Home ওপিনিয়ন দাওয়াতি ও মহৎ কাজে নিয়োজিত আলেমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য

দাওয়াতি ও মহৎ কাজে নিয়োজিত আলেমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য

- ফাইল ছবি।

।। মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া ।।

মুসলমানদের ঈমান লুটে নেয়ার অপতৎপরতা বৃটিশ শাসনামল থেকেই খ্রিস্টান মিশনারিরা উপমহাদেশে চালিয়ে আসছে। সে সময়েও তারা দরিদ্র, অনুন্নত এবং ধর্মীয় জ্ঞানে অনগ্রসর মুসলিম অঞ্চলকেই কর্মস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছিল। সরল সোজা মুসলমানদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার দাওয়াত দিত।

সেবার ছদ্মাবরণে মুসলমানদের ঈমানচ্যুত করার চেষ্টা চালাতে কোনো কার্পণ্য করত না। রাজত্ব ছিল তাদের। রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল তাদের দখলে। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের দ্বার উন্মুক্ত করে রেখেছিল সুচতুর ইংরেজ। ইউরোপ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে খ্রিস্টধর্মের যাজক, পাদ্রীদের খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য এখানে আনা হত। তখনকার উলামায়ে কেরাম ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি মিশনারিদের দূরভিসন্ধির বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই চালিয়ে যান। যে এলাকায় পাদ্রীরা খ্রিস্টধর্মের দাওয়াত দিত, উলামায়ে কেরাম সেখানেই উপস্থিত হয়ে তাদের ঈমান বিধ্বংসী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মুসলমানদের সতর্ক ও সচেতন করার প্রয়াস চালাতেন। কখনও কখনও পাদ্রীদের সাথে বিতর্ক অনুষ্ঠানও করতে হত। বিনা চ্যালেঞ্জে তাদের ছেড়ে দেননি।

এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখেন মাওলানা রহমাতুল্লাহ কিরানভী রহ.। আমাদের বাংলা অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মুন্সী মেহেরুল্লাহ রহ.।

পাকিস্তান আমলেও মিশনারি তৎপরতা বন্ধ ছিল না। যদিও পাকিস্তান মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে; কিন্তু শাসকগোষ্ঠী মিশনারি তৎপরতা রোধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ইসলামের নামে বিনির্মিত ভূখণ্ডে মিশনারীরা খ্রিস্টধর্ম প্রচারের কার্যক্রম অবলিলায় চালিয়ে যেতে থাকে।

আমাদের পাহাড়ি অঞ্চল, সীমান্তবর্তী দরিদ্র জেলাগুলোতে মিশনারি কার্যক্রম চালানোর জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্বাচন করে। তখন বিচক্ষণ ও দূরদর্শী উলামায়ে কেরাম নীরবতা অবলম্বন করেননি। তারা মিশনারি অপতৎপরতা রোধে বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরি করেন। মুজাহিদে আযম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে মুসলিম মিল্লাতের ঈমান আকিদা হেফাজতকে অন্যতম মৌলিক প্রোগ্রাম মনে করে। পূর্বপাক জমিয়তের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে আমার ওয়ালেদে মুহতারাম মুজাহিদে মিল্লাত শামসুদ্দিন কাসেমী রহ. “পাকিস্তানে মিশনারিদের অপতৎপরতা” নামক একটি বই লিখেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ খ্রিস্টান মিশনারীদের বিষাক্ত ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। পাকবাহিনী গোটা দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। বহু পরিবার ভিটে-বাড়ি হারিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অগণিত কোমলমতি শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশ্রয়হীন জীবন যাপন করতে থাকে। রাষ্ট্র তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়। অসহায় শিশুদের লালন পালন ও পরিচর্যা ব্যবস্থা করেনি। এ সুযোগে খ্রিস্টান মিশনারিরা ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশে আসে। তারা নতুন রূপে মিশনারি কার্যক্রম চালাতে শুরু করে। শিশুদের দত্তক নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমায়। ফলে শিশুরা একসময় তাদের ধর্মীয় পরিচয় হারিয়ে ফেলে। সেবার মুখোশ পরে দরিদ্র-পীড়িত অসহায় মানুষের মাঝে খ্রিস্টধর্ম প্রচার চালাতে থাকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন রকম বাঁধার সম্মুখীন হয়নি।

আরও পড়তে পারেন-

সচেতন ও দূরদর্শী উলামায়ে কেরাম কখনও নীরব ভূমিকা পালন করেননি। মিশনারীদের ঈমান হরণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন। দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলের মুসলমানদের সচেতন করেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মৌলিক প্রোগ্রামের একটি ছিল মিশনারীদের অপতৎপরতা রোধে দেশবাসীকে সোচ্চার করা। যেসব এলাকায় মিশনারি তৎপরতা জোরদার সে সব এলাকায় কুরআনী মক্তব প্রতিষ্ঠা করা। দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমানের পথে ফিরিয়ে আনাসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে মিশনারি অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তাঁরা।

তৎকালীন জমিয়ত সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদে মিল্লাত শামসুদ্দিন কাসেমী রহ. ১৯৭৭-৭৮ সাল থেকে প্রতি রমযানে নিয়মিত সংক্ষিপ্ত পরিসরে পবিত্র কুরআনের তাফসীর প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রশিক্ষণের অন্যতম আকর্ষণ ছিল খ্রিস্টধর্ম বিকৃতির উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করা। বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দিতেন। খ্রিস্টধর্মের অসারতা সম্পর্কে যৌক্তিক আলোচনা করতেন। উলামায়ে কেরামকে মিশনারীদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করে তুলতেন।

মুসলিম রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কর্তব্য ও দায়িত্ব হল, রাষ্ট্রের মুসলমানদের ঈমান হরণের সকল কার্যক্রম প্রতিহত করা। সেবার মুখোশে ঈমান বিধ্বংসী অপতৎপরতা রোধ করা। যারা প্রতারণা, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মুসলমানদের মুরতাদ বানানোর অপচেষ্টায় নিয়োজিত তাদের আইনের আওতায় আনা।

উলামায়ে কেরাম মিশনারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে কখনও কখন‌ও হয়রানির শিকার হন। অথচ মিশনারীরা অবলিলায় তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে থাকে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো, দাওয়াতি কার্যক্রমের পথকে সুগম করা এবং এ মহৎ কাজে নিয়োজিত উলামায়ে কেরামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

উত্তরবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলে কোনো কোনো জেলায় খ্রিষ্টান মিশনারির অপতৎপরতা বেশি জোরদার। এমনকি মুসলিম পরিচয় দিয়ে মসজিদে ইমামতি করার কথাও শুনা যায় তাদের এজেন্টদের। পার্বত্য এলাকায় মিশনারীরা নির্বিঘ্নে ঈমান বিধ্বংসী অপতৎপরতা চালায়। অথচ ইসলামের দাওয়াতী কাজের পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি মসজিদ বানিয়ে আযান দেয়ার কারণে হত্যা করা হয় একজন নও মুসলিমকে।

উলামায়ে কেরাম যদি খৃষ্টান মিশনারিদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানদের সতর্ক না করতেন, তাহলে ইসলাম ত্যাগকারীদের সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেত। উলামায়ে কেরামের দাওয়াতি কার্যক্রমের ফলেই বিশ্ব মানচিত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখনও স্বগৌরবে অবস্থান করছে।

– মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, সহসভাপতি- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবারিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এবং পরিচালক- জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ, মিরপুর, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।