Home ইসলাম ধর্মীয় জ্ঞানের স্বরূপ সন্ধান

ধর্মীয় জ্ঞানের স্বরূপ সন্ধান

।। আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) ।।

কোরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি মুখস্থ করার নাম ইলম তথা ধর্মীয় জ্ঞান নয়, বরং ইলম হলো একটি নুর বা জ্যোতি। যে জ্যোতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যাকে আমি মানুষের ভেতর চলার জন্য আলো দিয়েছি সে ব্যক্তি কি ওই ব্যক্তির মতো যে অন্ধকারে আছে এবং সে স্থান থেকে বের হওয়ার নয়?’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২২)

আর সেই নুর বা আলো প্রাপ্ত অন্তরের অবস্থা এমন হয় যে যদি চারদিক থেকে তরবারি হাতে মানুষ তাকে ঘিরে ফেলে তবু তার অন্তরে (গাইরুল্লাহর) ভয় জাগ্রত হয় না। একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে ছিলেন। দুপুরের সময় এক গাছের নিচে বিশ্রামের যাত্রা বিরতি দেন।

তরবারি গাছে ঝুলিয়ে রাখেন এবং গাছের নিচে শুয়ে পড়েন। এক শত্রু অতি সাবধানে গাছ থেকে তরবারি নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে এসে দাঁড়ায় এবং জিজ্ঞাসা করে, আমার হাত থেকে তোমাকে কে রক্ষা করবে? নবীজি (সা.) নিজ অবস্থান পরিবর্তন না করেই অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে উত্তর দেন, আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন। এমন পরিস্থিতিতে যে এমন প্রশান্ত মনে উত্তর দিতে পারবে এবং অন্য কারো কথা না বলে আল্লাহর কথা বলবে, তবে বুঝে নিতে হবে এটাই জ্ঞান। নতুবা শুধু অক্ষরজ্ঞান তো শয়তানেরও অনেক ছিল। উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানের পূর্ণতা এলে, আল্লাহর পূর্ণ পরিচয় লাভ করা সম্ভব হয়। যারা আল্লাহর বাণী—‘হয়তো তোমরা এমন জিনিস অপছন্দ করবে, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর’-এর মর্ম জানে। ফলে সে ভয় পায় না। সে ভাবে এটা আমার রোগের চিকিৎসা এবং পাপ মোচনের উপায়। সে এটাও ভাবে যে আমি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর জন্য। সুতরাং তিনি আমাকে যেভাবে খুশি সেভাবে রাখতে পারেন।

আরও পড়তে পারেন-

এটাই ধর্মীয় জ্ঞান তথা ইলমের প্রকৃতরূপ, যা আল্লাহভীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়। এটাই সেই ফিকহ, যার ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন ফকিহ শয়তানের জন্য এক হাজার আবেদ (নিছক ইবাদতকারী) অপেক্ষা কঠিন। ’ হাদিসে বর্ণিত ফকিহ দ্বারা মাদরাসায় পাঠ দানকারী ফকিহ উদ্দেশ্য নয়। শুধু কিতাব পড়ার দ্বারা শয়তানের প্রতারণা ধরা সম্ভব নয়। এটা হলো এমন অন্তর্দৃষ্টি ও আল্লাহর পরিচয় লাভ করা যায় আল্লাহভীতির মাধ্যমে। জ্ঞানের মর্যাদাসংক্রান্ত নিম্নোক্ত হাদিসের উদ্দেশ্যও এটা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান দ্বিনের জ্ঞান (ও বোধ) দান করেন। ’ প্রকৃত এই জ্ঞান কিতাব পড়লেই অর্জিত হয় না। পুঁথিগত বিদ্যার বিশেষ গুরুত্ব সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না। বহু সাহাবি এমন ছিলেন যে স্বাক্ষর করতেও পারতেন না। দ্বিনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে তারা অগ্রসর ছিলেন। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের মধ্যে সবচেয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী। ’ এখন তাঁর জ্ঞান কী প্রথাগত ও কিতাবি জ্ঞান ছিল? কখনোই না। তার জ্ঞানের ক্ষেত্র ছিল ‘কোরআনের বোধ’ যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সহবতের (সংশ্রব) বরকতে আল্লাহ তাঁকে দান করেছিলেন। যে জ্ঞান তার ভেতর আল্লাহভীতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। যে জ্ঞানের ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেছিলেন, ‘আমি আমার শিক্ষক ওয়াকি (রহ.)-এর মন্দ মুখস্থ শক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করলাম। তিনি আমাকে গুনাহ পরিহারের উপদেশ দিলেন। ’ তাহলে সেটা কোন জ্ঞান পাপ যা অর্জনের পথে অন্তরায়? কেননা বহু পাপী, এমনকি অবিশ্বাসী ব্যক্তির পক্ষেও কিতাব মুখস্থ করে ফেলা সম্ভব। যেমন বৈরুতে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বহু হাদিস বিশেষজ্ঞের দেখা পাওয়া যায়।

‘আল-ইলম ওয়াল উলামা’ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।