Home ইসলাম ধৈর্য মুমিনের ভূষণ

ধৈর্য মুমিনের ভূষণ

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: সুখ-দুঃখ, আলো-আঁধার নিয়েই আমাদের জীবন। জীবনে কখনো পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে আবার কখনো পরিস্থিতি প্রতিকূলেও যাবে। কোনো অবস্থায় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ ঈমানদারদের সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সর্বদা আল্লাহর পথে প্রস্তুত থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)

ধৈর্যশীলতা অর্জন করতে প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। সঙ্গে প্রয়োজন দৃঢ় ঈমান। কারণ কোনো মানুষের মধ্যে দৃঢ়তা না থাকলে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি না থাকলে সে ধৈর্যশীল হতে পারবে না। রাসুল (সা.) একবার আনসারদের কিছু লোককে বলেন, আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)

যারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মহান আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করবে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো! হে আমার মুমিন বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। যারা এ দুনিয়ায় ভালো কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সুরা : আজ-জুমার, আয়াত : ১০)

আরও পড়তে পারেন-

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জান্নাত উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক প্রদান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের শুভ পরিণাম। স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যাতে তারা এবং তাদের পিতৃপুরুষগণ, তাদের স্ত্রীগণ ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ছিল তারা প্রবেশ করবে। আর ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবে। (আর বলবে) শান্তি তোমাদের ওপর, কারণ তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২২-২৪)

দুনিয়ায় মানুষের বিপদাপদ আসা স্বাভাবিক। কিন্তু পরম করুণাময় এর বিনিময়েও মুমিন বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)

তাই দুনিয়ায় কোনো কিছু না পেলে বা কোনো বিপদে পড়লে ধৈর্য হারা না হয়ে মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত। কারণ আমরা জানি না, কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটা খারাপ। কোনটা কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণের। আল্লাহ আমাদের জন্য যখন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তা-ই আমাদের জন্য কল্যাণকর। এতে আমাদের সাময়িক কষ্ট অনুভূত হলেও এর বিনিময়ে আমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৫)

মহান আল্লাহ সবাইকে বিপদমুক্ত জীবন দান করুন। যারা বিপদে আছে তাদের বিপদমুক্ত করুন এবং সবাইকে সর্বাবস্থায় তাঁর ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখে ধৈর্যধারণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।