Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ পানি অপচয়, অসচেতনতার কারণে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়

পানি অপচয়, অসচেতনতার কারণে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়

।। মাওলানা নিজাম সাইয়্যিদ ।।

আল্লাহর ইবাদতের অন্যতম এক অনুষঙ্গের নাম পানি।তাছাড়া ইহা জীবনের উৎস এবং জীবন ধারণের মাধ্যমও বটে। তাই মহান আল্লাহ পানিকে আমাদের জন্য সহজলভ্য করে দিয়েছেন।তবে ইসলামে পানি সদ্ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পানির সংরক্ষণ এবং এর সদ্ব্যবহার মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমরা আহার কর ও পান কর। কিন্তু অপচয় করোনা। তিনি অপচয় কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ, আয়াত- ৩১)।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাহাবী হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাযি.) একদিন বসে অজু করছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর পানির ব্যবহার দেখে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এত পানি অপচয় কেন? সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, অজুর মধ্যেও কি অপচয় হয়? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, এমনকি নদীর স্রোতের পাশে বসে অজু করার সময়ও। (ইবনে মাজাহ)।

আমাদের মহানবী (সা.) এক মুদ পানি দ্বারা অজু করেছেন। ১ মুদ= ০.৭৫০ লিটার বা ৭৫০ মিলি লিটার। ইসলামী আইনজ্ঞগণ বলেছেন, এর বেশী খরচ করলেও গুনাহ হবে না। তবে পানির অপচয় করা যাবে না। অথচ আমরা অসাবধানতা বশত: বা চিন্তার অলক্ষ্যেই কত পানিই না নষ্ট করে চলেছি প্রতিনিয়ত। যার কারণে আমরা নিজেদের অজান্তেই গুনাহগার হচ্ছি।

আরও পড়তে পারেন-

এক জরিপ মতে, বর্তমানে বিশ্বে ৩৬০ কোটি মানুষ পানি সংকটে রয়েছেন। অথচ প্রত্যেক মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৩০ গ্যালন পানি অপচয় করেন। শুধুমাত্র একটি ছিদ্রযুক্ত নল দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে পানির ফোঁটা পড়লে প্রতি বছর ২ হাজার ৭০০ গ্যালন পানি অপচয় হয়।

তাছাড়া নিরাপদ পানির আরও একটি বড় হুমকি হচ্ছে দূষণ। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বেশীর ভাগ নদীর পানি দূষিত। যা ভবিষ্যতে মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অথচ পানি দূষণকে ইসলাম শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেছে। এক হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষের কষ্ট হয় এমন তিনটি কাজ পরিহার করো। পানির উৎস, চলাচলের রাস্তা এবং ছায়াদার স্থানে মল ত্যাগ করো না। এখানে দেখা যায়, রাসূল (সা.) পানি দূষণ না করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। তাছাড়া পানি সঠিকভাবে ব্যবহার এবং এর শুদ্ধতা ঠিক রাখার জন্য পানির পাত্র ঢেকে রাখা এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পানি আলাদা আলাদা পাত্রে রাখারও নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম।

পানি অপচয়রোধে আমাদের করণীয়

  • অজু, গোসল, মিছওয়াক বা দাঁত ব্রাশ করা এবং থালা-বাসন মাজার সময় অহেতুক পানির টেপ ছেড়ে না রাখা।
  • পানির লাইনে লিকেজ থাকলে দ্রুত তা সারানোর ব্যবস্থা করা।
  • গাড়ী বা অন্যান্য আসবাবপত্র ধোয়ার ক্ষেত্রে পরিমিত পানি ব্যবহার করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,ভবিষ্যতে যদি বড় ধরনের কোন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ হয়, তবে তা হবে পানি নিয়ে। ২০১৭ সালের ১৯শে মার্চ ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় অনুষ্ঠিত ৮ম পানি সম্মেলন থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কথা উঠে এসেছে।উপকূলের মানুষকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এক কলসি পানি আনতে হয়।বিশুদ্ধতা যাচাই-বাছাই তো দূরের কথা, কোনমতে খাওয়া যায় এমন খাবার পানি জোগাড় করতেই উপকূলের মানুষের দিন কেটে যায়।

এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)ও এশীয় প্রশান্ত পানি ফোরাম ‘দ্য এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের ৪৯ দেশের মধ্যে ৩৭ দেশেই পানি সংকট রয়েছে। এর মধ্যে ভয়াবহ রূপ পেতে চলেছে বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ায়।

তাই আসুন! আমরা মহান আল্লাহ প্রদত্ত এই নেয়ামতের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে নেয়ামতের শোকর আদায় করি এবং বিশ্বকে কঠিন বিপর্যয় থেকে রক্ষায় সচেষ্ট হই।

লেখক: শিক্ষক, আল জামিয়াতুল আহলিয়াহ দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।