Home ইসলাম ইসলাম বুদ্ধিজীবীদের যেমন মর্যাদা দিয়েছে

ইসলাম বুদ্ধিজীবীদের যেমন মর্যাদা দিয়েছে

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ: শক্তির জোরে শান্তির স্বদেশভূমি পদানত করা ইসলামের শিক্ষা নয়। ফেরাউনের কবল থেকে মুসা (আ.)-এর নেতৃত্বে হীনবল মানবসত্তার স্বদেশ ও স্বাধীনতা অর্জনের বর্ণনায় খুঁজে পাওয়া যায় বাঙালির চিরায়ত আকাঙ্ক্ষা :

‘সেই দেশে যাদের সে দুর্বল রাখে

তাদের প্রতি মোর অনুগ্রহ থাকে।

তাদের—আমি সেথা নেতা বানাইয়া

সেদেশের অধিকারী দেই করিয়া।’

(কাব্যানুবাদ : সুরা : কাসাস, আয়াত : ০৫)

জালিমের বিরুদ্ধে মজলুম বাঙালির ২৬৩ দিন প্রতিরোধ সংগ্রামে পবিত্র কোরআনের নিত্যতা স্পষ্ট—‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এই অত্যাচারীর জনপদ থেকে মুক্তি দাও। তুমি আমাদের জন্য তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক পাঠাও…।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৫)

আরও পড়তে পারেন-

মহান মুক্তিসংগ্রামে ইসলামের যথাযথ উপস্থিতি লক্ষণীয়। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে এপ্রিল, ১৯৭১ এক ঘোষণা—‘‘…বাঙালির অপরাধ মহান স্রষ্টার নির্দেশমতো, অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে এক সুন্দর ও সুখী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার সংকল্প ঘোষণা করেছে। …পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার দুশমন বাঙলি মুসলমান নারী-পুরুষ, বালক-বালিকা কাউকে হত্যা করতে, বাড়িঘর লুট করতে, একটু দ্বিধা করেনি। মসজিদের মিনারে আজান প্রদানকারী মুয়াজ্জিন, মসজিদে-গৃহে নামাজরত মুসল্লি, দরগাহ-মাজারে আশ্রয়প্রার্থী হানাদারের গুলি থেকে বাঁচেনি….। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার ওপর বিশ্বাস রেখে ন্যায়ের সংগ্রামে অবিচল থাকুন। ‘অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই সুখকর।’ বিশ্বাস রাখুন, ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।” (বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র, খণ্ড-৩, হক্কানী পাবলিশার্স)।

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ মঙ্গলবার পাকিস্তানি হায়েনার ক্ষিপ্ত-লোলুপতার খোরাক হন দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী-সাহিত্যিক ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনের প্রথম বাণী—‘পড়! তোমার প্রভুর নামে… পাঠ করো সেই মহিমান্বিত প্রভুর নামে, যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ১-৪)

বুদ্ধিজীবীরা ‘কলমসৈনিক’। ইসলামে জ্ঞানীর অবস্থান সম্মানজনক—‘যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৯)

বুদ্ধিজীবীদের বেশির ভাগ শিক্ষক। ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘কল্যাণকর বিদ্যা শিক্ষা দানকারীর জন্য (প্রাণ-প্রকৃতির) সব কিছু আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে।’ (তিরমিজি) বুদ্ধিজীবীরা ‘জ্ঞানের খনি’। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, সোনা ও রুপার খনির মতো মানুষও খনিতুল্য।’ (মুসলিম)

পরিশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, যত বুদ্ধিজীবী গত হয়েছেন, মহান আল্লাহ যেন তাঁদের ‘শাহাদাতে’র উচ্চ মর্যাদা নসিব করেন। যাঁরা স্বজন হারিয়ে, পঙ্গুত্ব বরণ করে কষ্টে আছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন তাঁদের স্বস্তি দান করেন। এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে মোনাজাত, যেসব বীর সন্তান জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলেন প্রিয় স্বদেশ ও স্বাধীনতা, তাঁরা যেন সুস্থ থাকেন এবং দীর্ঘায়ু হন। আমিন।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।