Home ইসলাম ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ‘হজ্ব’

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ‘হজ্ব’

- আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন।

।। মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

হজ্ব ইসলামের পঞ্চভিত্তির অন্যতম। এ হজ্বকে কেন্দ্র করে কা’বা শরীফে এবং আরাফার ময়দানে বিশ্বের মুসলমান একত্রিত হয়। এতে গড়ে উঠে বিশ্ব মুসলিমের মাঝে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি, সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন। সৃষ্টি হয় এক বেহেশতী পরিবেশ। পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্যে সর্বপ্রথম যে ঘরটি নির্মিত হয় তা হলো- পবিত্র কা’বা শরীফ। কালের বিবর্তনে এ ঘর একসময় হারিয়ে ফেলে তার স্বকীয়তা। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হযরত ইবরাহীম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.) সে ঘর পুনরায় নির্মাণ করেন। এব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইবরাহীম (আ.)কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন-

“যখন আমি ইবরাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দণ্ডায়মানদের জন্যে এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্যে। এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার করো। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পীঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে”। (সূরা হজ্ব- ২৬-২৭)।

অন্যত্র হজ্বের মাস, গুরুত্ব ও আদাব সম্পর্কে  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন  ইরশাদ করেন, “হজ্বের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধে) নিজের উপর হজ্ব অবধারিত করে নেয়, সে হজ্বের সময়ে কোন অশ্লীল কথা বলবে না, কোন গুনাহ করবে না এবং না কারো সাথে কোন ঝগড়া করবে । তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবে আল্লাহ তাআলা তা জানেন । আর (হজ্বের সফরে ) পথ খরচা সাথে নিয়ে নিও । বস্তুতঃ তাক্বওয়াই উৎকৃষ্ট অবলম্বন । আর হে বুদ্ধিমানেরা! তোমরা আমাকে ভয় করে চলো”। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)।

হজ্বের ফাযায়েল

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পাঁচটি জিনিসের ওপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। যথা- (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ তাআলা ছাড়া আর কোনো মাবূদ নেই। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল। (২) নামায কায়েম করা। (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্যে বায়তুল্লাহর হজ্ব করা। (৫) রমযানের রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলিম)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে হজ্ব পালন করবে; আর তাতে সে অশ্লীল কোনো কথা বলবে না, কোনো প্রকার গুনাহ করবে না, সে  হজ্ব থেকে সেদিনের মতো ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিলো। অর্থাৎ ‘সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে যাবে’। (বুখারী ও মুসলিম)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) একটি হাদীসে কুদসী বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- “আমি যে বান্দার শরীর সুস্থ রেখেছি এবং রিযিক প্রশস্ত করে দিয়েছি আর এ অবস্থায় পাঁচ বছরের ভিতর সে আমার ঘর পরিদর্শন (হজ্ব) করতে আসেনি, সে নিশ্চয় বঞ্চিত হবে”। (বায়হাকী শরীফ)।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত ইবনে মাসঊদ (রাযি.) বলেন, ওমরা ও হজ্ব পর পর আদায় করো। কারণ, এতে দারিদ্র ও গুনাহ এমনভাবে মুছে যায়, যেভাবে হাপর লোহা, সোনা ও রূপার ময়লা দূর করে। আর কবূল হজ্বের সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়। (তিরমিযী, নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ ও ইবনে মাযাহ)।

হজ্ব আদায় না করার শাস্তি:

হযরত আলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে  বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার যাবতীয় খরচের সক্ষমতা রাখে, অথচ হজ্ব আদায় করেনি, সে ইহুদী হয়ে মারা যাক বা খ্রীস্টান, তাতে কিছু আসে যায় না। আর তা এ কারণে যে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের ওপর বায়তুল্লাহর হজ্ব করা ফরয, যে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার সমর্থ রাখে’। (তিরমিযী, মিশকাত)।

হযরত আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কোনো অনিবার্য প্রয়োজন অথবা অত্যাচারী শাসক বা এমন কোনো কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়নি যে- হজ্ব পালন করতে অক্ষম। তারপরও সে হজ্ব আদায় না করেই মারা যায়। তাহলে সে যেমন খুশী মরতে পারে, ইহুদী অবস্থায় মারা যাক কিংবা খ্রিস্টান’। (দারিমী)।

ওমরার ফযীলত

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- “হজ্ব ও ওমরা আদায়কারীগণ হলেন, আল্লাহর মেহমান। তারা যদি আল্লাহর নিকট কোনো দোয়া করে, তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন। তারা যদি গুনাহ মাফ চায়, আল্লাহ তাআলা তা মোচন করেন”। (ইবনে মাজাহ)।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “হজ্ব এবং ওমরার উদ্দেশ্যে যারা গমন করেন, তারা আল্লাহ তাআলার বিশেষ মেহমান। তারা যদি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেন। তারা যদি ক্ষমা চায়, মাফ করে দেন”। (তিরমিযী)।

হজ্বের সংজ্ঞা

হজ্বের আভিধানিক অর্থ হলো, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সংকল্প করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্ব দ্বারা ওই সমস্ত কাজকে বুঝানো হয়, যা হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধার পর বিশেষ বিশেষ জায়গায় সম্পাদন করা হয়। আর তা হলো, ফরয তাওয়াফ এবং আরাফায় অবস্থান, নির্দিষ্ট সময়ে যা আদায় করতে হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।