Home ইতিহাস ও জীবনী ভালোবাসবো জনমভরে

ভালোবাসবো জনমভরে [১]

।। যাইনাব বিনতে মুহাম্মাদ আলী ।।

এসে গেলো রবিউল আউয়াল মাস। অনেকের জন্যে রবিউল আউয়াল মাস মানেই ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসার মাস। তাদের জন্য এ মাস উদযাপনের মাস, এ মাস আনন্দের মাস। কারণ প্রিয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসেই জন্মেছেন। এটা ঠিক যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের নয় তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু প্রিয় নবিজিতো রবিউল আউয়াল মাসেই ইন্তেকাল করেছেন।

তাহলে কীভাবে পারি এ মাসে ঈদ উদযাপন করতে? শুধু ঈদ উদযাপন করা হয় না বরং যারা করে না তাদেরকে নবিজির দুশমন উপাধি দেওয়া হয়।

আমরা শুধু রবিউল আউয়াল মাসে নয় প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসবো সারা জনমভরে। কীভাবে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবো? কীভাবে ভালোবাসালে প্রিয় নবিজি খুশি হবেন? কীভাবে ভালোবাসলে নবিজির সুপারিশ আশা করতে পারি? নবিজির শাফায়াত ছাড়া তো আমাদের জান্নাতে প্রবেশ কখনোই সম্ভবপর হবে না।

আখিরাতের কঠিন বিপদের মুহূর্তে প্রিয় নবিজি তাঁর উম্মতের মুক্তির সুপারিশ করবেন । নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ يَدْعُو بِهَا فَيُسْتَجَابُ لَهُ، فَيُؤْتَاهَا، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

অর্থাৎ, প্রত্যেক নাবীকে এমন একটি বিশেষ দোয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে, যা কবুল করা হবে। তারা দুনিয়াতে সে দোয়া করেছেন এবং তা কবুলও করা হয়েছে। আর আমি আমার দোয়া কিয়ামতের দিন আমার প্রিয় উম্মতের শাফাআতের উদ্দেশ্যে মূলতবী রেখেছি। [১]

সুবহানাল্লাহ! প্রিয় উম্মতের জন্য তাঁর বিশেষ দোয়া তাদের সবচেয়ে বেশি বিপদ,কঠিন, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য তুলে রেখেছেন। যেই নাবী প্রিয় উম্মতের জন্য এতটা মহানুভব ছিলেন; সেই নাবীর প্রতি উম্মতের ভালোবাসা কেমন হওয়া চাই!

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। আমরা যাকে ভালোবাসি তার সম্পর্কে অধিক জানতে চাই। সে কী করে না করে তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখি। তার পছন্দ অপছন্দের দিকে খেয়াল রাখি। অথচ এর চেয়েও অধিক ভালোবাসা উচিত নবিজিকে। কারণ আমরা যদি পরিপূর্ণ মুমিন হতে চাই দুনিয়ার জীবনে সবকিছুর চেয়ে বেশি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতে হবে।

আনাস রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু বলেছেন,

قَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنّاسِ أَجْمَعِينَ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। [২]

নবী প্রেমই হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের একমাত্র উপায়। তবে এ ভালোবাসা শুধুমাত্র মৌখিকভাবে দাবী করলে হবে না। আমাদের দৈনন্দিন কাজেকর্মে রাসুলের প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সব সময় সকল কাজের ক্ষেত্রে সুন্নাহকে প্রাধান্য দিতে হবে। সুন্নাতের অনুসরণ অনুকরণ রব্ব ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জনের অসীলা এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার চাবিকাঠি। রাসুলের জীবনাদর্শই হলো সুন্নাহ। সুন্নাহ সম্পর্কে জানতে বেশি বেশি প্রিয় নবিজির সীরাহ পাঠ করতে হবে।

আরও পড়তে পারেন-

নবিজি কেমন ছিলেন, কিভাবে তিনি কথা বলতেন, কিভাবে তিনি ইবাদাত করতেন, কিভাবে তিনি মেহমানদের সাথে আচরণ করতেন, পরিবার – পরিজনের হক তিনি কিভাবে আদায় করতেন, জীবনের প্রতিটি কর্ম কিভাবে তিনি সম্পাদন করতেন, তাঁর সম্পর্কে গভীর থেকে গভীর ভাবে জানা এবং সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাই হলো রাসুলের প্রতি ভালোবাসা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত আগত সবার জন্য মহান আদর্শ।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রিয় নবিজির জীবনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা জানা মুসলমান হিশেবে আমাদের জন্য তাঁর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন। আমরা প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অধিক বা পুরোপুরি না জানার কারণে, তাঁর সুন্নাহ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা না থাকার কারণে, ইসলামের চমৎকার আদর্শ থাকা সত্বেও নবিজির অনেক সুন্নাহ থেকে বর্তমান প্রায় মুসলমান মাহরুম। যার কারণে মুসলমানগণ আজ সর্বক্ষেত্রে অধঃপতনের অতল গহ্বরে পৌঁছে গেছে। আমাদের দরকার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী নিয়ে প্রচুর স্টাডি করা। আমরা যত স্টাডি করবো ততই জানবো। যত জানবো তত মানতে পারবো। যত মানবো তত রাসুলের প্রিয় হবো।

এখন জানবো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মদিন উপলক্ষে কী করতেন! আবু কাতাদাহ রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবারে সাওম পালন করতেন। এ প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এ ছাড়া সোমবারে আমার ওপর প্রথম ওহি অবতীর্ণ হয়েছে।[৩]

প্রিয় নবিজি তার জন্মদিন ও ওহি অবতীর্ণ হওয়ার কারণে সোমবারে সাওম পালন করতেন। তাই আমরা রাসুলকে ভালোবেসে প্রতি সোমবারে সাওম পালন করতে পারি। বছরে ৪৮ থেকে ৫৪ দিন সোমবার আসে। আমরা শুধু রবিউল আউয়াল মাসে নয় বছরের প্রতিটি সোমবারে সাওম পালন করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতে পারি।

ইয়া রব্ব! আমাদের হৃদয়কে প্রিয় নবিজির ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দাও। দৈনন্দিন জীবনে ফরজের পাশাপাশি সুন্নাহের উপর পরিপূর্ণ আমল করার তাওফিক দাও।

فداك أبي وأمي يارسول الله صلي الله عليه وسلم

ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক।

[৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩ ]

তথ্যসূত্র:
১.সহিহ মুসলিম : ১৯৯
২.সহিহ বুখারী : ১৫
৩. সহিহ মুসলিম : ১১৬২

– যাইনাব বিনতে মুহাম্মাদ আলী, ইসলামবিষয়ক গ্রন্থ এবং পত্রপত্রিকার কলাম লেখক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।