Home ইসলাম সমাজ সংস্কারক নারী ইসলামী আইনবিদ

সমাজ সংস্কারক নারী ইসলামী আইনবিদ

।। মো. আবদুল মজিদ মোল্লা ।।

উম্মে জয়নব ফাতেমা বিনতে আব্বাস (রা.) ছিলেন হিজরি সপ্তম শতকের অন্যতম খ্যাতিমান মুফতি, ফকিহ, সুবক্তা ও মুসলিম পণ্ডিত। তাঁর গভীর জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের জন্য সমকালীন আলেমরা তাঁকে ‘সাইয়িদাতুন নিসা’ (শ্রেষ্ঠ নারী) উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর ছাত্রী। প্রথম জীবনে দামেস্কে অবস্থান করলেও শেষ জীবনে কায়রোতে চলে আসেন এবং সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

ফাতেমা বিনতে আব্বাসের জন্ম ও শৈশব সম্পর্কে জানা যায় না। তিনি পরিচিতি লাভ করেন শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর ছাত্রী হিসেবে। শিক্ষাজীবনে ইলমে ফিকহের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন এবং ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর কাছে ফিকহের পাঠ গ্রহণ করেন। তিনি অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গেই দরসে উপস্থিত হতেন এবং কোনো বিষয় অস্পষ্ট মনে হলে প্রশ্ন করতেন।

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তাঁর অধিক প্রশ্ন করা, দ্বিনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া, সুন্দর সুন্দর প্রশ্ন করা এবং যেকোনো জিনিস দ্রুত বুঝতে পারার প্রশংসা করতেন। ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণনা করেছেন, ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ফাতেমা বিনতে আব্বাসের মেধা, প্রতিভা ও জ্ঞানের প্রশংসা করতেন। ফিকহ শাস্ত্রের অন্যতম বৃহৎ গ্রন্থ আল্লামা ইবনে কুদামা রচিত ‘আল-মুগনি’-এর বেশির ভাগই তাঁর মুখস্থ ছিল।

আরও পড়তে পারেন-

ফাতেমা বিনতে আব্বাস (রহ.) ফিকহ শাস্ত্রের পাঠদান ও ফতোয়া প্রদান করা ছাড়াও নারীদের উপদেশ দিতেন। তাদের সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতেন। বিদআতি পীর ও সুফিদের বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। বিশেষত তৎকালীন শাম ও মিসরে ‘আহমদিয়া’ নামে একদল সুফি নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে বৈধ বলত এবং কোনো প্রকার পর্দা ছাড়াই নারীদের সঙ্গে একান্তে মিলিত হতো।

এসব সুফিরা বলত, মুরিদ নারী ও পুরুষরা ভাই-বোনের মতো। সুতরাং তাদের পর্দার প্রয়োজন নেই। ফাতেমা বিনতে আব্বাস (রহ.) এসব ভণ্ড সুফির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং মানুষকে সচেতন করেন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এ ক্ষেত্রে তিনি এমন অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন যা বহু পুরুষের ভাগ্যে জোটেনি।

সালাহ উদ্দিন সাফাদি (রহ.) তাঁর ওয়াজ বা উপদেশের প্রভাব সম্পর্কে বলেন, নারীরা আগ্রহভরে তাঁর উপদেশ শুনত, এতে তাদের মনের কষ্ট প্রশমিত হতো। তাঁর আলোচনা দ্বারা বিপুলসংখ্যক নারী উপকৃত হয়েছে। তাদের কঠিন অন্তর কোমল হয়েছে। তারা অতীতের জন্য অনুতপ্ত হয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পারদর্শী ও ঊর্ধ্ব আকাশের অভিযাত্রী।

হিজরি অষ্টম শতকের শুরুতে তিনি শাম থেকে মিসরে চলে আসেন। মিসরেই তিনি খ্যাতির শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করেন। বিশেষত শাহজাদি তিজকার খাতুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘রিবাত’-এর দায়িত্ব গ্রহণের পর। তৎকালীন যুগের রিবাতকে আধুনিক যুগের আশ্রয়কেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

যেখানে সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষগুলো আশ্রয় পেত। নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই রিবাতে অবস্থান করে ফাতেমা বিনতে আব্বাস (রহ.) নারীদের ধর্মীয় পাঠদান করতেন এবং তাদের চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতেন। কায়রোর অসংখ্য নারী রিবাতে তাঁর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসত।

ফাতেমা বিনতে আব্বাস (রহ.) আনুমানিক ৮৪ বা ৮৫ বছর বয়সে কায়রোর জাহির নামক এলাকায় ইন্তেকাল করেন। ইমাম জাহাবি, আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)-এর মতো সময়ের শ্রেষ্ঠ আলেমরা তাঁর জানাযায় অংশ নেন।

তথ্যসূত্র : ১০০০ ইসলাম ডটকম

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।