Home ইতিহাস ও জীবনী আমার প্রিয় শিক্ষক আল্লামা বাবুনগরী রহঃ ও কিছু স্মৃতিচারণ

আমার প্রিয় শিক্ষক আল্লামা বাবুনগরী রহঃ ও কিছু স্মৃতিচারণ

।। ডা.মাওলানা ইসমাইল আজহারি ।।

আমার প্রিয় অভিভাবক তুল্য শাইখ, আমাদেরকে সহীহ মুসলিম শরীফ এর দরস দিয়েছিলেন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ সময়ে। হুযুর এর দরস প্রদানের সিস্টেম সম্পুর্ণ আলাদা ছিলো, সহীহ বোখারী আর সহীহ মুসলিমের মধ্যে হাদীসের অনেক তাকরার পাওয়া যায়৷ হুযুর প্রথম কয়েক সপ্তাহ লাগাতেন কেবল মুকাদ্দামা শেষ করতে।

মুসলিম শরিফের দরস অন্যান্য কিতাব থেকে কিছুটা আলাদা৷ শুরুতে ভূমিকা রয়েছে অনেক বড়, এই ভূমিকা তথা মুকাদ্দামাতু মুসলিম পড়ানোর প্রতি হুযুর অনেক বেশী জোর দিতেন। হুযুরের সিস্টেম ছিলো, প্রতিটা হাদীসের সারমর্ম একবার বাংলাতে বুঝিয়ে দিতেন।তারপর সরল অনুবাদ বলতেন এরপর এই হাদীস থেকে কি শিক্ষা পেলাম এই রকম একটা উপসংহার টানতেন।

আমাদের সময় ছাত্র ছিলো প্রায় ২৩০০ জন।একই শ্রেণীকক্ষে সকল ছাত্র হুযুরের দরসে অংশগ্রহণ করতো।

হুযুরের লম্বা সময় দরসের সময় কারো মধ্যে বিরক্তি আসতোনা, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাদীসের ক্লাসের সিস্টেম হচ্ছে একজন ছাত্র লাউডবস্পিকারে হাদীসের মতন বা টেক্সট পড়বে, হুযুর হাদীসের অনুবাদ ও ব্যাক্ষা করবেন, হুযুর ছাত্রদের প্রতি মনোযোগ দিতেন, ২৩০০ ছাত্র থাকলেও মতন পড়তো ২০০-৩০০ জন, এর মাঝে নতুনরা সুযোগ কম পেতো, আমি একদিন হুযুরের সামনে মতন পড়তে বসেছিলাম। সেইদিন ছিলো আমার প্রথম দিন, কিতাবুস সিয়াম থেকে পড়তে শুরু করলাম, আমি পড়ি, হুযুর অনুবাদ করেন, এইভাবে প্রায় ১০ পেজ পড়লাম, আমি কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম৷ তবে হুযুরের মধ্যে ক্লান্তি দেখিনি।

দরস শেষে হুযুর বললেন, “আরেকটু ধিরে পড়বা, তাহলে ক্লান্তি লাগবেনা”। এর পর হুযুর রুমে চলে যান এবং একজন ছাত্র দিয়ে খবর পাঠালেন যেনো হুযুরের সাথে দেখা করি।

আমি যে বছর দাওরা পড়ি,আমার সহপাঠী দের মধ্যে সবার চেয়ে আমার বয়স কম ছিলো, মুখে দাঁড়িও উঠেনি, তাই একটু ভয় পেলাম, কেনো হুযুর দেখা করতে বললো।

হুযুরের রুমের কয়েক রুম পরেই আমার রুম ছিলো। রুম বলতে আসলে কিছু ছিলোনা, সিট শেষ হয়ে গেলে অন্যদের কে মাসজিদে থাকতে হতো, আমিও মাসজিদে থাকতাম৷ আসর নামাজের পরে হুযুরের সাথে দেখা করতে গেলাম।

হুযুর বললো, ওই মিয়া, তুমি তো দেরি করে ফেলেছো! বোখারী শরীফের খতম ছিলো, এক পারা পড়লে তো ১০০ টাকা হাদিয়া পেতে! এই বলে হুযুর হেঁসে দিলেন! সেই অমলিন হাসির সাথে আরো বললেন, যোগাযোগ রাখবা সব সময়।এইভাবেই হুযুরের কাছে আসা-যাওয়া শুরু হয়।

কোনো হাদীস হুযুর শুরু করলে সেই হাদীসের একটি সার নির্যাসহ বের করে ছাড়তেন। হাদীস থেকে মাসয়ালা বের করার সিস্টেম গুলি হুযুরের কাছেই শেখা।

হাদীসের মধ্যে শিশুদের নাম রাখার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে সুন্দর অর্থবহ নাম রাখার জন্য৷ আমি হুযুরের রুমে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, হুযুর,জামিলা নামের অর্থ হচ্ছে সুন্দরী, এখন কেউ যদি জামিলা নাম না রেখে বিউটি রাখে, তখন এইটার ব্যাপারে হুকুম কি৷ কারণ ইংরেজি বিউটি অর্থ সৌন্দর্য, জামিলা নামের ইংরেজি সমার্থক।

আরও পড়তে পারেন-

হুযুর বললেন, যদিও এইটা সমার্থক, তবে বিজাতীয় কালচারের সাথে মিলার কারণে এইটা মাকরুহ হবে।এই কথার সাথে সাথে অনেক মাসয়ালা সমাধান হয়ে গেলো। এইভাবে কোনো কিছুতে সন্দেহ হলে বিকালে হুযুরের কাছে চলে গেলে তিনি বুঝিয়ে দিতেন।

মাঝেমধ্যে রাত ১২-১ টা পর্যন্ত হুযুর গল্প করতেন, পুরো বাংলাদেশের হালচাল তিনি খবর রাখতেন। আজ শাইখ আমাদের কে ছেড়ে মহান আল্লাহর দিদার লাভে চলে গেলেন। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি জীবনের ৪০ টা বছর শুধু আল্লাহর রাসূলের হাদীস পাঠ করে কাটিয়েছেন।

তিনি সব সময় বলতেন, তোমরা হাদীস পড়ার সময় প্রিয় নবিঝির রাওযার সাথে তোমাদের আত্মার একটা কানেকশন হয়ে যাবে, কারণ দৈনিক যদি ৬ ঘন্টা পড়া হয়, তারা মানে ৬ ঘন্টাই রাসূল সাঃ কে স্বরণ করা হয়।। আল্লাহ পাক শাইখকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমীন।

– ডা.মাওলানা ইসমাইল আজহারি, তাকমিল হাদিস (হাটহাজারী মাদ্রাসা) ২০১০-১১, এমবিবিএস (ঢাকা)। ইমেইল- ismailazhari49@gmail.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।