।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।
হিজরী বর্ষের ‘সফর’ মাসে প্রচলিত একটি বিদআত হলো, ‘আখেরী চাহার সোম্বা’ পালন। যারা এটা পালন করেন, তারা মাহে সফরের শেষ বুধবারে গোসল করে সেই দিন তাবিজ ইত্যাদি নিয়ে থাকেন। প্রফুল্লচিত্তে ভালো খাবার রান্না করেন, যা মূলত কোনো সাহাবী এমনকি চার খলীফা, আশারায়ে মুবাশ্শারা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, উলামায়ে মুহাক্কিকীন, মুফতি, মুহাদ্দিসগণের বর্ণনা কিংবা কুরআন- হাদীস, ফিকহ, সীরাত বা ইতহিাস গ্রন্থের কোথাও উল্লেখ নেই।
তাদের আকিদা হলো- সফর মাসের চতুর্থ বুধবার নবীজি (সা.) অসুস্থতা থেকে সুস্থতা লাভ করেছিলেন। সেই খুশিতে উল্লিখিত কাজগুলো তারা করে থাকেন । কিন্তু তা বিশুদ্ধ কোন ঐতিহাসিক সূত্রে বর্ণিত নেই। বরং ইতিহাসে পাওয়া যায়, মাহে সফরের শেষ বুধবার নবীজি (সা.)এর অসুস্থতা শুরু হয়েছে। পরন্তু যদি তা সাওয়াব ও বরকত লাভের কাজ হতো, তাহলে খলীফাতুর রাসূল হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.), আমিরুল মুমিনীন হযরত উমর (রাযি.), হযরত উসমান (রাযি.), হযরত আলী (রাযি.) তথা খুলাফায়ে রাশেদা ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম তা পালন করতেন।
নবীজি (সা.)এর মরযে মউতের বর্ণনা
যে বছরের রবিউল আউয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইন্তিকাল করেছেন ঐ বছর সফর মাসের চতুর্থ বুধবার রাতে নিজ গোলাম মুআইহেবাকে জাগ্রত করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে হুকুম করেছেন যে, আমি যেন জান্নাতুল বাকীর অধিবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি । নবীজি রাতে জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করে ফিরে এলেন। অতঃপর হঠাৎ করে শরীরে অসুস্থতা অনুভব করলেন এবং গায়ে জ্বর আসলো। সেদিন পালা ছিলো উম্মুল মুমিনীন হযরত মায়মুনা’র (রাযি.) ঘরে বিশ্রাম নেওয়ার। যখন অসুস্থতা বেড়ে গেলো, তখন উম্মুহাতুল মুমিনীনদের সম্মতি সাপেক্ষে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ‘আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.)’এর ঘরে থাকেন। সেখানে ১৪/১৫ দিন অসুস্থ থাকার পর রবিউল আউয়াল মাসের ২য় সপ্তাহ সোমবার তিনি ইন্তিকাল করেন । (জুরকানী- ৮/২৫১)।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
ইতিহাস যাচাই করলে বুঝা যায় যে, সফরের শেষ বুধবার থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর অসুস্থতা শুরু হয়েছিলো। কাজেই যারা সেদিন আনন্দ উৎসব পালন করে তারা বিদআত করার সাথে সাথে প্রকারান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মরযে মউতের উপর খুশি পালন করে থাকে।
সাবধান মুসলিমগণ! এদিনে শয়তান নেকীর আদলে মুসলমানদেরকে কত বড় জঘন্য কর্মকান্ডে লিপ্ত করে দিচ্ছে।
আমাদের সকলের স্মরণ রাখা চাই যে, যেসব আকীদাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং অস্বীকার করেছেন সেসব আকীদা পোষণ করা গুনাহ এবং হারাম। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবী, তাবিইন, তাবে তাবিইনের মধ্যে কেউ কোন দিন ক্ষণ বা সময়কে অশুভ বলার কোন প্রমাণ নেই। এমনকি কোন নির্দিষ্ট দিন বা মাসে বিয়ে-শাদীকে অশুভ বলে তারা কখনও প্রকাশ করেননি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করে সে মোতাবেক আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক: মুফাসসির, মুহাদ্দিস, মুফতি এবং সহযোগী পরিচালক, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব- নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ