Home শিক্ষা ও সাহিত্য কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না: মাওলানা নিজামপুরী

কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না: মাওলানা নিজামপুরী

মুহা. শরীফ: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেছেন, কওমি মাদরাসা দ্বীন রক্ষার মজবুত দূর্গ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কওমী মাদরাসা ইসলাম, মুসলমান, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কওমি মাদরাসা ও ওলামায়ে কওমির অবদান অনস্বীকার্য। কওমি মাদরাসায় খালেস দীন শিক্ষা দেওয়া হয়। রাতদিন কুরআন, হাদীসের চর্চা হয়।

তিনি আরো বলেন, কওমি মাদরাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ৮টি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়। এগুলোকে একসাথে ‘উসূলে হাশতেগানা’ বলা হয়। দেওবন্দের আদলে পরিচালিত সকল মাদরাসায় এই নীতিগুলো পালন করা হয়। কওমী মাদরাসা শুরু থেকে উসূলে হাশতেগানার অনুসরণে চলে আসছে। যতদিন কওমি মাদরাসা বাকি থাকবে সেই মূলনীতির আলোকেই চলবে। কোন অপশক্তি যদি কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করে, তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কখনো সফল হতে দেয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীস মিলনায়তনে দুই সহস্রাধিক নবীণ আলেমকে হাদীসের অন্যতম কিতাব ত্বহাবী শরীফের সমাপনী সমাপনী দরস শেষে এসব কথা বলেছেন অত্র মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী।

আরও পড়তে পারেন-

প্রায় দেড়ঘন্টা ব্যাপী দরসে নবীন আলেমদের নসিহত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১০৯১ সনে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরার প্রাক্কালে হাকিমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানভী (রহ.)এর খলিফা মাওলানা মাসিহ উল্লাহ খান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ এবং দুআ নিতে গিয়েছিলাম। তখন হযরতের নিকট আরজ করেছিলাম যে, হযরত আমি একজন বাংলাদেশী তালেবে ইলম। হাটহাজারী মাদরাসায় পড়াশোনা শেষ করে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হয়েছি। হযরতের নিকট আমি কিছু নসিহতের মুহতাজ। তখন হযরত বলেছিলেন- আলেম এবং তালেবে ইলম কখনো ইলম থেকে ফারেগ হতে পারে না। ইলমের চর্চায় সব সময়ই লেগে থাকতে হয়।

তিনি আরো বলেছিলেন, হার কাম কারনে ছে পেহলে উসকে আখের কু সুঁচো। অর্থাৎ প্রত্যেক কাজ করার আগে এর শেষ পরিণাম ভেবে-চিন্তে দেখতে হবে। কাজের শেষ পরিণাম সম্পর্কে ভাবতে হবে।

নবীন আলেমদের উদ্দেশ্যে মাওলানা নিজামপুরী বলেন, দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করে আপনারা পড়াশোনার একটা স্তর শেষ করে বিদায় নিতে যাচ্ছেন। আগামীতে আপনারা বিভিন্ন মাদরাসায় ইলমের খেদমতে নিয়োজিত হবেন। মনে রাখবেন, যে মাদরাসায় খেদমতে নিয়োজিত হবেন মুহতামিম সাহেবের পক্ষ থেকে আপনাকে যে সকল জিম্মাদারি দেওয়া হবে তা দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করবেন। নিজের জিম্মাদারীর বাইরে এদিক-সেদিক নজর দেবেন না। ছাত্রদের হক আদায় করে পড়াবেন। যেসব কিতাব পড়ানোর জিম্মাদারি পাবেন সেগুলো মুতালায়া করে পড়াবেন। কখনো অন্যের পেছনে পড়বেন না। নিজের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে পারলে খেদমতের জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

ত্বহাবী শরীফের সনদ বয়ান করে মাওলানা নিজামপুরী বলেন, আমি এই কিতাব দারুল উলুম দেওবন্দে শায়খুল হাদীস আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.)এর নিকট পড়েছি। তিনি আমাদেরকে আখেরি সবক পড়িয়ে সুন্নাতের উপর অটল থাকা এবং বিদআত থেকে বেঁচে থাকার শর্তে এই কিতাব পাঠদানের এজাজত দিয়েছিলেন। আমিও আপনাদেরকে উক্ত শর্তে এই কিতাব পাঠদানের অনুমতি প্রদান করলাম।

মাওলানা নিজামপুরী বলেন, কতদিন হায়াত বাকি আছে জানি না। মহান প্রভুর ডাক আসলেই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। ইন্তেকালের সংবাদ পেলে যদি সম্ভব হয় জানাযায় উপস্থিত হবেন। যদি তা সম্ভব না হয় পরবর্তীতে এসে কবর জিয়ারত করবেন।।এটাও সম্ভব না হলে দূর থেকে কমপক্ষে তিনবার সূরাতুল এখলাছ পড়ে ঈসালে সওয়াব করবেন।

সমাপনী পাঠদানে মাওলানা নিজামপুরী শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহিমাহুল্লাহু, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহু, মুফতিয়ে আযম আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামী রহিমাহুল্লাহুকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তাঁদের নাম উচ্চারণের সাথে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান। এসময় তিনি মুরুব্বিদের জন্য দুআ করেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।