Home শিক্ষা ও সাহিত্য ছাত্রজীবনে সফল হতে দরসে বিনয়, সুশৃঙ্খল ও মনোযোগী হতে হবে: আল্লামা শোয়াইব...

ছাত্রজীবনে সফল হতে দরসে বিনয়, সুশৃঙ্খল ও মনোযোগী হতে হবে: আল্লামা শোয়াইব জমিরী

দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রবীণ আলেম ও শাইখে সানী হযরত আল্লামা হাফেজ শুয়াইব জমিরী মিশকাত শরীফ সানীর দরসে সহস্রাধিক ছাত্রের উদ্দেশ্যে ‘আদব ও শিষ্টাচার এবং ইলম অর্জনে আত্মত্যাগ’ সম্পর্কে রত্নমাখা কিছু নসীহত পেশ করেন।

তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, মনযোগ দিয়ে কথাগুলো শোন, তোমরা ইলম শিক্ষার ব্যাপারে সর্বদা নমনীয়ভাবে চলাচল করবে। নিজেকে ইলমের জন্য ওস্তাদের কাছে সম্পূর্ণ সোপর্দ করতে হবে। নিজেকে কখনো বড় মনে করবে না। আচরণে বা উচ্চারণে নিজেকে প্রজ্ঞাবান বা শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে না। জগতে এমন শত-সহস্র কিতাব আছে, যা তোমরা পড়নি। সুতরাং নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবার কিছু নেই। জ্ঞান আহরণের ময়দানে তুমি নিজেকে এমনভাবে মিটিয়ে দিবে, যাতে লোকসমাজ তোমার আদব, সম্মান, শ্রদ্ধায় অভিভূত হয়ে পড়ে।

আল্লামা শুয়াইব জমিরী আরো বলেন, শিক্ষাজীবনে নিজের বংশীয় মর্যাদা ভুলে যেতে হবে। বংশীয় মর্যাদা দিয়ে কি হবে যদি নিজের ভিতরে কিছু না থাকে। দেখ, একটি গোলাপ ফুল। তাকে নিয়ে লোকজন কি করে? তোমরা দেখবে অবশ্যই কোন অনর্থক বা নিম্ন কাজে গোলাপকে ব্যবহার করা হয় না। গোলাপকে মানুষ নিজের স্থানে থেকেও সুন্দর ও পরিপাটি স্থানে রাখে। তার থেকে ঘ্রান নেয়। কোমল অনুভূতি প্রকাশ করে। সৌন্দর্য উপভোগ করে।

তিনি আরো বলেন, তোমরা দেখ গোলাপটি কীভাবে নিজেকে নিম্ন মাটির মধ্যে মিটিয়ে দিয়ে নিজেকে যোগ্য রূপে বিকশিত করে তুলেছে। দেখ, গোলাপ যে গাছে জন্মায় তার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ। মাটিগুলো কত যত্মহীন। গাছটির চাপিাশে কত ময়লা আবর্জনা। মানুষের কত জমানো ময়লা গাছটির দিকে নিক্ষেপ করত। কত ঝড় বৃষ্টি তার উপর দিয়ে বয়ে গেল। কতজন মুল্যহীনতার কথা গাছটিকে লক্ষ্য করে বলত। কতজন তাকে উপড়ে ফেলার অভিপ্রায়ও প্রকাশ করতো। কিন্তু বেচারা বৃক্ষটি যখন নিজের শরীরে শত শত কাটা আর বক্রতা নিয়ে একটি সতেজ মসৃণ গোলাপ মানব সমাজকে উপহার দেয়, তখন মানবসমাজ গোলাপের সুবাসে মোহিত হতে একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। সবাই ফুলটিকে নিজের করে পেতে কত কিছু করে।

ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আল্লামা শুয়াইব জমিরী বলেন, তোমরা দেখ, সে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে যোগ্য করে তৈরি করেছেন। নিজের আমিত্বকে সে বর্জন করেছে। নিজেকে মিটিয়ে দিয়ে অপরূপ সুন্দর ও সুবাসে পরিণত হয়েছে। আজ তার কদর সবার কাছে। আর সে যদি অহংকারের পোষাক পরিধান করত, তাহলে সে কি দামি হতে পারত? সুতরাং তোমরা সব সময় আদব-আখলাক, আচার-উচ্চারণ, চলন-পড়ন, সব ক্ষেত্রে নমনীয়তা অনুসরণ কর এবং আমিত্বকে বর্জন কর।

আরও পড়তে পারেন-

এর পর আল্লামা শুয়াইব জমিরী একটি উর্দু শে’র পাড়েন, যার অনুবাদ এমন- যদি তুমি মর্যাদা অর্জন করতে চাও তাহলে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দাও। কেননা প্রত্যেক বীজ মাটিতে মিশেই ফুলের বাগানের ফুল হয়ে আত্মপ্রকাশ করে সবাইকে সুরভিত করে।

তোমরা উপলব্ধি এবং খেয়াল করো, অহংকার, আমিত্ম ও দর্পমুক্ত জীবন গঠন করতে হবে। নিজেদের যদি কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে যুক্তিবীহিন অনুতপ্ত হতে হবে। সে অনুতপ্তে আশান্বিত হয়ে বার বার মাফ চাইতে হবে। কিন্তু সেই অনুতপ্তে কোন যুক্তি বা অহংকারের নিশানাও থাকা যাবে না।

এ পর্যায়ে তিনি আরো বলেন, তোমরা দেখÑ হযরত আদম (আ.) ও ইবলিশ দুজনেই আল্লাহর বিশেষ নিকটতম মর্যাদাকে হারিয়েছে। একজন নিষেধ অমান্য করেছেন এবং অন্যের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়েছেন। আরেকজনকে করেছেন আদেশ। কিন্তু সে নিজের কুপ্রবৃত্তির কারণে আদেশ অমান্য করেছেন। দেখ, উভয়জন যখন নিজেদের ভুলের মধ্যে মশগুল এবং ….. মর্যাদা থেকে পদচ্যুত, তখন দুজনের অনুতপ্তের ধারণ ছিল আসমান-জমিন তফাত। দেখ, শয়তান শুধু আদেশ অমান্য করেছে তা নয়। সে নিজের অকৃতজ্ঞ কর্মের জন্য মালিকের সামনে নিজের দাম্ভিকতার পক্ষে অসার যুক্তি খাড়া করেছে। সে বলে, আমি আদম হতে উত্তম। কেননা আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি দ্বারা, আর আমাকে আগুন দ্বারা। আগুন সবসময় উপরের দিকে যায়, আর মাটি নিচের দিকে। সুতরাং আমি আগুনের সৃষ্টি হয়ে মাটির আদমকে কীভাবে সিজদা করতে পারি! এভাবে শয়তানের অমান্যতা ও দাম্ভিক যুক্তি তাকে চিরতরে অভিশপ্ত করেছে, কিয়ামত পর্যন্ত লানত সবার তরফ থেকে।

আর হযরত আদম (আ.) আপন প্রভুর তরে তওবা, ইসেতগফার সব সময় পড়তে লাগলেন। যার অর্থ- হে আমার পালনকর্তা, আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। তোমরা খেয়াল কর, উভয়ের মাঝে আমিত্বকে মিটিয়ে দেওয়ার কত তফাত এবং উভয়জনের মানের পার্থক্য। একজন আমিত্মকে প্রকাশ করে চরম লাঞ্ছিত হয়েছে। আরেকজন আমিত্মকে বর্জন করে শ্রেষ্ঠত্বের স্থানে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।

এরপর আল্লামা শুয়াইব জমিরী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন- দরস চলাকালীন আদবের সাথে দরসে বসতে হবে। উস্তাদের দিকে ছাত্রের পূর্ণ মনোযোগ থাকতে হবে। ওস্তাদের তাকরীর গভীরভাবে শুনতে হবে। দরসের মাঝে এমন কাজ করা যাবে না, যাতে করে কিতাবের, ওস্তাদের বা দরসের অসম্মানী হয়। নিজের অন্য সাথী ভাইদের জন্য বিরক্তিকর বা অসৌজন্যতা প্রকাশ পায়, এমন আচরণ করা যাবে না। দরস শেষে অবসর সময়ে দরসের পাঠ পুনরায় মুতালায়া করতে হবে। কোন কিছু না বুঝলে নিজের মেধাবী সাথীদের কাছে জানতে চাইবে, অথবা উস্তাদের অবসর সময়ে আদবের সাথে জেনে নিবে। এভাবে শিক্ষা জীবনকে এভাবে সাজাতে পারলে সাফল্য আসবেই, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইলমের জন্য কবুল করুন। তোমাদেরকে ইলমের রাস্তায় সময় ব্যয় করার ও সফল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

অনুলিখনে- মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ফারাবী

শিক্ষার্থী- শোরাকায়ে মিশকাত, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।