Home সোশ্যাল মিডিয়া হে আমার রব তোমার দেয়া কোন নেয়ামতকে আমরা অস্বীকার করবো: ড. জাহাঙ্গীর...

হে আমার রব তোমার দেয়া কোন নেয়ামতকে আমরা অস্বীকার করবো: ড. জাহাঙ্গীর কবির


ড. জাহাঙ্গীর কবির তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, “হে আমার রব তোমার দেয়া কোন নেয়ামতকে আমরা অস্বীকার করবো যে সুন্দর প্রকৃতি, সবুজ গাছপালা, অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস, ভিটামিন – ডি এবং শক্তির উৎস সূর্যের আলো এত এত নেয়ামত আমাদের দিয়েছো শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছাড়া আর কিইবা করার আমাদের সামর্থ্য আছে। তাই শুধু তোমার কাছেই মাথা নত করি সেজদায় লুটিয়ে পড়ি”।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন ড. জাহাঙ্গীর কবির। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব তথা অনলাইন জগতে তার আন্তরিকতাপূর্ণ পরামর্শে খুশি অনেকে।

ড. জাহাঙ্গীর কবির বিভিন্ন ধরনের ডাক্তারী পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, ওজন, অ্যাজমা এবং শ্বাসকষ্ট রোগের।

বর্তমানে ফেসবুকে তার ফলোয়ার ২৬ লাখ এবং ইউটিউবে তাকে নিয়মিত অনুসরণ করেন ১৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। তিনি স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে নিয়মিত দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে উপকারভোগীদের ইতিবাচক সাড়া বেশ লক্ষ্যণীয়।

ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে শাহাদাত হোসাইন নামের এক রোগী লিখেছেন-

“গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া সফরের সময় হঠাৎ একদিন ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের কথা শুনি। আমি অতিথি হয়েছিলাম যে বাসায়, সেখানে খাবার টেবিলে জাহাঙ্গীর কবিরের প্রসঙ্গে আলাপ হয়। টেবিলে অনেক পদের খাবার সাজানো ছিলো। আমি কিছু খাচ্ছিলাম ও অনেক খাবার এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। ব্যস্ত হয়ে গৃহকর্তা ও গৃহকত্রী কারন জিজ্ঞেস করলে আমি ডায়াবেটিসের কথা বলেছিলাম। তখন তারা আমাকে জাহাঙ্গীর কবির ভিডিওগুলো দেখার পরামর্শ দিলেন।

আমি আমলে নেই নাই। ইউটিউবে এমন অনেক ভিডিও দেখে নানা চেষ্টা করেছি। কাজের কাজ তেমন কিছু হয় নাই। জাহাঙ্গীর কবিরও সেরকম কিছু ধরে নিয়ে তার ভিডিও দেখার কোন আগ্রহ বোধ করি নাই। মালয়েশিয়া থেকে পরে ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফর করেছি। সেসময় ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখেছি, জাহাঙ্গীর কবিরের ছাড়া। তাছাড়া চিন্তার কিছু ছিলো না। কারন সাথে ডায়াবেটিস, কোলেস্টরেল কমানো, হাই প্রেসার ও এসিডিটির পর্যাপ্ত ঔষধ ছিলো।

দেশে ফিরে অফিস শুরু করি ১ জানুয়ারী থেকে। অফিস চলতে থাকে। ৭ তারিখের দিকে ডায়াবেটিস চেক করে দেখি খাওয়ার দুইঘন্টা পর ১৭ পয়েন্ট। চিন্তায় পরে যাই। এর আগে তেরোর মধ্যেই থাকতো। ঔষধ তো নিয়মিতই খাচ্ছি। তাহলে হঠাৎ বেড়ে গেলো কেন? পরে বুঝলাম সফরের সময় খাবারে অনেক অনিয়ম হয়েছে। সেখান থেকে হতে পারে। দুশ্চিন্তা হতে থাকে। হঠাৎ ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের ভিডিওর কথা মনে পরে। ভিডিওটি গুলো দেখতে থাকি। টানা দুদিন ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে একের পর এক ভিডিওগুলো দেখি।

ভদ্রলোকের বর্ণনাভঙ্গি সরল ও মজাদার। সবসময় হাসিমুখ। কথা শুনে বোধ হতে থাকে কোন চাতুরী নেই। জ্ঞান, গবেষণা ও অভিজ্ঞতায় যা জেনেছেন তা আস্থার সাথে বলছেন। আমার মনের মধ্যে আস্থা তৈরী হতে থাকে। সেই আস্থা আরো দৃঢ় হতে থাকে উপকার পাওয়া মানুষদের অভিব্যক্তি দেখে। আমি পরিস্কার বুঝতে পারি এই অভিব্যক্তি গুলো শিখিয়ে দেয়া নয়। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা। শিখিয়ে দেয়া কথা অমন গভীর আর আনন্দের উজ্জ্বলতা নিয়ে বলা যায় না। বানিয়ে বলা কথা দিয়ে চোখ ভিজিয়ে দেয়া কঠিন।

একদিন জাহাঙ্গীর কবিরকে নিয়ে পাঠশালায় একটা পোস্ট পড়ি। সেই পোস্টের কমেন্টে সবাই ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। আমার আস্থা আরো গাঢ় হয়।

আমি আল্লাহর নাম নিয়ে জানুয়ারীর ১০ তারিখ থেকে ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শ অনুসরণ করা শুরু করি। ভাত, রুটি, আলুসহ সকল শর্করা বাদ দেই। শুরু করি কুসুম সহ একাধিক ডিম, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল দিয়ে সবজি, কিছু মাছ-মাংস আর মাখন দিয়ে বাদাম খাওয়া। সাথে আপেল সিডর ভিনেগার। সয়াবিন তেল একেবারে বাদ। অলিভ ওয়েলের সাথে যোগ হয় খাঁটি শরিষার তেল।

ভাত না খাওয়ার দ্বিতীয় দিনে তীব্র ক্ষুধা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। নিজেকে বড় অসহায় ও এতিমের মতো মনে হতে থাকে। মনে মনে ভাবি, সর্বোচ্চ ৪/৫ দিন ভাত ছাড়া থাকবো, তারপর নয়। দীর্ঘদিন ভাত ছাড়া থাকা? মাথা খারাপ!! ভাত আমার কাছে তীব্র ভালোলাগার ঘোর।

এর আগে শুধু রাতে ভাত না খাওয়ার তীব্র শপথ নিয়ে দুদিনের বেশি থাকতে পারি নাই। তৃতীয় দিনে মাছ বা মাংসের গরম ঝোল দিয়ে আরাম করে পেট ভরে ভাত খেয়ে আগের দুদিন রাতে ভাত না খাওয়ার বেদনা প্রশমন করেছি। খাওয়া শেষে কিঞ্চিৎ অপরাধ বোধ নিয়ে শপথ করেছি, আজই শেষ, রাতে ভাত খাব না আর। এরপর প্রায় প্রতিদিন রাতেই ভাত খাওয়ার পর একই শপথ নিয়েছি। এভাবেই চলে আসছিলো।

এবার ভাত ছাড়া দুদিন পার হয়ে গেলো। খাবার শুধু সবজি, ডিম, মাছ আর বাদাম। ভাতের জন্য আমার শরীর-মন জুড়ে হাহাকার।

আরও পড়তে পারেন-

তৃতীয় দিন ওজন মাপার মেশিনে দাঁড়ালাম। এই মেশিনটা আমাকে কষ্ট দিয়ে আসছে অনেকদিন ধরে। অনেক কসরত করার পরও এর মিটার নামে নাই নীচের দিকে। প্রতিবারই বিরক্ত হই। ক্ষুব্ধ হই।
এবার অবাক হলাম। জানুয়ারীর ৯ তারিখে ওজন মেপেছি, প্রায় ৭৬ কেজি। ১২ তারিখে ৭৪ কেজির একটু বেশি। আমার হৃদয় শীতল হয়ে গেলো। মনে হলো, একটা কিছু হচ্ছে। আরেকটু কষ্ট করা যায় তাহলে। এই সপ্তাহটাই। ওজন ৭২ এ নামলেই এই কষ্টের ইতি।

অফিস থেকে বাসায় ফিরে প্রতিদিনই ডাক্তার সাহেবের ভিডিও দেখি। সাথে ওজন কমানোতে সফলদের আনন্দময় অভিব্যক্তি। অনেকের অসুখ সারার কথা। আমি অবাক হই, আনন্দিত হই, আস্থাশীল হই। মনে মনে ভাবতে থাকি, আরো কিছুদিন কষ্ট করা যায়।

পরামর্শ মতো ডায়াবেটিসের ঔষধ ছেড়েছিলাম শুরুর দিন থেকেই। যদিও ২০১৬ সালে ডায়বেটিস ধরা পরার পর ডাক্তারেরা বলেছিলেন, ডায়াবেটিসের ঔষধ একবার শুরু হলে আর ছাড়া যায় না। এ সারাজীবনের অসুখ। মৃত্যু পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়। ফলে গত প্রায় চার বছর ধরে ডায়াবেটিসের ঔষধ খেয়ে আসছিলাম।

মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিন আমাকে ঔষধ খেতে হবে এবং আমাকে ঔষধ খাওয়ার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারবে কেবল মৃত্যু, এই চিন্তা আমাকে বিমর্ষ করে ফেলেছিলো। শুধু ডায়াবেটিস নয়, সাথে হাই প্রেশার ও কোলেস্টোরেল কমানোর ঔষধ আমাকে খেতে হতো। মাঝে মাঝে এসিডিটি ও ঘুমের ঔষধ।

জাহাঙ্গীর কবির সাহেবের ডায়েট শুরু করার দিন থেকে প্রেশার বাদে সব ঔষধ বাদ দিয়েছি। সম্ভবত পঞ্চম দিনে ডায়াবেটিস টেস্ট করলাম। ডায়াবেটিসের ঔষধ খাইনি গত ৫দিন। কত বেড়ে গেছে তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। মেপে, সকালে খাওয়ার আগে ৪.৭ এবং খাওয়ার পর ৬.৯ আসলো। আমি অবাক ও পুলোকিত। বিশ্বাস হতে থাকলো, আমি ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে চলেছি।

ততদিনে ভাতের প্রতি মোহ কমতে শুরু করেছে। ক্ষুধার বোধ আগের চেয়ে কমে আসতে শুরু করেছে। দুবেলা ডিম, সবজি আর বাদাম খেয়ে আমি দিব্বি সুস্থ আছি। ডায়েট চালিয়ে যেতে থাকলাম।

এরপর থেকে চলছে। একমাস সাত দিন আজ। মাঝখানে দু একবার অফিসের প্রোগ্রামের কারনে খাবারে কিছু ব্যত্যয় ঘটেছে। পোলাও বা মাংস খিচুরী খেতে হয়েছে। তারপরও গত একমাস সাত দিনে আমার ওজন কমেছে প্রায় ৮ কেজি। ৭৬ নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ৬৮। নিজেকে অনেক হালকা বোধ হয়। সারাদিন কাজ করলেও ক্লান্ত হইনা। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠি।

গতকাল খাওয়ার দুইঘন্টা পর ডায়াবেটিস মাপলাম। ৬.১পয়েন্ট।

আগে তিন চার ঘন্টা এজলাসে একটানা মামলা শুনলে ক্লান্তি লাগতো। মাথা ভারী হয়ে আসতো। একটু বিশ্রামের জন্য অস্থির হতাম। কোর্ট থেকে নেমে দুপুরের খাবার খেয়ে ইজি চেয়ারে ১০/২০ মিনিট ঘুমিয়ে না নিলে, পরে কাজ করতে পারতাম না। মনোযোগ আসতে চাইতো না। অথচ গত একমাস সাত দিন, দিনের বেলায় এক মিনিটের জন্য ঘুমাই নাই। ঘুমই পায় নাই। ঘুমাবো কেন? তাছাড়া ইজি চেয়ারে শরীর রাখার প্রয়োজনও হয় নাই।

এখন আরো বেশিক্ষণ একটানা কাজ করি। বড় ধরণের ক্লান্তি বোধ হয় না। মস্তিষ্ক আগের চেয়ে সতেজ মনে হয়।

ক’দিন আগে লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করলাম। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমেছে, বেড়েছে ভালো কোলেস্টেরল। ঔষধ ছাড়াই। তবে পুরোটা স্বাভাবিক হতে আরো কিছুদিন লাগবে।

সব মিলিয়ে আগের চেয়ে ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। সবচেয়ে বড় কথা, সারাজীবন বাধ্যতামূলক ভাবে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, প্রেশার বা ঘুমের ঔষধ খেতে হবে না, এই বিষয়টি আমাকে আনন্দিত করে। ঔষধ বিহীন সুস্থ জীবন, দারুণ ব্যাপার।

নিকট জনেরা অবশ্য হঠাৎ দেখা হলে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করেন, এতো শুকনো দেখাচ্ছে কেন? আমি হাসি। মনে মনে বলি, ওজন কমেছে ৮ কেজি, শুকনো তো দেখাবেই।

চিকিৎসা শাস্ত্রে আমার একাডেমিক জ্ঞান নেই। ফলে এই ডায়েটের ভালো বা মন্দের পুরো বিষয়টা আমি জানি না। তবে এখন পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা ভালো। ভবিষ্যত আল্লাহ জানেন।”

আপনাদের অভিজ্ঞতা কি বলে?

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।