Home ইতিহাস ও জীবনী কেনেসারি খান ছিলেন, কাজাখ স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক

কেনেসারি খান ছিলেন, কাজাখ স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক

কেনেসারি খান-এর বাহিনীর যোদ্ধাদের সমাধি সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ববিদরা আবিষ্কার করেছেন কাজাখস্তানের আস্তানা শহরের কাছে। এই শহরের বাইরে মোলোদেজনি মাইক্রো ডিস্ট্রিক্টে একটি মুসলিম কবরস্থানে আবিষ্কৃত এই পুরোনো সমাধির উপরে আরবী ভাষায় অনেক কিছু লেখা রয়েছে। এই লেখনির কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, বাকিটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে আর পাওয়া যায়নি।

কে ছিলেন কেনেসারি খান

কেনেসারি খান ছিলেন একজন যোদ্ধা, সামরিক নেতা, এবং রুশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কাজাখ জনগণের গড়ে তোলা জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন, ১৮৩৭ থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত, এবং তিনিই ছিলেন কাজাখ খানেট রাজ্যের সর্বশেষ খান (শাসক)।

কেনেসারি-কে কাজাখ ইতিহাসের একজন সরকারি খান (শাসক) বলে গণ্য করা হয়, যদিও তাঁকে রুশ কর্তৃপক্ষ কখনো কোনও স্বীকৃতি প্রদান করেনি, যেমন – রুশ আইন অনুসারে ১৮২২ সালের পর থেকে কাজাখদের উপরে নেতা নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। রুশ সেনা বহু বছর ধরে স্তেপ অঞ্চলে কেনেসারির খোঁজ করেছে, কিন্তু কাজাখদের মধ্যে তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি গ্রেপ্তারি এড়াতে পেরেছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

সমাধিপ্রস্তরের লেখনি

এই প্রাচীন সমাধিগুলি আবিষ্কারের কাহিনী বেশ অন্যরকম। এই এলাকায় কাজ করার সময় গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে, প্রায় দুই শতক প্রাচীন একটি সমাধির উপরের পাথরটি আংশিক ভাবে ভেঙে মাটির ভিতরে ঢুকে গিয়েছে। সমাধি প্রস্তরের উপরে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়া যায়নি, কারণ সেই সমাধিপ্রস্তরটি সম্পূর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে যেটুকু অংশ উদ্ধার করা গিয়েছে তা হল নিম্নরূপ-

“এই সমাধিপ্রস্তর নির্মীত হয়েছে জনৈক সামিরজা দ্বারা যার খরচ বহন করেছেন কায়রোলি সারজান উলি ১৮৩৮ সালে, রজব মাসে, যা হল মুসলিম বছরের সপ্তম মাস, এই সময় ৩০ দিনের পবিত্র উপবাস চলে। ৫০ জন জালুসান (যে যোদ্ধারা কমান্ডারদের আজ্ঞাবহন করছিলেন) এবং ২০০ জন বীর কমান্ডার, এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, তাঁরা এই সমাধিতে শায়িত রয়েছেন।”

কেনেসারির যোদ্ধাদের সমাধির মধ্যে এটিই প্রথম যেটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কেনেসারিকে মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবেই শ্রদ্ধা করা হয় এবং তিনিই ছিলেন সেই আমলে রুশ সাম্রাজ্যের ক্রম-বর্ধমান আগ্রাসী এবং

দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ব্যক্তিত্ব, এই কারণেই তিনি গোটা দেশে জনপ্রিয়। বহু কাজাখ সাহিত্য এবং আধুনিক গণমাধ্যমেও তাঁকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করার জন্য সম্মানিত করা হয়।

আস্তানা শহরের গুমিলেভ ইউরেশিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মডার্ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর মুখিত-আর্দাগের সিদিকনাজারোভ জানিয়েছেন, আবিষ্কৃত সমাধিপ্রস্তরের যে অংশটি মাটির ভিতরে ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেটি ছাড়া বাকি লেখা পাঠোদ্ধার করা গিয়েছে। সেই লেখা দেখেই অনুমান করা হয়েছে যে, এই সমাধিতে শায়িত রয়েছেন কেনেসারি খানের যোদ্ধারা। কারণ এই সমাধিপ্রস্তরে যে সাল ও ঘটনার বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা কেনেসারি সেনার সাথেই মিলে যায়। তবে এই সমাধি ব্যতীত এই যোদ্ধাদের অপর কোনও সমাধি এখনও পর্যন্ত কাজাখস্তান থেকে উদ্ধার হয়নি।”

কেনেসারি খান ও স্বাধীনতা সংগ্রাম

এই সমাধিপ্রস্তরের উপরের লেখা যতটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সেই অনুযায়ী এই সমাধি কেনেসারির বাহিনীর যোদ্ধাদেরই- এই বিষয়ে অনেকটাই নিঃসন্দেহ গবেষকরা। ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৩৮ সালের মাঝামাঝি সময় কেনেসারির যোদ্ধারা আকমোলা এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন। ফলে সম্ভাবনা রয়েছে, এই সময়ে যে সেনারা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের দেহাবেশেষ এখানে শায়িত রয়েছে। কেনেসারি কাসিমোভকে কাজাখরা যখন নিজেদের খান (শাসক) হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন, সেই সময় সমগ্র কাজাখস্তান ছিল রুশ সাম্রাজ্যের অধীনস্থ।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন কেনেসারি। কাজাখস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী এই নির্ভীক নেতাকে রুশ কর্তৃপক্ষ মনে করতেন, অত্যন্ত নিষ্ঠুর। এবং তিনি যুদ্ধের এমন কৌশল স্থির করতেন যা আগাম আঁচ করা কার্যত অসম্ভব ছিল। ধুরন্ধর এই নেতা তাঁর কৌশল এবং বুদ্ধির জেরেই বহু বছর রুশ বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে গ্রেপ্তারি এড়িয়েছিলেন এবং দেশের স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু কেনেসারির সংগ্রাম সফল হয়নি। ১৮৪৬ সালে তাঁর বাহিনীর কিছু সদস্য বিশ্বাসঘাতকতা করে রুশ বাহিনীর সাথে হাত মেলান। এই ঘটনার পরে এই দাপুটে নেতা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানাধিকারীদের অবিশ্বাস করতে শুরু করেন। সেই অবিশ্বাসের মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, অনেককে তিনি বাহিনী থেকে বিতাড়িত করেন বলে জানা যায়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম তার তীব্রতা এবং গুরুত্ব অনেকটাই হারায়। ১৮৪৭ সালে শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা পড়েন উত্তর কিরগিজদের হাতে। সেই গোষ্ঠীর খান (শাসক), ওরমন খান নিজে তাঁর শিরচ্ছেদ করে রুশ কর্তাদের ভেট হিসেবে পাঠান। তার জন্য রুশ কর্তৃপক্ষ ওরমন খানকে পুরস্কৃত করেছিল।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।