Home শিক্ষা ও সাহিত্য ‘শিরক-বিদআতমুক্ত সমাজ গড়তে দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখা উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব’

‘শিরক-বিদআতমুক্ত সমাজ গড়তে দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখা উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব’

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদ্রাসা)এর প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুফতি খলীল আহমদ সম্প্রতি ‘তাফসীরে জালালাইন’ এর দরসে শিরক-বিদআত প্রসঙ্গে সহস্রাধিক ছাত্রের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মুফতি খলীল আহমদ বলেন, আমাদের পূর্বসুরী উলামায়ে কেরাম শিরক-বিদআতমুক্ত সমাজ গড়তে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। তাঁদের এমন শত পরিশ্রমের বদৌলতেই বর্তমানে অনেক সমাজ ও পরিবার শিরক ও বিদআত মুক্ত হতে পেরেছে। সুতরাং তোমাদেরকেও শিক্ষা জীবন শেষে অন্যান্য দ্বীনি কাজের পাশাপাশি সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি থেকে শিরক ও বিদআত দূর করতে দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখবে, আলেমগণ হলেন নবীর ওয়ারিস বা উত্তরসুরী। সমাজের শিরকী ও বিদআতী কর্মকাণ্ড আলেমদের চুপচাপ দেখে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে আলেমরা পরিবেশ পরিস্থিতি অনুপাতে দাওয়াতী কাজ করে যেতে হবে। কিন্তু সেটা না করলে পরকালে তাদেরকে জবাবদেহী হতে হবে।

তিনি বলেন, ‘শিরক’ এমন একটি গুনাহ, যার ফলাফল কুফরের সাদৃশ্য। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদেরকে বার বার ‘শিরক’ থেকে বেঁচে থাকার দাওয়াত দিয়েছেন । মকালামুল্লাহ’র আহবান এতো শ্রুতিমধুর যে, পিতা-ছেলের উপদেশমালাকে বান্দার জন্য আমলযোগ্য অমূল্য বাণীতে প্রেরণ করেছেন।

তিনি বলেন, হযরত লোকমান হাকিম (আ.) আপন সন্তানকে জীবন গড়ার লক্ষে প্রথম বাক্যে নসীহত করেন- ‘হে বৎস, আল্লাহর সাথে কখনও ‘শিরক’ করিও না। নিশ্চই আল্লাহর সাথে শিরক করা মহাঅন্যায়। (সুরা লোকমান, ১৪ আয়াত)। কিন্তু শত উপদেশের মধ্যেও আমরা শিরকের কালো ছায়ায় নিজেদের প্রতিনিয়ত জড়িয়ে ফেলছি। হয় সেটা প্রবৃত্তির খায়েশের কারণে, না হয় মুর্খতার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে যুক্তির ব্যানারে। প্রবৃত্তির যেমন জীবন শেষের সাথে সমাপ্ত অবধারিত, ঠিক যুক্তিরও একটা সীমা আছে, যেখানে মানুষ অজ্ঞ।

মুফতি খলীল আহমদ আরো বলেন, যুগে যুগে প্রাণপ্রিয় ওলামায়ে কেরাম সর্বস্তরের মুসলমানকে শিরকের কালো থাবা থেকে হেফাজতে রাখতে অক্লান্ত মেহনত করেছেন। তাদের মধ্যে যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম মুফতিয়ে আযম ফয়জুল্লাহ (রহ.) অন্যতম। যার প্রমাণ চট্টলার জমিন আজও বহন করছে। শত-শত প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে তিনি শিরকে লিপ্ত ও বিদআতীদেরকে বাকরুদ্ধ করেছেন।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বলেন, “একদিনের ঘটনা- বেশকিছু লোক দলবেঁধে মুফতিয়ে আযম (রহ.)এর দরবারে হাজির হলেন। তারা হুজুরকে যুক্তির ব্যানারে প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা হুজুর! আপনি যে বলেন তোমরা মাজারে বা পীরের দরবারে নিজেদের সন্তান চাওয়া বাদ দাও। এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। মাজার পুজারীদের উপর আল্লাহ সদা নারাজ থাকেন। তাদের উপর গজব হওয়ার কথা আছে। কিন্তু আমরা তো এর উল্টোটা দেখছি। কারণ, অনেকেই মাজারে গিয়ে নিজের মনোবাসনা চায়, মান্নত করে, তাদেরও তো সন্তান হচ্ছে এবং মনের আশা পূর্ণ হচ্ছে! যদি আল্লাহ সত্যিই নারাজ থাকেন, তাহলে তাদের সন্তান কী করে হচ্ছে বা কী করে মনের আশা পুরণ হচ্ছে?”

মুফতি সাহেব (রহ.) তাদের জবাবে বললেন- আচ্ছা বলো তো, যদি কোন বালেগ পুরুষ এবং বালেগ নারী বিবাহ ছাড়া সহবাস করে, তাহলে কী সন্তান হওয়া সম্ভব? তারা উত্তর দিলেন, জ্বী, অবশ্যই সম্ভব।

তখন মুফতিয়ে আযম (রহ.) বললেন, পীরের দরবারে বা মাজারে সন্তান চাওয়া ও হওয়া তেমনই, যেমন বিবাহ্ ব্যতিত দু’জন নারী-পুরুষে সন্তান হয়। কাজটি শরীয়তের বহির্ভুত হলেও অবৈধ মেলামেশার কারণে ফল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা বৈধ ও হালাল পদ্ধতির সন্তান নয়, সেই সন্তানকে বলা হবে জারজ সন্তান এবং এমন সন্তানের পিতামাতাকে বলা হবে ব্যভিচারী।

মুফতি সাহেব (রহ.)এর এই উত্তরে উপস্থিত বিদআতিরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চুপ হয়ে গেলেন”।

অনুলিখনে- মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ফারাবী

শিক্ষার্থী- শোরাকায়ে মিশকাত, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।