Home ইসলাম তৌবার মহান মসজিদ হল মুরিদিয়া ভ্রাতৃসঙ্ঘের আধ্যাত্মিক আশ্রয়

তৌবার মহান মসজিদ হল মুরিদিয়া ভ্রাতৃসঙ্ঘের আধ্যাত্মিক আশ্রয়

তৌবার মহান মসজিদ।

উনবিংশ শতাব্দীতে শেখ আহমাদৌ বামবা তৌবার মহান মসজিদ স্থাপন করেন। তিনি মধ্য সেনেগালের তৌবা শহরে প্রার্থনার জন্য এক অনুপম স্থান তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তিনি রক্ষণশীল সুফি বর্গের সদস্য ছিলেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। তিনি নিজের উদ্যোগে মুরিদিয়া ভাতৃসঙ্ঘ স্থাপন করেন।

তৌবার মহান মসজিদ হল গোটা আফ্রিকা মহাদেশের সব থেকে বড় মসজিদ। আফ্রিকায় ইসলামের গভীর এবং সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। উদাহরণ হিসেবে সবার আগে উঠে আসে সেনেগাল দেশের কথা, যেখানে ইসলামের প্রভাব সন্দেহাতীত। এই মসজিদ তার চমকপ্রদ আয়তন এবং স্থাপত্যশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। এই স্থান মূলত প্রভাবশালী সুফি গোষ্ঠীর কেন্দ্র, সেনেগালের বাইরেও তাদের যথেষ্ট খ্যাতি আছে।

তৌবার ইতিহাস

উনবিংশ শতাব্দীতে শেখ আহমাদৌ বামবা এই মসজিদ স্থাপন করেন। তিনি মধ্য সেনেগালের তৌবা শহরে প্রার্থনার জন্য এক অনুপম স্থান তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সেনেগালের ইতিহাসে বামবা ছিলেন এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব। তিনি রক্ষণশীল সুফি বর্গের সদস্য ছিলেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

এর ফলে, ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তৌবা শহর প্রতিষ্ঠার কিছু সময় পরেই তিনি নিজের উদ্যোগে মুরিদিয়া ভাতৃসঙ্ঘ স্থাপন করেন। তৌবা শহর এমন ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যেখানে আধ্যাত্মিক এবং পার্থিব জগতের মেলবন্ধন ঘটবে। সেখানকার মানুষ কুরআনের শিক্ষা মেনে নিজেদের জীবন কাটাতে পারবেন। বামবা ছিলেন প্রভাবশালী ধর্মতত্ত্ববিদ। তিনি নিজের অনুগামীদের কঠোর পরিশ্রম আর আত্মসংযম পালন করার উপরে জোর করতেন। তাঁর বাণী অনেককেই প্রভাবিত করেছিল। ভ্রাতৃসঙ্ঘের সদস্যদের কাছে তিনি “মুজাদ্দিদস” বা নতুন রূপান্তরকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সুফি বর্গের প্রথম খলিফাও ছিলেন। বামবা প্রকৃতপক্ষে একজন শান্তিবাদী ছিলেন। তিনি সেই সময়ে সেনেগাল দখলকারী ফরাসি উপনিবেশবাদীদের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক নীতির বিরোধিতা করেছিলেন সম্পূর্ণ অহিংস্র পদ্ধতিতে।

তৌবার মহান মসজিদ ও মুরিদিয়া ভ্রাতৃসঙ্ঘ

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে বামবা’র মৃত্যু পর্যন্ত মুরিদিয়া ভ্রাতৃসঙ্ঘের ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই মসজিদ সেই সময় শুধু সেনেগাল নয়, বরং নিকটবর্তী আইভরি কোস্ট, মৌরেতানিয়া ও গামবিয়ার হাজার হাজার ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রাথমিক ধর্মীয় স্থান ছিল। সাধারণ ভাবে মনে করা হত যে, এই মসজিদই ছিল তৌবা শহরের সাফল্য আর উন্নয়নের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

তৌবার মহান মসজিদ-এর স্থাপত্য

মুরিদিয়া ভ্রাতৃসঙ্ঘের পবিত্র শহর তৌবার কেন্দ্রে এই মসজিদ অবস্থিত ছিল। এই প্রার্থনাস্থল তৈরি করতে প্রায় ৮০ বছর সময় লেগেছিল। তারপর থেকে এই মসজিদের সম্প্রসারণ এবং সৌন্দর্যায়নের কাজ ক্রমাগত চলছে।

এই মহান মসজিদে মোট পাঁচটি মিনার আছে। এদের মধ্যে সব থেকে বিখ্যাত মিনারটির উচ্চতা হল ৮৭ মিটার। এই মিনারটি বামবা’র প্রভাবশালী অনুগামী শেখ ইব্রাহিম ফল-এর নাম অনুসারে ল্যাম্প ফল নামে পরিচিত। তৌবার মহান মসজিদে মোট তিনটি বড় গম্বুজ আছে। এই তিনটি গম্বুজের মধ্যে শেখ আহমাদৌ বামবা’র সমাধি শায়িত রয়েছে প্রধান গম্বুজের নীচে। এই গম্বুজটি সোনার বেড়া জাল দিয়ে ঘেরা আছে। এই মসজিদ প্রতিষ্ঠাতার পুত্রদের এবং মুরিদিয়া ভ্রাতৃসঙ্ঘের অন্য খলিফাদের সমাধিও এই স্থানেই শায়িত রয়েছে।

এই মসজিদের নামাজ আদায় করার কক্ষের নিকটেই রয়েছে শোনার জন্য একটি কক্ষ এবং একটি পবিত্র কুয়া। এছাড়াও গ্রন্থাগার, দপ্তর এবং অন্যান্য ভবন এই চত্বরেই উপস্থিত রয়েছে। এই মসজিদটি প্রথাগত ইসলামীয় রীতি অনুযায়ী আকর্ষণীয় নীল ও সবুজ রঙের মিশেলে নির্মীত। মুরিদিয়া গোষ্ঠী বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে তা এখন বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের রূপ গ্রহণ করেছে। এই গোষ্ঠীর অনুগামীরা এই মসজিদকে তাঁদের আধ্যাত্মিক আশ্রয় মনে করেন। বর্তমান খলিফা এই মসজিদের কাছাকাছিই বসবাস করেন।

তৌবা মসজিদে সশরীর যাত্রা

প্রতি বছরই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুরিদিয়া ভ্রাতৃসঙ্ঘের প্রতিনিধিরা তৌবার মহান মসজিদে যাত্রা করেন শেখ বামবা’র শিক্ষা এবং জীবনশৈলী উদযাপন করার জন্য। শেখ বামবা’র সমাধি দর্শন করতে বহু মানুষ ভিড় করেন। মনে করা হয়, এই সমাধির আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে।

এই ধর্মীয় যাত্রাকে আফ্রিকার বৃহত্তম যাত্রা বলে মনে করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ অনুগামী এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এই যাত্রা উপলক্ষ্যে দিবারাত্রি বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতে থাকে। পবিত্র পাঠ এবং ধর্মীয় মিছিল এই অনুষ্ঠানগুলির মধ্য অন্যতম। এই পদযাত্রা এতটাই জনপ্রিয় যে, সেনেগাল টিভিতে এই পদযাত্রার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

তৌবার মহান মসজিদ ঘিরে পর্যটন

তৌবা উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই শহরে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের বসবাস এবং এই শহরের অধিকাংশ সুফি শাসনে চলে। দাকার শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০০ কিমি। এই শহর পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং তৌবার মহান মসজিদের কাছেই থাকার বন্দোবস্ত আছে। এই অপূর্ব মসজিদটি যে কোনও ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। তবে অ-মুসলিম পর্যটকদের জন্য বছরের কিছু সময়ে কিছু বাধানিষেধ আরোপ করা হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।