Home সোশ্যাল মিডিয়া ইসলাম ও রাজনীতি

ইসলাম ও রাজনীতি

।। ইফতিখার জামিল ।।

আমাদের সময়ে ইসলাম প্রশ্নে বড় বিপদ দু’টি। কিছুদিন আগে নামকরা এক সালাফি আলেম বলছিলেন, ‘হুসাইন বিন আলি ছিলেন ‘মাথাগরম’ যুবক’ ; এসব বলে অনেকে হুসাইনের আদর্শ অস্বীকার করতে চান, ইসলামের রাজনৈতিক অংশটুকু ঢেকে ফেলতে চান। আবার অনেকে ইসলামকে বানিয়ে ফেলতে চান আগাগোড়া রাজনৈতিক মতাদর্শ ; তারা ইবনে ওমর-ইবনে আব্বাসের আদর্শকে ইসলাম মনে করেন না। আমাদের কাছে দুটোই সমান।

দেখুন, শিয়ারা অধিকাংশ সাহাবিদের কেন ‘গালিগালাজ’ করে জানেন? তারা মনে করে, যেহেতু রাজনীতি আকিদার অংশ, তাই রাজনীতিকে আপনার কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র না বানালে আপনি আর মুসলমান থাকছেন না। আর বিপরীতে আছে মুরজিয়া গোষ্ঠী, যারা মনে করে ঈমান তো ব্যক্তিগত বিষয়। সমাজে আগুন লাগলে আপনার কি আর করার আছে?

আমাদের সময়ে বামপন্থী রাজনৈতিক চিন্তা শিয়া-খারেজি চিন্তার সাথে তুলনাযোগ্য। বামপন্থী চিন্তায় আপনার ‘রাজনীতি’ পূর্ণ পবিত্র নয় মানেই আপনি শ্রেণীশত্রু, আপনি জালেমের সহযোগী, আপনাকে বিনাশ করতেই হবে। সেকুলার-লিবারেলরা হল মুরজিয়াদের সাথে তুলনাযোগ্য। সমাজে যাই হোক, এরা ধর্ম-ধার্মিকদের কোনভাবেই মেনে নিবে না। তাদের মতে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার ; যার প্রকৃত অর্থ হল ধর্ম-ধার্মিকরা থাকুক ঘরের মধ্যে, আর রাষ্ট্র কেবলমাত্র আমাদের ধর্মহীনদের।

আরও পড়তে পারেন-

আওয়ামীলীগের সাথে আমাদের বিরোধ রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক। তবে কৌশলগত কারণে আমি এই দু’টির মধ্যে পার্থক্য করা জরুরি মনে করি।

আপনি যদি মতাদর্শিক বিতর্কে মনোযোগী হন, আপনি দায়ী’-ওয়ায়েজ-খতিব-গবেষক, আপনি সরকারের আদর্শগত ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন, তবে আপনি রাজনৈতিক মোকাবেলা থেকে দূরে থাকাই ভালো। কেননা রাজনৈতিক মোকাবেলায় গেলে আপনি ধাক্কা সামলাতে পারবেন না, আপনাকে কেউই রক্ষা করবে না, আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে।

আপনি যদি রাজনৈতিক মোকাবেলায় মনযোগী হন, তবে মতাদর্শ থেকে-মতাদর্শিক আলোচনা থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। কেননা ইসলামি রাজনীতির ব্যর্থতার মূল কারণ তারা রাজনীতিকে মতাদর্শ বানিয়ে ফেলেছে। আদর্শগতভাবে আপনি সরকারি দল থেকে ভালো হতে পারেন, তবে রাজনীতি করতে হবে রাজনীতির শর্ত মেনেই। ইবনে খালদুন আমাদের দেখান, আধুনিককালের আগে অধিকাংশ ইসলামি আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে এ কারণেই : তারা মতাদর্শিক শক্তিকে রাজনৈতিক শক্তি-সামর্থ্য ভেবে বারবার ভুল করেছে।

রাজনৈতিক ইসলাম ও আলেমদের মধ্যে এ নিয়ে শীতল কোন্দল জারি আছে অনেকদিন ধরেই। রাজনৈতিক ইসলামের অভিযোগ আলেমরা কেন রাজনীতিতে আরও বেশী অংশ নিবেন না? ফজলুল হক আমিনি এর উত্তরে কিছুটা তাচ্ছিল্য করে বলেন, রাজনৈতিক ইসলামের সফলতা প্রধানত দাওয়াতেই, রাজনীতিতে কিছু শ্লোগানমূলক কথা ছাড়া তাদের বিশেষ সফলতা নেই। নিছক দাওয়াতের কথা আসলে সবপক্ষই চেষ্টা করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পক্ষের রাজনৈতিক সফলতা না থাকলে তাদের নিশ্চয় লজ্জিত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে আমাদের স্বার্থ নানামুখী, যারা আমাদের কাজকে নিছক রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক বানিয়ে ফেলতে চান, তারা হয়তো প্রতারক অথবা বোকা। বাংলাদেশে ‘অনির্বাচিত সরকার’ হটিয়ে দ্রুত বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা যেমন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য, একইসাথে যদি এই সরকার আরও দশ বছরও থাকে, তবু ইসলামি স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে হবে, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। ইয়াজিদের সাথে কারবালায় হুসাইন যুদ্ধে নেমেছেন, একইসময় অনেক শ্রদ্ধেয় সাহাবি যুদ্ধে যেতে নিষেধও করেছেন।
দুটোই আমাদের আদর্শ, সমানভাবে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।