Home শিক্ষা ও সাহিত্য দেশে একটি অদ্ভুত শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে

দেশে একটি অদ্ভুত শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে

- প্রতিকী ছবি।

।। মনোয়ারুল হক ।।

বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব আঙ্গিকে তাদের শিক্ষার অবস্থান নির্ণয় করার যে তালিকা প্রকাশ পেয়েছে তা নিয়ে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ তাদের মতামত দিয়েছেন । এই তালিকায় ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না থাকার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নয়। এই অবস্থানটা উত্তরাধিকার সূত্রেই সৃষ্টি হয়েছে ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে যখন নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, তখন সে ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের একটি মাত্র রাজনৈতিক দলে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। তেমন ভাবে ৭৫ উত্তর বাংলাদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন রাজনৈতিক বিভাজনের মাধ্যমে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ/ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিভক্ত হয়ে, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে দূরে নিয়ে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া, তারই পরিণতি আজকের এই অবস্থার।

এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সমর্থক শিক্ষকদের দল সাদা আর নীলের দৌরাত্ম্য যেখানে, সেখান থেকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ না বেরোতে পারেন তাহলে এই অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটবে না।

প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদ অধিকার করে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই অধ্যাপকবৃন্দ। শিক্ষা কার্যক্রমের চেয়ে  তাদের এই বাড়তি দায়িত্ব পালনেই উৎসাহ বেশি। এবং  বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধ্যাপকদের প্রায় সকলকেই উপাচার্য হওয়ার দৌড়েও ব্যস্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের সুযোগে ১৯৮৩/৮৪ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রমোশন নীতিমালা সৃষ্টি করা হয়েছিল । এই নীতিমালা মূলত শিক্ষকদের গবেষণাবিমুখ করার ক্ষেত্রে  প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ওই শিক্ষক প্রমোশন নীতিমালা  শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয় আজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব কটিতেই জারি হয়েছে। এ নীতিমালায় শিক্ষকদের প্রমোশন হয় চাকরির বয়স হিসেবে। সেখানে গবেষণা মুখ্য কোনো বিষয় নয়। 

এরকম অদ্ভুত প্রমোশন নীতিমালা পৃথিবীর কোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই । একমাত্র বাংলাদেশে এই ধরনের প্রমোশন নীতিমালা বিরাজমান। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা থেকে প্রমোশন নীতিমালা সবকিছুই নতুন করে তৈরি করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অভিন্ন একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যেন সেই নীতিমালার আওতায় যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছাত্র যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।

আরও পড়তে পারেন-

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উদাহরণ গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন । ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হতে হলে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথমে এলিজিবিলিটি টেস্টে পাস করতে হয়। শুধুমাত্র পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষক নিয়োগ হওয়া সম্ভব হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একদিকে কিছু আইন-কানুন বানানোর অধিকারী, ১৯৭৩ সালের‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট অনুসারে, অন্যদিকে সরকারের টাকা পয়সার যোগানদাতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। দুঃখের বিষয় এই মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশ প্রায় ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পালন করতে চায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রকাশিত হয়েছে যার ৯০% ব্যয়ের টাকা ইউজিসি থেকেই আসবে, অথচ আইন প্রণয়ন এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে ইউজিসি কতটুকু ভূমিকা পালন করে সেটি একটি প্রশ্ন?

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চার বছরের গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু করার উদ্দেশ্য কী ছিল তা অস্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়া জাপান ইংল্যান্ড ও ভারতে তিন বছরের গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু আছে। সেখানে এই চার বছরের গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু রেখে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যয়বহুল করার এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের একটি বাড়তি বছর শিক্ষা জীবনে সংযোজন করার কী কারণ আছে তা অস্পষ্ট।

সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক কিছুতে গুণগত পরিবর্তন করা দরকার । শুধুমাত্র স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমকে নিয়ে গবেষণা চালালেই শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে না। নতুন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হচ্ছে মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য। কিন্তু এটা চালুর আগে ব্যাপকভাবে কোন মতামত সংগ্রহ করা হয়নি।

কিছু ব্যক্তি একত্রিত হয়ে এই প্রস্তাবনা করেন। সংসদে কিংবা বাইরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তন সংক্রান্ত তেমন কোন আলোচনা মাত্রা পায় না। এই হচ্ছে আমার দেশের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা। এই দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

আর শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বৈষম্য হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেকার খরচের বিশাল অঙ্কের টাকার পার্থক্য । পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো বাৎসরিক খরচের পরিমাণ খুবই কম, সে তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ব্যয়ের পরিমাণ শতগুণ বেশি। এমনই একটি অদ্ভুত শিক্ষাব্যবস্থা এ দেশে চালু আছে ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।