Home শিক্ষা ও সাহিত্য শিক্ষা বিস্তারে মুসলমানগণ যে সোনালী ইতিহাস রচনা করেছে, তার নজির কেউ দেখাতে...

শিক্ষা বিস্তারে মুসলমানগণ যে সোনালী ইতিহাস রচনা করেছে, তার নজির কেউ দেখাতে পারেনি

।। শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।

মক্কা বিজয়ের পর যখন ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে বাঁধা উঠে গেল এবং চতুর্দিকে এই শিক্ষার পাঠ দান আরম্ভ হলো, তখন বিদ্যুৎগতিতে পুরো আরব জুড়ে এই শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ল। আড়াই বছরে সৌদীআরব, ইয়ামেন, উমান, আরব আমীরাত, কাতার, বাহরাইন ও কুয়েতসহ ৩১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই শিক্ষা শুধু বিস্তার লাভ করেনি- বরং মানুষের লেবাস-পোশাক, তাহযীব-তামাদ্দুন ও কৃষ্টি-কালচার এই শিক্ষার আলোকে গড়ে উঠে। এবং বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসন তার আলোকেই চলতে আরম্ভ করে। তার পূর্বে অন্য কোনো শিক্ষা পৃথিবীতে এত ব্যপকতা লাভ করতে পারেনি এবং এ ধরণের বিপ্লবও ঘটাতে পারেনি। খেলাফতে রাশেদা থেকে নিয়ে ১২ শত বছর পর্যন্ত পৃথিবীর সিংহভাগ জুড়ে একই শিক্ষা, একই বিচার ব্যবস্থা, একই ধরণে প্রশাসন বিদ্যমান ছিলো।

যেহেতু এই উম্মতের বৈশিষ্ট হলো শিক্ষা, তাই এই উম্মত শিক্ষার জগতে যে সোনালী ইতিহাস রচনা করেছে, তা আজও কোনো জাতি দেখাতে পারেনি।

আরও পড়তে পারেন-

প্রত্যেক মুসলমান শিক্ষার জন্য এত আগ্রহী ছিলো যে, শিক্ষার ক্লাশ কোনো ঘরে বা মসজিদে চালানো সম্ভব ছিলো না। ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মাঠে, খেজুর বাগানে ও বাজারে শিক্ষার ক্লাশ চলত। পাঁচ হাজার থেকে দেড় লক্ষ পর্যন্ত এক এক ক্লাসের ছাত্র সংখ্যা ছিলো।

আজকের তুলনায় সে সময় লোক সংখ্যা ছিল অতি অল্প, রাস্তা-ঘাট ছিল না এবং যানবাহন ছিল ঘোড়া, গাধা ও উট। তারপরও ইমাম আবু হানীফার শাগরেদ ইমাম আলী বিন আছিমের ক্লাশে ছাত্র সংখ্যা ছিলো ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার)। তার ছেলে আছিম বিন আলীর ছাত্র সংখ্যা এক লক্ষ ষাট হাজার, ইমাম আবু হানীফার শাগরেদ ইয়াযীদ বিন হারুনের ক্লাশে ৭০ হাজার, সুলাইমান বিন হারবের ক্লাশে ৪০ হাজার, আবু মুসলিমের ক্লাশে ৪০ হাজার, জাফর ফিরয়াবীর ক্লাশে ৩০ হাজার, উছমান বিন আবী শায়বার ক্লাশে ৩০ হাজার, আবু বকর বিন আবী শায়বার ক্লাশে ৩০ হাজার। এভাবে এক এক শায়খের সবকে হাজার হাজার ছাত্রের সংখ্যা ছিলো।

স্মরণ শক্তিতে শিক্ষার সংরক্ষণ

স্মরণ শক্তিতে ইসলামি শিক্ষার সংরক্ষণের ইতিহাস মুসলমানদের একক বৈশিষ্ট্য। ইমাম আবু যুর‘আ রাযীর ছয় লক্ষ হাদীস মুখস্ত ছিলো। তন্মধ্যে দুই লক্ষ হাদীস সুরা এখলাসের মত মুখস্থ ছিলো। কুতায়বা বিন সায়ীদ, আবু খায়ছামা, আলী আল-মাদানী, ইয়াহইয়া বিন মু‘য়ীন, আমরোন্নাকিদ আহমদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহওয়াই, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, ইয়াহয়া বিন সায়ীদ, ইয়াযীদ বিন হারুন, আবু ‘আছিম আন্নাবীল, হাফস বিন গিয়াছ, উমর বিন আফস, আলী বিন ‘আছিম, আবু বকর বিন আবী শায়বাহ, উসমান বিন আবী শায়বাহ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, হাকিম, দারেমী, আবু হাতিম, ইবনু আবী হাতিম প্রমুখ হাজারো উলামায়ে কেরামের পাঁচ লক্ষ থেকে দশ লক্ষ পর্যন্ত হাদীস (বর্ণনাকারীর নাম পরিচয়সহ) মুখস্থ ছিল।

এক এক অঞ্চলে হাজারের অধিক লোক এমন ছিলো, যাদের লক্ষাধিক হাদীস (বর্ণনাকারীর নাম সহ) মুখস্থ ছিলো। স্মরণ শক্তিতে শিক্ষাকে রিজার্ভ রাখা মুসলমান জাতির একক বৈশিষ্ট্য। যার উদাহরণ অন্য কোনো জাতির মধ্যে পাওয়া যায়নি। কৃষক, ব্যবসায়ী, তাঁতি, কুমার, মুচিসহ সব শ্রেণির লোক হাফেযে হাদীস ছিলো। [সূত্র- শিক্ষা]

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।