারী হচ্ছে। এসব কাজ করার পরও নারীর গৃহস্থালির কাজ থেকে রেহাই নেই। পুরুষের দৈহিক-মানসিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধান, গর্ভে সন্তান ধারণ এবং লালন-পালন কম-বেশ তাকে করতেই হচ্ছে। একদিকে ঘর সামলানো, অন্যদিকে বাইরের এত্তেলা, যাকে বলে Over duty- এটা কি নারীর প্রতি অত্যাচার নয়? কেন নারী এই ঝামেলা করবে? তার গ্রাসাচ্ছাদনের দায়িত্ব তো পুরুষের উপরেই ন্যস্ত। অনেকে বলেন- নারীরা স্বনির্ভর না হলে তারা পুরুষের অত্যাচার থেকে রেহাই পাবে না। আমরা দেখেছি, বিদেশেই শুধু নয়, আমাদের দেশেও স্বনির্ভর নারীরাও পুরুষ কর্তৃক নির্যাতিতা হয়। এমনকি সুশিক্ষিতা উচ্চপদস্থ চাকুরীজীবি, সমাজ সেবিকা মহিলাদেরও নিগৃহীতা হবার সংবাদ শোনা যায়।

তবে একটা বিষয়, যদি বলি বাড়তি সুযোগ মেয়েদের রয়েছে, তা হলো- স্বনির্ভর হলে অনায়াসে স্বামীর উপর টেক্কা মারা যায়। স্বামী সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, লিভ টুগেদারের অবাধ স্বাধীনতা সহজতর হয়। বস্তুতঃ এগুলো নারীর ক্ষেত্রে সম্মানজনক ও সুখকর হয়না।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের নারীবাদী সংগঠনগুলো পাশ্চাত্যের পুঁতি-দুর্গন্ধময় উচ্চিষ্ট আবর্জনা সমূহকে অমৃতসম মনে করে নারীর অধিকার ও নারী স্বাধীনতার মুখরোচক শ্লোগান তুলে রক্ষণশীল সমাজের সহজ সরল জায়া-কন্যা-জননীদের বিভ্রান্ত করছে। নারীকে পুরুষ বিদ্বেষী করে তোলার পাশাপাশি তাদের মধ্যে নগ্নতার বিষবাষ্পছড়াচ্ছে। তথাকাথিত মানবাধিকারের নামে তাদেরকে পরিণত করছে অবাধ ভোগের সামগ্রীতে।

ইসলামের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশ্ত।” তিনি বলেছেন- “সেই পুরুষ উত্তম, যিনি তার স্ত্রীর বিবেচনায় উত্তম।” তিনি আরও বলেছেন-

“সাবধান ভাই সাবধান সব
তোমাদের পুরনারী,
পুণ্য শপথে বরিয়া লয়েছে
মহাদান বিধাতারি।
তাহাদের পরে তোমা-সবাকার
দিয়াছে বিধাতা যেই অধিকার
তোমাদের পরে সেই অধিকারে
তাহারাও অধিকারী।”

হিন্দুধর্ম বলে- “নারী নাং ভুষণং পতি” (নারী পতির ভূষণ)। কিন্তু ইসলামের বিধান মতে- “নারী-পুরষ পরস্পর পরস্পরের ভূষণ।” স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী পুনর্বিবাহ করতে পারবে কিন্তু স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী পুনর্বিবাহ করতে পারবে না- এরূপ বৈষম্যমূলক পার্শিয়াল বিধান ইসলামে নেই। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারীর প্রতি কোন অবিচার করা হয়নি। তার যে সম্মান এবং মর্যাদা যথার্থ প্রাপ্য তা তাকে দেওয়া হয়েছে। তাতেই তার নিরবচ্ছিন্ন কল্যাণ নিহিত। এর ব্যতিক্রমে সত্যিকারের কল্যাণ নেই। পাশ্চাত্য সভ্যতার মোহে অন্ধ হয়ে আমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অনুসরণ করছি না বলেই আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। কুরআনে আল্লাহ্ তাআলা বলেন- “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” সেই আদর্শ পুরোপুরি অনুসরণ করে চলতে পারলেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমরা সকলেই দোজাহানের পরম শান্তি লাভে সক্ষম হবো।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, গবেষক, কবি ও গ্রন্থকার।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।