Home ইসলাম সালাতুল খুসূফঃ অবহেলিত এক সুন্নাত

সালাতুল খুসূফঃ অবহেলিত এক সুন্নাত

।। মাওলানা ইসহাক ওমর ।।

সালাতুল খুসূফ বা সূর্যগ্রহণের নামায; যা সমস্ত ইমামগণের মত অনুযায়ী সুন্নাত। সূর্যগ্রহণের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এই নামায আদায় করতেন। জামাতের সাথে অথবা একাকি, যে কোনো অবস্থায় আদায় করা যায়। জামাতের সাথে আদায় করলে দুই রাকাত। একাকি আদায় করলে দুইয়ের অধিকও আদায় করার সুযোগ আছে।

চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের (আহনাফ) মতে জামাতের সাথে নামাজ নেই। এ ক্ষেত্রে সবাই একাকি নামাজ আদায় করে নিবে। কারণ, রাত্রে মুসল্লীগণকে নামাযের জন্য ডাকা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যপার। (আল-ইখতিয়ার- ১ খন্ড)।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, নবীজির এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহটি আজ আমাদের মাঝে নেই বললেই চলে। আমার জীবনে অনেক বার সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু কোনোদিন এ সময় কোথাও এবং কাউকে সালাতুল খুসূফ আদায় করতে কিংবা এ বিষয়ে জন সাধারণের মাঝে আলোচনা করতে দেখিনি এবং শুনিনি। ইল্লা মাশা’আল্লাহ। অবহেলিত এই সুন্নাহকে যিন্দা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

আমাদের দেশে অনেকেই সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণকে একটা উপভোগের বিষয় মনে করে থাকেন। এ সময় তারা আনন্দ প্রকাশ করে বিভিন্ন মাধ্যমে সূর্যগ্রহণ দেখার চেষ্টা করেন। এটা ভুল নিয়ম। নবীজির সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি নয় এটা। সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণ হচ্ছে মহান রাব্বুল আলামীনের কুদরতের অন্যতম একটি নিদর্শন। যা পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়। এ সময় বান্দা আনন্দ-ফূর্তি না করে আল্লাহ তা’আলার দরবারে ভয়, বিনয় এবং একাগ্রতার সাথে নামাজ, দু’আ, যিকির ইত্যাদিতে মগ্ন থাকবে। এটাই তার জন্য দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ নিয়ে আসবে।

আরও পড়তে পারেন-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- আল্লাহ তা’আলার কুদরতের এই নিদর্শনগুলো কারো জীবন-মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হয় না; বরং বান্দার হৃদয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয় সৃষ্টি হওয়ার জন্য এগুলো দৃশ্যমান হয়। যখন তোমরা এগুলোর মধ্য থেকে কোনো কিছু দেখবে, তখন আল্লাহ তা’আলার ভয় এবং স্মরণের সাথে আল্লাহ তা’আলার দিকে নত হও। আল্লাহকে স্মরণ করো এবং তার কাছে দু’আ ও ইসতিগফার করো। (সহীহ বুখারী এবং মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় আরো আছে, তোমরা সাদকা করো। (প্রাগুক্ত)।

সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণ নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা এবং কুসংস্কার প্রচলিত আছে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে। জাহেলি যুগেও এ ধরনের অনেক কুসংস্কারের প্রচলন ছিল। এগুলোর শরয়ী এবং সামাজিক কোনো ভিত্তি নেই। দশম হিজরীতে নবীজির প্রিয়তম পুত্র ইবরাহীম (রাযি.) ইন্তেকালের দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবদের সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণ বিষয়ক কুধারণা এবং কুসংস্কারগুলো দূর করার জন্য সালাতুল খুসূফের পর গুরুত্বপূর্ণ একটি খুতবা দান করেন। নবীজি (সা.) বলেন, ” নিশ্চয় কারো জীবন-মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চন্দ্রের গ্রহণ হয় না (বরং এগুলো মহান আল্লাহ তা’আলার কুদরতের অন্যতম নিদর্শন)। অতঃপর যদি তোমরা সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণ দেখো, তাহলে নামায আদায় করো এবং (আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি) দু’আ করো। (মা’আরিফুল হাদীস- ৩য় খণ্ড, সহীহ বুখারী এবং মুসলিম)।

সালাতুল খুসূফের আদায়গত পদ্ধতি নিয়ে ইমামগণের বিভিন্ন মতামত আছে। প্রত্যেকটিই সহীহ হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরামের আমলদ্বারা প্রমাণিত। মতভেদ হওয়ার কারণ হচ্ছে, নবীজির যুগে সূর্যগ্রহণ অনেকবার হয়েছিল। পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য আপন আপন ইমামের (দারুল ইফতার) ফতোয়া অনুযায়ী আমল করাই উত্তম। বিস্তারিত দেখুন, বিদায়াতুল মুজতাহিদঃ ইবনে রুশদ, সালাতুল খুসূফ অধ্যায়।

ফায়দাঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) যুগে ১৯ বার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। সর্বশেষ হযরত ইবরাহীম (রাযি.)এর ইন্তেকালের দিন নবুওয়াতের দশম বছর। (রহমাতুল লিল আলামিনঃ ৭৭-৭৮/২ মাওলানা কাযী সাইয়েদ সালমান সুলাইমান মনসুরপুরী রাহ.)।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: শিক্ষক, আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।