Home ইতিহাস ও জীবনী নববী চরিত্রের টুকরো টুকরো ঝলক

নববী চরিত্রের টুকরো টুকরো ঝলক

।। মুফতি ইসহাক ওমর কাসেমী ।।

বিখ্যাত তাবেঈ সাদ ইবনু হিশাম বলেন, আমি একদিন আম্মাজান আয়েশা (রাযি.)এর দরবারে উপস্থিত হলাম এবং বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাকে নবীজির চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন। নবীজির চরিত্র কেমন ছিল? আম্মাজান বললেন, নবীজির চরিত্র হলো কুরআন (মুসনাদে আহমদ, হাদীস- ২৫৮১৩) অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে উত্তম চরিত্র নিয়ে যত বর্ণনা আছে, নবীজি সব গুণেই গুণাম্বিত ছিলেন। কুরআনি চরিত্রের উজ্জল নমুনা ছিলেন নবীজি (সা.)। আলোচ্য নিবন্ধে নববী চরিত্রের কিছু অংশ তুলে ধরার প্রয়াস পাবো, ইনশাআল্লাহ।

নবীজির চরিত্র

নবীজি অধিকাংশ সময় চুপ থাকতেন। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেন না। আখেরাত নিয়ে চিন্তায় বিভোর থাকতেন। অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করতেন। নবীজির কথামালা হতো সুমিষ্ট এবং সাহিত্যে ভরপুর। কথার মধ্যে কোনো তিক্ততা পাওয়া যেত না। আলোচনা এতই চিত্তাকর্ষক হতো যে, শ্রোতার হৃদয় কেড়ে নিত। নবীজির এই গুণ সর্বজন স্বীকৃত ছিল। শত্রুরাও এর সাক্ষ্য দিত। মূর্খ দুশমনরা এটাকেই বলেছিল জাদু!

নবীজি যখন কারো সাথে আলাপ করতেন, তখন স্পষ্ট কণ্ঠে প্রতিটি শব্দ যথাযথভাবে উচ্চারণ করতেন। (অহংকারী লোকদের মতো অমনোযোগ ও অস্পষ্ট উচ্চারণে শব্দ প্রয়োগ করতেন না) আলোচনার পারস্পরিকতা এতই সু-শৃঙ্খল হতো যে, শব্দ এবং অর্থে কোনো প্রকারের ঘাটতি থাকতো না। শব্দগুলো পবিত্র মুখ থেকে এমনভাবে নিসৃত হতো যে, শ্রোতা চাইলে তা সহজেই গণনা করতে পারতেন। বিষয়বস্তু কঠিন হলে নবীজি এক কথাকে কয়েকবার বলতেন, যাতে করে সাহাবীগণ সহজে আয়ত্ত করতে পারেন। তিনি যেমন নিষ্প্রয়োজনীয় দীর্ঘ কথা পছন্দ করতেন না, তেমনি খুব সংক্ষেপ করাও পছন্দ করতেন না। (শামায়েলে তিরমিযী, রহমতুল লিলআলামীন- ১/২০৫)।

হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, নবীজি সব সময় নিজেকে অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ও কটূবাক্য থেকে দূরে রাখতেন। তিনি কখনো বাজারে গিয়ে উঁচু গলায় কথা বলতেন না। তিনি কখনোই মন্দ কাজের উত্তর মন্দ কাজ দিয়ে দিতেন না; বরং ক্ষমা করতেন এবং দয়া প্রদর্শন করতেন। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত তিনি কখনো কারো উপর হাত তুলেননি। কখনো কোনো খাদেম কিংবা কোনো স্ত্রীকে প্রহার করেননি। আল্লাহ তাআলার সাথে নবীজি ওয়াদা করেছেন, যদি আমি কোনো ব্যক্তির উপর অভিশাপ দিই, তা যেন তার জন্য গুনাহের কাফফারা এবং রহমত হয়।

আম্মাজান আয়েশা (রাযি.) বলেন, আমি কখনোই নবীজিকে কারো উপর যুলুম করতে কিংবা যুলুমের প্রতিশোধ নিতে দেখিনি। যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন হয়। আর কেউ আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করলে নবীজি তার উপর বেশি রাগন্বিত হতেন। (খাসায়েলে নববী, শামায়েল- ৪৮৩-৪৮৮)।

নবীজির হাসি-কান্না

নবীজি খিলখিলিয়ে (অট্টহাসি) হাসা পছন্দ করতেন না। তিনি সব সময় মুচকি হাসতেন। সালাতুত তাহাজ্জুদে নবীজি প্রায় সময় কান্না করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখির (রাযি.) বলেন, আমি একদিন নবীজির কাছে আসলাম। তখন নবীজি নামায আদায় করছিলেন। কান্নার কারণে নবীজির সীনা থেকে হেঁচকিয়ে (হাড়িতে পানি সেদ্ধ হওয়ার পর যে আওয়াজ বের হয়) আওয়াজ বের হচ্ছিল। (শামায়েল তিরমিযী)। কাছের কোনো ব্যক্তির মৃত্যুসংবাদ শুনলে নবীজির চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠতো।

শরম ও হায়া

সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাযি.) বলেন, নবীজি পর্দানশীন কুমারী মেয়ের চাইতেও বেশি লাজুক ছিলেন। নবীজির সামনে যদি এমন কোনো কথা বলা হতো, যা তিনি অপছন্দ করেন, তা চেহারা দেখেই বুঝা যেতো। আম্মাজান আয়েশা বলেন, কারো কোনো কাজ নবীজির পছন্দ না হলে তিনি নাম ধরে নিষেধ করতেন না; বরং সাধারণ আলাপের মাধ্যমে সেটা থেকে বিরত থাকতে বলতেন। (আশ-শিফা- ৪৮-৫২, আবু দাউদ, শামায়েল)।

রাত্রে খাবারের গুরুত্ব

রাত্রে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমানো থেকে নিষেধ করতেন। এটাকে বার্ধক্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করতেন। খাবার গ্রহণের সাথে সাথেই শুয়ে পড়তে নিষেধ করতেন। অল্প খাবারের প্রতি উৎসাহ দিতেন। তিনি বলেন, পাকস্থলির এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, আরেক তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ অক্সিজেনের জন্য ছেড়ে দেয়া উচিত। (যাদুল মাআদ- ২/৭-৮৭-৭৮)।

রোগীর সেবা

সাহাবিদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যেতেন। রোগীর পাশে বসে সান্ত্বনা দিতেন এবং অভয় দিয়ে বলতেন, সমস্যা নাই সুস্থ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। রোগীকে জিজ্ঞেস করতেন, কোনো কিছুর প্রতি তার আগ্রহ আছে কি না? উক্ত জিনিস তার জন্য ক্ষতিকারক না হলে তা ব্যবস্থা করে দিতেন। এক ইহুদি যুবক নবীজির খেদমতে উপস্থিত হতেন। একদিন সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবীজি তাকে দেখতে গেলেন।

অসুস্থ হলে চিকিৎসা করতেন। ঔষধ গ্রহণ করতেন। সকলকে চিকিৎসা গ্রহণের প্রতি উৎসাহ দিতেন। নবীজি বলতেন, হে আল্লাহর বান্দা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। কেননা, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রোগের সুস্থতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, শুধুমাত্র একটা রোগ ছাড়া। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেই রোগটা কী? নবীজি বললেন, বার্ধক্য। (রহমতুল লিলআলামীন- ১/২০৭ যাদুল মাআদ)।

শিশুর সঙ্গে নবীজি

রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সীমাহীন ব্যস্ততা সত্ত্বেও শিশুদের উপক্ষো করতেন না। তাদেরকে সময় দিতেন। আদর স্নেহ করতেন। শিশুদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলে তাদেরকে সালাম দিতেন। তাদের মাথার উপর হাত বুলাতেন এবং কোলে নিতেন। হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নিকট যখন বাগানের নতুন ফল নিয়ে আসা হতো, তিনি তা কবুল করতেন এবং বরকতের জন্য দুআ করতেন। এরপর উক্ত ফলগুলো আশেপাশে থাকা শিশুদের মধ্যে কাউকে দিয়ে দিতেন। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস- ৩৬২)।

আরও পড়তে পারেন-

সাহাবী ইয়ালা বিন র্মুরা (রাযি.) বর্ণনা করেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লার সাথে দাওয়াতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হুসাইন রাস্তায় খেলছিল। রাসূলুল্লাহ দ্রুত তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন এবং নিজের দু’হাতকে তার দিকে প্রশস্ত করে দিলেন। এদিকে হুসাইন একবার এদিকে যায় আরেকবার ওদিকে যায়। নবীজি তাঁর সাথে হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে তাকে ধরে ফেললেন। নবীজি তাঁর এক হাত হুসাইনের থুথনিতে আরেক হাত তার মাথায় রাখলেন। অতপর তার সাথে আলিঙ্গন করলেন এবং বললেন, ‘হুসাইন আমার, আমি হুসাইনের। হুসাইনকে যে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন’। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস- ৩৬৪)।

নবীজি শিশুদের সুন্দর নাম রাখতে বলতেন। এ কাজকে পিতামাতার অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে অভিহিত করতেন। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের পুত্র ইউসুফ (রাযি.) বলেন, নবীজি আমার নাম ইউসুফ রেখেছেন। আমাকে তাঁর কোলে বসিয়েছেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস- ৩৬৭)। নবীজি শিশুদেরকে জীবনের প্রতিটি শিষ্টাচার শেখাতেন। খাবারের পাতে সবার সঙ্গে কীভাবে খাবে সেটাও বলে দিতেন। একবার সৎ ছেলে আবু সালামাকে কিছুটা অমনোযোগী দেখলে নবীজি তাকে বলেন, হে বালক! যখন তুমি খেতে শুরু করবে, তখন অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবে। ডান হাত দিয়ে খাবে এবং নিজের সামনে থেকে খাবে। (সুনান আবি দাউদ, হাদীস- ৫১০৫)।

খাদেমের সাথে নবীজি

আনাস বিন মালেক (রাযি.) দশ বছর পর্যন্ত নবীজির খেদমত করেছেন। এই সময়ের মধ্যে কোনোদিন তাকে নবীজি বলেননি, এই কাজ কেন করেছ? এই কাজ কেন করনি? বরং একদিন তার ব্যাপারে দুআ করেছেন, হে আল্লাহ, তার সম্পদ এবং সন্তান বাড়িয়ে দিন এবং যা কিছু তাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন। (সহীহ বুখারী, হাদীস- ৬৩৭৮)।

শিষ্টাচার, বিনয় ও ক্ষমা

মজলিসে কোনো সময় তিনি পা লম্বা করে বসতেন না। কারো সাথে সাক্ষাত হলে প্রথমেই সালাম দিতেন। মুসাফাহার জন্য নিজেই প্রথমে হাত বাড়িয়ে দিতেন। সাহাবীগণের নাম ধরে ডাকতেন না; বরং তাদের উপনাম ধরে ডাকতেন। আলাপের মাঝে কারো কথা কাটতেন না। মনযোগ সহকারে শুনতেন। যদি নফল নামাযে রত থাকতেন এবং এসময় কোনো ব্যক্তি সাক্ষাতে আসলে নামায সংক্ষিপ্ত করতেন এবং তার প্রয়োজন পূরণ করতেন। অতঃপর পুনরায় নামাযে রত হয়ে পড়তেন। বেশিরভাগ সময় মুচকি হাসতেন। (আশ-শিফা- ৫৪)।

আম্মাজান আয়েশা (রাযি.) বলেন, নবীজি (সা.) নিজের জন্য কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। উহুদ যুদ্ধে কাফেররা নবীজির দাঁত শহীদ করে দিয়েছিল। মাথা ফেটে দিয়েছিল। এমনকি নবীজি একটা গর্তে পড়েও গিয়েছিলেন। তখন সাহাবাদের মধ্যে কেউ কেউ অনুরোধ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তাদের উপর বদ দুআ করুন। প্রতিউত্তরে নবীজি বললেন, আমি বদ-দুআ এবং অভিশাপ দেয়ার জন্য প্রেরিত হইনি। আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন মানুষকে তার পথে ডাকার জন্য। এরপর এই দুআ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমার জাতিকে হিদায়াত দিন। কারণ, তারা বুঝতেছে না। (আশ-শিফা, ৪৭)।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, উত্তম চরিত্রে নবীজির সমপর্যায়ের কেউ ছিল না। কোনো সাহাবি যদি নবীজিকে স্মরণ করতেন, কিংবা ঘরের কেউ যদি নবীজিকে ডাকতেন, উত্তরে নবীজি লাব্বাইক (উপস্থিত) বলতেন। নফল ইবাদত চুপে চুপে আদায় করতেন। যাতে করে উম্মতের উপর এত বেশি ইবাদাত ভারী না হয়ে যায়। যখন কোনো বিষয়ে দুটি পথ সামনে আসত, নবীজি সহজ পথটি গ্রহণ করতেন। যদি না তা গুনাহের কাজ হয়। আর যদি গুনাহের কাজ হয়, সেটা থেকে তিনি সবচেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস- ৩৫৬০)।

সাদকা-হাদিয়া

সাদকার কোনো জিনিস নবীজি ব্যবহার করতেন না। তবে হাদিয়া গ্রহণ করতেন। সাহাবায়ে কেরাম এবং ইহুদি-খ্রিস্টানরা কোনো হাদিয়া নিয়ে আসলে নবীজি তা গ্রহণ করতেন। নিজেও তাদের জন্য হাদিয়া পাঠাতেন। কিন্তু মুশরিকদের দেয়া হাদিয়া তিনি গ্রহণ করতেন না। মিসরের বাদশাহ মুকাওকিস নবীজির জন্য খচ্চর হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন। তিনি তা গ্রহণ করেছেন এবং তার উপর সাওয়ার হতেন। হুনাইন যুদ্ধে তিনি সেই খচ্চরের উপর সাওয়ার হয়েছিলেন। অন্যদিকে আমের বিন মালেকের পাঠানো ঘোড়া গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আমরা মুশরিকদের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করি না। (সহীহ বুখারী)। যে সকল মূল্যবান উপহার নবীজির দরবারে আসতো, তা তিনি প্রায় সময় সাহাবিদের মাঝে বণ্টন করে দিতেন।

নবীজির সাদামাটা জীবন

নবীজির ঘরোয়া জীবন নিতান্তই সাদামাটা ছিল। তিনি যখন ঘরে প্রবেশ করতেন, আট-দশজন মানুষের মতো খুবই স্বাভাবিক থাকতেন। ইমাম গাযালী (রহ.) বলেন, নবীজি জন্তুকে নিজেই দানা-পানি দিতেন। উট বাঁধতেন। ঘর পরিষ্কার করতেন। স্ত্রী এবং খাদেমদের কাজে সাহায্য করতেন। বকরির দুধ দোহন করতেন। খাদেমের সাথে বসে খাবার খেতেন। বাজারে গিয়ে নিজেই জিনিস ক্রয় করতেন। নিজেই তা উঠাতেন। ছোট-বড় সবাইকে নিজ থেকেই সালাম দিতেন। (রহমতুল লিলআলামীন- ১/২০৪)।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) চাটাইয়ের উপর ঘুমিয়েছিলেন। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর আমরা দেখলাম রাসূলুল্লাহর পিঠে চাটাইয়ের দাগ বসে গেছে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যদি আপনার জন্য একটা আরামের বিছানা বানাতাম! রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক! এই দুনিয়াতে আমি একজন মুসাফিরের মতো, যে গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে। অতঃপর গাছটি ছেড়ে চলে যায়। (সুনান তিরমিযী)।

হযরত উমর বর্ণনা করেন, আমি একদিন নবীজির ঘরে হাজির হলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন চাটাইয়ের উপর বিশ্রাম করছিলেন। নবীজির পবিত্র-শরীর আর চাটাইয়ের মাঝখানে অন্য কোন বিছানা ছিল না। নবীজির মাথার নিচে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি চামড়ার একটি বালিশ ছিল। পায়ের দিকে বাবলা-পাতার স্তুপ। মাথার দিকে কাঁচা চামড়া ঝুলে ছিল। হঠাৎ আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহর কোমরে চাটাইয়ের দাগ বসে গেছে!। এ অবস্থা দেখে আমি কেঁদে দিলাম। রাসূলুল্লাহ বললেন, উমর! তুমি কাঁদছো কেন? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কায়সার-কিসরারা দুনিয়ার সব আরাম-আয়েশ অর্জন করছে। অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন এতো কষ্টের জীবন-যাপন করছেন? নবীজি বললেন, হে উমর! তুমি কি রাজি নও! তাদের (কায়সার-কিসরা) জন্য দুনিয়ার অস্থায়ী আরাম-আয়েশ হবে। আর আমাদের জন্য হবে আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি! (সহীহ বুখারি, হাদীস-৪৯১৩)।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর উত্তম নমুনা”। (আহযাব- ৩৩)।

তিনি আরো ইরশাদ করেন, “যদি তোমরা তাঁর (নবীজির) অনুসরণ করো, তাহলে হিদায়াত প্রাপ্ত হবে”। (নূর- ৫৫)।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রাসূলুল্লাহর এই উত্তম নমুনার উপর চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: শিক্ষক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী এবং সহকারী সম্পাদক- মাসিক মুঈনুল ইসলাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।