Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ‘ইসলামে গীবত, ফিতনা ও ভিন্নধর্মাবলম্বিদের প্রতি কটূক্তি কঠোরভাবে নিষধ করা হয়েছে’

‘ইসলামে গীবত, ফিতনা ও ভিন্নধর্মাবলম্বিদের প্রতি কটূক্তি কঠোরভাবে নিষধ করা হয়েছে’

[রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, উত্তরা জামেয়াতুন নূর আল-কাসেমিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতীব আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী শুক্রবার (২২ অক্টোবর) মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে খুতবার আগে যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেছেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে বয়ানের অনুলিপি উম্মাহ পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল -সম্পাদক]

আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পুর্বে অশান্ত এপৃথিবীতে সাম্য, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন সায়্যিদুল আম্বিয়া, দোজাহানের বাদশাহ, আশরাফুল কায়েনাত জনাবে রাসূল মুহাম্মাদ মোস্তফা (সা.)।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে, জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে, ধাপে ধাপে সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর রাসুল (সা.)এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা হলো মহিমান্বিত আল-কুরআন। যা সূরা ফাতিহা থেকে নাস পর্যন্ত দীর্ঘ ত্রিশ পারায় বিভক্ত।

এই পবিত্র কুরআন হলো রাসূলুল্লাহ (স.)এর আদর্শ ও বর্নাঢ্য জীবন। যা পরহেযগারদের জন্য পথপ্রদর্শক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

“ذلك الكتاب لا ريب فيه، هدى للمتقين”
অর্থ- ঐ কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। মুত্তাকিনদের জন্য পথপ্রদর্শক। ‘

হযরত রাসূল (সা.)এর ইন্তেকালের পর বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) আম্মাজান আয়েশা (রাযি.) নিকট জানতে চেয়ে বললেন, “আপনার সামনে রাসুল (সা.)এর পুরো জীবনাদর্শ  উদ্ভাসিত। আপনি বলুন, কেমন ছিলেন হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)এর জীবন?”

প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, “তোমরা কি কুরআন পড় না?

সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) বললেন, “হ্যাঁ অবশ্যই পাঠ করি।”

হযরত আয়েশা (রাযি.) বললেন, অন্য কোথাও তালাশ করার প্রয়োজন নেই। কারণ, “كان خلقه القران” অর্থাৎ-  “তার আখলাক হলো আল কুরআন”।

আর পবিত্র কুরআনের আদর্শ কেমন? তা এই আয়াতে বুঝে আসে,  আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوْۤا اَنْ تُصِیْبُوْا قَوْمًۢا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلٰى مَا فَعَلْتُمْ نٰدِمِیْنَ.

অর্থাৎ- “হে মুমিনগণ! কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবসত কোনো সম্পদ্রায়ের ক্ষতি না করে বস! ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।” (সূরা হুজুরাত)।

মিথ্যার একটি সূক্ষ্ম রূপ হলো, যাচাই-বাছাই ছাড়া যা শোনে তাই বলে বেড়ানো। কারণ, এর মাধ্যমে অনায়াসেই একটি ভুল তথ্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।

আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে মানবতার নবী রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নিকট আল্লাহ তায়ালা এই সূরা নাযিল করে মানব সমস্যার বিরাট সমাধান দিয়েছেন, যা আমরা বর্তমানে ভালোভাবে উপলব্ধি করছি। অন্যত্র রাসূল (সা.) ইরশাদ ফরমান-

“كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ.”

অর্থাৎ- কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (কোনো বাছ-বিচার ছাড়া) তাই প্রচার করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫ ; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৯২)।

আর যদি দ্বীনি বিষয় হয়, তখন তো ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়! এর দায় কখনো ওই ব্যক্তি এড়াতে পারে না, যার অসতর্কতার কারণে এই ভুল তথ্যটি প্রচারিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, ‘যে আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়!’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ১০৭)।

বর্তমানেও এধরণের সমস্যা বিদ্যমান। বানোয়াট, মিথ্যাচার আর যা শোনে তাই বর্ণনা করা এক কলুষিত ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যার ফলে আমরা ভুলে যাই আমাদের মনুষ্যত্ব। পাশবিকতা আর হিংস্র লালসার শিকার হয় জনসাধারণ। অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এর সমাধান সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। আজ হাজারো মানুষ কুরআন পড়ে কিন্তু তারা অন্তর দিয়ে তা অনুধাবন করে না।

মহানবী (সা.) এমন এক মহান সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করে গিয়েছিলেন, যাতে কোন মানুষ কখনো নির্যাতিত  হয়নি। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী।
সূরা হুজুরাতের অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.

অর্থাৎ- ‘মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত-১১)।

উক্ত আয়াতে “তাসখীর”-এর অর্থ হলো, কারো অসম্মান ও তাচ্ছিল্য করা। এমনভাবে কারো দোষ বর্ণনা করা, যাতে মানুষ তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে, এতে ওই ব্যক্তির অন্তরে ব্যথা আসে। কারো চলাফেরা, উঠাবসা,কথাবর্তা,অঙ্গ-ভঙ্গি ইত্যাদি নিয়ে ব্যঙ্গ করা, কারো শারীরিক গঠন ও আকার-আকৃতি নিয়ে কটূক্তি করা, তার কোনো কথা বা কাজের ওপর ঠাট্টা করা, চোখ, হাত-পা দ্বারা টিকা-টিপ্পনী মারা ইত্যাদি; এ সকল জিনিস অন্তর্ভুক্ত।

এ ধরনের কাজ অনেক রকম হতে পারে। যেমন- বর্তমানে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলার দৃষ্টান্ত। দু’দল খেলা শুরুর পরেই  ঝগড়াঝাটি করে। খেলার মাঠ থেকে এই ঝগড়া গড়িয়ে পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ এক খেলাকে কেন্দ্র করে এই ঝগড়া চলতে থাকে যুগ-যুগান্তর। এক পর্যায়ে তারা চলে যায় হামিয়্যাতাল জাহিলিয়্যাহ তে।

অথচ কুরআনুল কারীম আমাদের  শিক্ষা দেয়- لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِنْ قَوْمٍ… অর্থা কোন গোত্র যেন অপর গোত্রের ব্যাপারে বিদ্রুপ না করে। অপর এক  আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

“يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ..”

অর্থাৎ- ‘হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি..’

আজ টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সকলে এক মায়ের সন্তান। শুধু আল্লাহ সামান্য তথা জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছেন। যাতে পরস্পরের স্বতন্ত্র পরিচয় থাকে। এছাড়া, সকলের রক্ত এক, কান্না এক, হাসি ইত্যাদি অনেক কিছুই একরকম। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

“وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ.”

অর্থাৎ- ‘এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন’।

সুতরাং সুন্দর, অসুন্দর,  নারী, পুরুষ  কার সম্মান বেশি? মান আতকাকুম? “কারোই নয়।”
অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ “

অর্থ- “মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।”

আরও পড়তে পারেন-

অথচ মানুষ  কাজ করে ধারণার উপর। সে হয়ত  করেছে ইত্যাদি ধারণা করে। জাগতিক কোন খারাপ কাজ যেমন কাউকে হত্যা করা বা  রক্তপাত করা যেমন গুনাহ, আল্লাহ বলেন, ঠিক তেমনি খারাপ ধারণাও গুনাহ! অযথা বদ ধারণা কখনো কখনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতি, ধর্মীয় পর্যায়ে সমস্যা করে ফেলে। এরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার  দায়ভার তখন কে নিবে? তদ্রুপ পরনিন্দা থেকেও বেঁচে থাকা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

“أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ”

অর্থাৎ- তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আর যারা এগুলো করে তারা প্রকৃত মুমীন নয়।

এরপর আল্লাহ প্রকৃত মুমীনের পরিচয় দিয়ে ইরশাদ করেন-

“إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ”

অর্থাৎ- ‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জিহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ’।

এখানে সূরা হুজুরাতের কয়েকটি বিষয় নিয়ে বলা হয়েছে-

প্রথমতঃ মুমিনব্যক্তির নিকট যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি সংবাদ আনয়ন করে, তবে তার সত্যতা যাচাই করে দেখতে হবে। যাতে অজ্ঞতাবশতঃ কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধন  না হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ঃ কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। সাথে সাথে সাথে একে অপরের প্রতি দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকা এবং একে অপরকে মন্দ নামে  না ডাকা। কারণ,  ঈমান আনয়নের পরে মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা একাজ করে তওবা না করে, তারাই যালেম।

তৃতীয়ঃ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং কারো গোপনীয় বিষয়ে সন্ধান না করা। কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। কারণ, কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ সকলে তো একে ঘৃণাই কর। আর পেছনে নিন্দাবাদও এমন ঘৃণিত কর্ম।

চতুর্থঃ সকল মানুষকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং  বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করে দিয়েছেন, যাতে পরস্পরে পরিচিতি হয়। আর নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।

পঞ্চমঃ সর্বশেষ আল্লাহ প্রকৃত ঈমানদার বান্দার পরিচয় তুলে ধরেন। তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।

সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম! আমাদের বাংলাদেশে আমাদের পুর্বপুরুষের বহু কষ্ট-ক্লেশ,  শ্রম ও সাধনা মিশে আছে এদেশের পরতে পরতে। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা আমার সোনার বাংলাদেশ। আন্তরিকতা, হৃদ্যতা,  ভ্রাতৃত্ববোধের সুনাম যুগ-যুগান্তরের।

ইতিহাস বলে, ভারত প্রায় ৭৬৬ বছর মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল। এভাবে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত বাংলা, বিহার,  উড়িশ্যায় মুসলিম সুশাসন প্রতিষ্ঠিত থাকে। এরপর মুসলিম শাসকদের উদারতা আর সরলতার সুযোগে এ উপমহাদেশ ইংরেজদের গোলামীর জিঞ্জির পরে প্রায় দু’শ বছর তথা ১৯৪৭ পর্যন্ত চলে স্বাধীনতা সংগ্রাম। শেষ পর্যন্ত তারা পর্যদুস্ত হয়ে কূটনৈতিক কূটচাল করে হিন্দু-মুসলিম দু’জাতির মাঝে সংঘাত লাগিয়ে দেয়। এতে তারা শতভাগ সফল।

অথচ মুসলিম, হিন্দু বা অন্য কারো ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা সওয়াবের কাজ নয়। বরঞ্চ ধর্মীয় অনুভূতি  আঘাত হানা থেকে বিরত থাকা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পবিত্র কুরআন-হাদীসেও সুস্পষ্টভাবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এদেশে  মুসলমান ৯০ ভাগ। তাই দায়িত্বটাও আমাদের সবচেয়ে বেশী। আমাদের দেশকে এবং দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই আমাদের ধর্মের সীমারেখার মধ্য থেকেই।

অতএব, যারা বলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাহলে তাদের থেকে বড় মূর্খ আর কে? তদ্রুপ যারা বলেন,  রাষ্ট্রধর্ম থেকে ইসলাম বাদ দিতে হবে তাহলে তার থেকে বড় নাস্তিক আর কেউ হতে পারে না। এই দেশ রক্ষা করা, এবং এর সার্বক্ষণিক সংরক্ষণ ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা নাগরিক হিসেবে আমাদের  সকলে দয়িত্ব।

এক্ষেত্রে যদি রাসূল (সা.)এর নববী জিন্দেগীতে বদর ও উহুদ যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস দেখলে জানতে পারা যায় যে, কারা আগে যুদ্ধ করেছিলো। তবুও মুসলমানদের নিয়ম ছিলো প্রথমেই রক্তপাত ঘটাবে না । যেমন,মক্কা বিজয়ের দিন আবু সুফিয়ানের ঘটনা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ’

অর্থাৎ- আমি আপনাকে জগতবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।

সুতরাং নববী আদর্শকে সামনে রেখে  আমাদের দেশ পরিচালনা করেতে হবে।  এদেশে সকলে থাকবে পারস্পরিক যে কোন রক্তপাত ও সঙ্ঘাতহীন সহনশীল ও আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে। যে কোন ধরণের মনের কলুষতাকে দূর করে নিরাপত্তা ও আন্তরিকতার সাথে পারস্পরিক শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে সকলে বসবাস করবে।

তাই আসুন, গিবত-শেকায়েত, অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থেকে নিজেদের জীবনে নববী আদর্শকে বাস্তবায়ন করি। তাহলেই প্রকৃত সফলতা আমাদের পদচুম্বন করবে।

অনুলিখন- মাওলানা নাইমুল হাসান

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।