Home লাইফ স্টাইল ইফতারে মুড়ি খাওয়ার আশ্চর্য উপকারিতা

ইফতারে মুড়ি খাওয়ার আশ্চর্য উপকারিতা

ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে ইফতারে মুড়ি খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। প্রতিবছরই রমযানের মাসটিতে বাংলাদেশের ঘরে-ঘরে হাতে তৈরি রাসায়নিক মুক্ত মুড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। মুড়ি দামে সস্তা, সহজলভ্যও বটে। মুড়ি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভর্তি থাকে। চপ দিয়েই বলুন, কি মশলা মুড়ি মাখাই বলুন, স্ন্যাক্স হিসেবে মুড়ি খেতে ভাল লাগে। তাই প্রচুর মানুষ ইফতারে এটি খেতে পছন্দ করেন। এহেন মুড়ির কিন্তু অজস্র উপকারিতা রয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে আমরা অনেকেই ওয়াকিবহাল নয়। আজকের আলোচনায় আমরা ইফতারে মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

মুড়ির আশ্চর্য পুষ্টিগুণ

চালের দানাকে উচ্চ চাপে স্টিমের উপস্থিতিতে উত্তপ্ত করার ফলে মুড়ি তৈরি হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম মুড়িতে প্রায় ৪০২ কিলোক্যালোরি থাকে। মুড়িতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট (৯০ গ্রাম)-এর পাশাপাশি ডায়েটারি ফাইবার (১.৭ গ্রাম), প্রোটিন (৬ গ্রাম)-ও থাকে। এছাড়া মুড়িতে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬-ও যথেষ্ট পরিমাণে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

রমযানে দীর্ঘ একমাস রোযা রাখার ফলে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম দেখা যায়। এইসময় ইফতারে ভাজাভুজি, তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে এবং দৈনন্দিনের স্বাভাবিক রুটিনে বদল ঘটায় অনেকের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যায়। এই সমস্যা দূর করতে ইফতারে মুড়ি খেতে পারেন। মুড়ি হালকা, তাছাড়া মুড়িতে ফাইবার থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রেও সহায়ক। মুড়ি মলে মিউকাস ও বাড়তি ফ্যাটের পরিমাণ কমায় এবং এই ফ্যাট ও মিউকাস যাতে পরিপাকনালীর গাত্রে আটকে থাকাকে প্রতিহত করে। এর ফলে পেরিস্টলসিস চলনের মাধ্যমে সহজেই মল নিঃসরণ হয়।

আরও পড়তে পারেন-

হজমের সমস্যায় মুড়ি খান

হজমের যে-কোনও সমস্যায় জল-মুড়ির মতো অব্যর্থ টোটকার সঙ্গে আপনারা সকলেই কম-বেশি পরিচিত। ইফতারে গুরুপাক খাবার খেয়ে হজমের গোলমাল দেখা দিলে নিশ্চিন্তে মুড়িকে ভরসা করতে পারেন। মুড়ি পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্যকণা ভাঙতে সাহায্য করে এবং পরিপাকরস ক্ষরণে সহায়তা করে। মুড়ি পরিপাকনালীর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পরিপোষকগুলিকেও শরীরে শোষণে সাহায্য করে। ফলে বদহজম, গ্যাস দূর হয়। এছাড়া অনিয়মের ফলে যদি বুক জ্বালা, ডায়েরিয়া, আলসার, গ্যাসের ব্যথা ইত্যাদির সমস্যা হয়, তাহলে মুড়ি খেতে পারেন। এইজন্য রোযা রাখাকালীন সময় এপ্রিল-মে মাসের প্রবল গরমে সুস্থ থাকতে ইফতারের খাবারে মুড়ি খুবই জনপ্রিয়।

রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে ইফতারে মুড়ি

করোনার সময় দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই ভাবেন যে মাল্টি-ভিটামিন ট্যাবলেট খাবেন না। ফলমূল, সবজি বেশি করে খাওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতিও অনেকের থাকে না। এক্ষেত্রে মুড়ি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। মুড়িতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খনিজ উপাদান এবং পরিপোষক থাকে, যা ক্ষতিকর জীবাণুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। পেটের ইনফেকশন, জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথা এবং অন্যান্য যে-কোনও শ্বাসের সমস্যায় মুড়ি খান পেট ভরে। আর এই করোনায় রোগ থেকে দূরে থাকতেও ইফতারে মুড়ি খান।

রক্তচাপের সমস্যায় মুড়ি

মুড়িতে সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ ও নিম্ন, যে-কোনও ধরনের রক্তচাপের সমস্যাতেই মুড়ি উপকারী। এছাড়া মুড়ি হৃৎপিণ্ডকেও ভাল রাখে এবং হার্ট অ্যাটাক, হার্টে ব্লকেজ, স্ট্রোক ইত্যাদির সম্ভাবনা কমায়। যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের খাওয়াদাওয়ায় নানারকম নিষেধাজ্ঞা থাকে। ইফতারে ভাজাভুজি, বাইরের খাবার তাঁরা খেতে পারেন না। তাঁরা কিন্তু অনায়াসে ইফতারে মুড়ি খেতে পারেন।

রমযানে ওজন কমাতে ইফতারে মুড়ি

আজ্ঞে হ্যাঁ। রমযান মাসকে অনেকেই ওজন কমানোর পক্ষে আদর্শ মাস বলে মনে করেন। ওজন কমাতে চাইলে ইফতারে মুড়ি খান। এতে থাকা ফাইবার ও প্রয়োজনীয় পরিপোষক খিদে কমায় এবং পেট বেশিক্ষণ ভর্তি রাখে। ফলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার প্রবণতা কমে। ইফতারে তো বটেই, পেট ভর্তি রাখার জন্য সেহরির সময়তেও কিন্তু মুড়ি খেতে পারেন।

এছাড়া মুড়ি কিন্তু হাড়, দাঁত ইত্যাদি শক্ত রাখতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মুড়িতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে ত্বককে উজ্জ্বল রাখতেও এটি সাহায্য করে। এছাড়া বয়সজনিত দাগ, ফাইন লাইন, ডার্ক সার্কল, ব্রণর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার খাদ্যতালিকায় মুড়ি রাখতে পারেন।

সতর্ক থাকুন

তবে একগাদা উপকারিতা থাকলেও মুড়ির গ্লাইসিমিক ইনডেক্স খুব বেশি। ফলে যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা ইফতারে মুড়ি এড়িয়ে চলুন। আর ধবধবে সাদা মচমচে মুড়ি দেখে লোভ হলেও সেগুলি কিনতে যাবেন না। মুড়িকে ধবধবে ও মচমচে বানানোর জন্য অনেকসময় ইউরিয়া দিয়ে ভাজা হয়। এই মুড়ি শরীরের জন্য বিষতুল্য। দীর্ঘদিন ইউরিয়া যুক্ত মুড়ি খেলে তা কিডনি, হার্ট, ফুসফুস ও লিভারের ক্ষতি করে। তাই কেনার আগে মুড়িতে ইউরিয়া রয়েছে কিনা, দেখে কিনবেন। সবচেয়ে ভাল ঘরে ভাজা মুড়ি। ফলে সেইরকম মুড়িরই খোঁজ করুন। ইফতার ছাড়াও যে-কোনও সময়তেই আপনার খাদ্যতালিকায় মুড়ি রাখতে পারেন। উলটো-পালটা খাবারের বদলে এবার স্ন্যাক্সে মুড়ি মাখা খান, পেটও ভর্তি থাকবে, আপনিও সুস্থ থাকবেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।