ফরাসি উপনিবেশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের খুলি আলজেরিয়া ফিরিয়ে এনেছে। তবে অনেকের দেহাবশেষেল কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তেমনি একজন আলেম ছিলেন শায়খ আল আরাবি আত তবাসি। তিনি ছিলেন একজন ফকিহ ও দায়ি। ১৯৫৪-১৯৬২ সালে ফরাসি উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রপ্রতীক ছিলেন তিনি। ফরাসি সেনাদের হাতে তাঁর করুণ মৃত্যু ঘটে। গরম উত্তপ্ত তেলে তাঁকে জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়।
শায়খ আল্লামা আল আরাবি বিন বিলকাসেম বিন মুবারক আত তাবাসি ছিলেন আলজেরিয়ান মুসলিম স্কলারর্স এসোসিয়েশনের সভাপতি। ১৮৯১ সালে তিনি তবাস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার কাছে শৈশবে কোরআন হেফজ করেন। কৃষক পরিবারের সন্তান হলেও তাঁর বাবা ও দাদা হাফেজ ও আলেম ছিলেন। শায়খ আল আরাবি ১৯১৪ সালে তিউনিসিয়ার বিখ্যাত জায়তুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। এরপর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯২৭ সালে তিনি নিজ দেশ আলজেরিয়ায় ফিরে আসেন।
নিজ দেশে ফিরে স্থানীয় মসজিদে শিক্ষা ও দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। ফরাসি উপনিবেশ বিরোধী মনোভাবের জন্য তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। তিনি বলতেন, ‘মানুষ বাঁচতে চাইলে সে যেন ফ্রান্সের প্রতি ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকে। আর মারা গেলে যেন কবরেও এ ঘৃণা নিয়ে যায়।’
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জার্মানির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে শায়খ আল আরাবিকে ছয় মাসে জেল দেওয়া হয়। ১৯৪৫ সালে পুনরায় তাঁকে এক বছরের জেল দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনকালে তিনি আরো বেশি ফরাসি বিরোধী হয়ে ওঠেন।
ফরাসি সেনারা শায়খ আল আরাবিকে টার্গেট করে। ফলে শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে দেশ ছাড়তে বলে। কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আলজেরিয়া ছাড়লে দেশবাসীর সঙ্গে কারা থাকবে?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি যুবক ও সুস্থ অবস্থায় থাকলে শহরে একদিনও থাকতাম না। বরং পাহাড়ে দৌঁড়ে যেতাম। অস্ত্রো ধারণ করে মুজাহিদদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম।’
শায়খ আল আরাবির ফরাসি উপনিবেশ বিরোধী বক্তব্য বন্ধ না হওয়ায় ফরাসি সৈন্যরা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯৫৭ সালে ৪ এপ্রিল ফরাসি সেনাদের বিশেষ স্কয়াড তাঁকে রাতের বেলা ঘর থেকে তুলে নেয়। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজ পর্যন্ত তাঁর কবরের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আলজেরিয়ার আল বাসায়ের পত্রিকার তথ্য মতে, ‘প্রবীণ এ আলেমকে ফরাসি সৈন্যরা খোলা পায়ে আটক করে নিয়ে যায়। বিস্ময়ের বিষয় হলো, পরদিন প্রশাসনের সবাই তাঁকে অপহরণ বা আটকের কথা অস্বীকার করেছিল।’
শায়খ আল আরাবির গুপ্তহত্যা নিয়ে একথা প্রশিদ্ধ যে, উপনিবেশ সরকার তাঁকে তেল ভরা একটি পাত্রে রাখে। আগুনে রেখে তা উপত্তপ্ত করা হয়। অতঃপর শায়খ আল আরাবিকে তপ্ত কড়াই অথবা স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়। শায়খ শাহাদাতকে বেছে নেন।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ