Home ইসলাম গুনাহগারদের পরিণতি

গুনাহগারদের পরিণতি

।। তরিকুল ইসলাম মুক্তার ।।

আল্লাহ রাব্বুলআলামীন দোযখ বানিয়েছেন তাঁর অবাধ্য বান্দাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য। এক হাদিসের ভাষ্য হচ্ছে, কেয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তায়ালা দোযখকে ডাকবেন তখন দোযখের লাগাম পরা থাকবে। ঊনিশজন ফেরেশতা এই লাগাম ধরে রাখবেন। লাগাম পরা ঘোড়া যেমন একটু পর পর সামনে বাড়তে চায়, তেমনি দোযখ যখনই গোনাহগারদের দেখবে তাদের ওপর চড়াও হতে চাইবে। রাগে গদগদ করতে করতে গোনাহগারের সামনে এসে নিঃশ্বাস ফেলবে। নিঃশ্বাসের প্রতিক্রিয়া এমন হবে, আগুনের স্ফূলিঙ্গ ছিটে পাপীদের মাথায় গিয়ে লাগবে। এতে তাদের ভিতরের সব কিছু উতলে বেরিয়ে আসতে চাইবে। এর পর দোযখ আল্লাহ তায়ালার সামনে সিজদায় পড়ে যাবে এবং মিনতি করবে- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আমাকে তার অবাধ্যবান্দাদেরকে শাস্তির জন্য বানিয়েছেন।

এরপর দোযখ বলবে, হে আল্লাহ! তোমার অবাধ্য বান্দা আজ আমার সামনে। আমাকে তো তুমি এজন্য সৃষ্টি করেছো। আজ আমাকে একটু অনুমতি দাও, আমি এই পাপীর কাছ থেকে বদলা নেই। এরপর দোযখ থেকে এমন এক করুণ সুর বেরিয়ে আসবে, মনে হবে যেনো আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে আসছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয় তা  (জাহান্নাম) ছড়াবে প্রাসাদসম স্ফুলিঙ্গ। তা যেনো হলুদ উট। (সূরা আল মুরসালাত)।

হাদিসে বলা হয়েছে, ওই সময় এমন কোনো নবী-রাসূল, ওলি-আওলিয়া নেই, যারা ভয়ে কাঁপতে থাকবে না। তাদের ভয় হবে, না জানি এ স্ফুলিঙ্গ কাদের ওপর এসে পড়ে।  সৎবান্দাদের অবস্থা যখন এই হবে, তখন গোনাহগারদের অবস্থা কী হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। অন্তর কাঁপতে থাকবে, চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার দেখতে থাকবে, প্রাণ গলায় চলে আসবে। তখন আপন বলতে কেউ থাকবে না। আত্মীয়তার পরিচয় দিতে কেউ সাহস করবে না। তখন পিতা ছেলেকে চিনবে না। ছেলে পিতাকে চিনবে না। মা তার সন্তানদেরকে পরিচয় দিবে না। ভাই তার ভাইয়ের পরিচয় দিবে না। প্রিয়জনেরা ওই দিন পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে। তবে খোদাভীরুরা ছাড়া।

জাহান্নামের কর্মকর্তাদেরকে আল্লাহ তাআলা বলবেন, জাহান্নামে কর্মরত হে ফেরেশতারা, তোমরা জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে এসো। তখন অবাধ্যদের শাস্তি দেয়ার জন্য নিয়োজিত ফেরেশতারা বেরিয়ে আসবেন।

হাদিসে আছে, প্রত্যেক ফেরেশতার হাতে জিঞ্জির থাকবে, বেড়ি থাকবে, আর কালো পোশাক থাকবে। এই তিনটি জিনিস নিয়ে তারা জাহান্নামিদের শাস্তির জন্য তৈরি হবে। জাহান্নামিদেরকে কালো পোশাক পরিয়ে গলায় বেড়ি জড়িয়ে জিঞ্জির দিয়ে বেঁধে টানতে থাকবে। টেনে হেঁচড়ে তাদেরকে নিয়ে চলবেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে , সেদিন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ।

আমরা জানি, কাউকে অপমান অপদস্থ করার জন্যই হাঁকিয়ে নেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা সেদিন জাহান্নামিদের অপমানিত করবেন।  ধমক দিতে দিতে তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতারা জাহান্নামের দিকে ছুটে চলবে।

জাহান্নামের গভীরতা কেমন হবে এ নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একবার একটি বিকট আওয়াজ শোনা গেলো। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কিসের আওয়াজ? রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেন, হয়তো কোন কিছুর আওয়াজ শোনা গেছে। এমন সময় হযরত জিবরাইল আলায়হিস সালাম এসে জানালেন, হে আল্লাহর রাসুল! আজ থেকে সত্তর বছর আগে জাহান্নামের উপর থেকে একটি পাথর নিছে ফেলানো হয়েছিলো। আজ সত্তর বছর পর এটা তলে গিয়ে পৌঁছেছে। জাহান্নামের গভীরতা এত দীর্ঘ যে, যা কখনো কল্পনা করা যায় না। আপনি কূয়োর কথা মাথায় রাখুন। যদি আশি ফুট কূয়োর নিছে কোন মানুষ যায়, তাহলে তাকে কেমন দেখাবে? আর জাহান্নামে সত্তর বছরের গভীরতায় মানুষকে নিয়ে জ্বালানো হবে।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, জাহান্নামের সাতটি দরজা থাকবে, প্রত্যেক দরোজায় একজন নিক্ষেপকারী থাকবে, যিনি জাহান্নামিদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (সূরা নিসা)।

জাহান্নামের ব্যপারে বলা হয়ে থাকে, এর সাতটি স্তর হবে, সাতটি তলা হবে। কেউ বলেন, সাতটি ইউনিট হবে। জাহান্নামের সবচেয়ে ওপরের যে তলা হবে- তাতে গোনাহগার মুমিনদের রাখা হবে। দ্বিতীয়স্তরকে বলা হয় “লিবা” যাতে ইহুদিরা যাবে। তৃতীয় স্তরের জাহান্নামে যাবে খ্রিষ্টানরা। চতুর্থ স্তরকে বলা হয় “সায়ির ” যাতে সাবিনরা (ইহুদি বা খ্রিস্টানদের একটি উপদল) যাবে। পঞ্চামস্তরকে বলা হয় “সকর”এতে যাবে আগুনপূজারীরা। ষষ্ঠস্তর হলো “জাহিম” এতে যাবে মুশরিকরা। আর সর্বনিকৃষ্ট জাহান্নাম হলো “হাবিয়া”, যাতে মুনাফিকরা যাবে।

আরও পড়তে পারেন-

কুরআনে বলা হয়েছে নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিকৃষ্ট জায়গায় থাকবে জাহান্নাম জাহান্নামিদের ওপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ থাকবে (সূরা আনআম)।

শেষে জাহান্নামিদেরকে জাহান্নামে দেওয়া হবে। সেখানে তারা প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব করবে। তারা খেতে চাইবে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে খেতে দিবেন জাক্কুম নামের একধরনের বিষাক্তগাছ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয় জাক্কুমগাছ পাপীদের খাবার, গলিত তামার মতো পেট গুলোতে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মত। (সূরা দুখান)।

কাঁটাযুক্ত এই গাছ এতোটাই তিতা হবে যে, ভেতরের নারী ভূড়ী সব বেরিয়ে আসবে। কাঁটা গিয়ে গলায় আটকে থাকবে, এদিক সেদিক যাবে না তখন তারা পিপাসার্ত হয়ে পানি চাইবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, যখন তারা পানি চাইবে তাদের পচন্ড গরম পানি দেওয়া হবে। পীপাসার তীব্রতায় তারা গরম পানিই খেতে থাকবে। গরম পানির প্রভাবে তাদের ভেতরের নাড়িভূড়ি সব গলে পায়খানার রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসবে। সেখানে পুঁজ মেশানো পানি পান করানো হবে। ঢোক গিলে তা পান করবে, আর তা গলার ভিতরে ঢুকবে না। তারা গরম পানি পান করার পর তা ফেলে দিতে চাইবে। কিন্তু তা আর সম্ভব হবে না, গরমের তীব্রতায় তাদের মুখের চামড়া খসে পড়ে যাবে।

মুফাসিরীনে কেরাম বলেন, জাহান্নামিদের রক্ত পুঁজ একজায়গায় জমা করে তাদেরকে  খেতে দেয়া হবে। দুনিয়াতে কারো শরীর থেকে পুঁজ বের হলে তা কতো দুর্গন্ধময় হয়। সে পুঁজই যখন তাদেরকে খেতে দেয়া হবে। তখন অবস্থা কতোই না ভয়াবহ হবে! কিন্তু পীপাসায় তারা এতোটাই কাতর হবে যে, এগুলো পান না করে ছাড়া পাবে না। এধরণের অসহনীয় শাস্তি জাহান্নামে দেয়া হবে।

তাই আমাদেরকে জাহান্নামের এ ভয়াবহ আজাব থেকে দূরে থাকতে হলে আল্লাহর দরবারে সঠিকভাবে তওবা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ভয়াবহ ও নির্মম জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। আমিন।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ-ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।