Home ইতিহাস ও জীবনী দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার ও জাতি গঠনে হাটহাজারী মাদ্রাসার অবদান ঈর্ষনীয়: মুফতি জসিমুদ্দীন

দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার ও জাতি গঠনে হাটহাজারী মাদ্রাসার অবদান ঈর্ষনীয়: মুফতি জসিমুদ্দীন

বয়ান করছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক মুহাদ্দিস মুফতি জসিমুদ্দীন।

[গত ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লক্ষাধিক উলামায়ে কেরাম, ফারেগীনে হাটহাজারী, তুলাবা ও সাধারণ ইসলামপ্রিয় জনতার বিশাল জমায়েত হয়। শুক্রবার দিনভর মাহফিলের আয়োজন থাকলেও ফারেগীনদের সংখ্যাধিক্যের কারণে দস্তারবন্দী সম্মেলন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মিলে দুই সেশনে অনুষ্ঠিত হয়।

জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর সহযোগী পরিচালক, বিশিষ্ট মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুফতি ও মুবাল্লিগে ইসলাম হযরত আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.) মাহফিলের দিন শুক্রবার সকাল ১২টায়, বিকেল ৩টায় ও বাদ ইশা জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, আদর্শ জাতি গঠনে সহযোগিতাসহ দ্বীনের বিভিন্ন অঙ্গনে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা ও অবদান এবং বহুমুখী ইসলামবিদ্বেষী ফিতনার মোকাবেলায় উলামায়ে কেরামের করণীয় বিষয়ে দিক-নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিন অংশে প্রদত্ত বয়ানকে একত্রিত করে পরিমার্জিত করে সুপ্রিয় পাঠক সমীপে নিম্নে উপস্থাপন করা হল। – সম্পাদক]

হামদ ও সালাতের পর…..
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কওমী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম এতদাঞ্চলে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের গোড়াপত্তন করে। এ খিদমতগুজারীর ইতিহাস অতি দীর্ঘ। তদানীন্তন বৃটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিকতা, তাহযীব-তামাদ্দুনের অবস্থা ছিল মুসলিম মিল্লাতের সম্পূর্ণ প্রতিকূলে। সমগ্র উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ, তাদের সমাজ জীবনে গজিয়ে উঠা শিরক-বিদ্আতের মূলোৎপাটন ও বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচারের কষাঘাত থেকে মুসলিম মিল্লাতকে পুনরুদ্ধারের জন্য ১৮৬৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দ।

ঠিক একই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়েই তথা ইসলামী তাহ্যীব-তামাদ্দুন ও শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, পরাধীনতার গ্লানীতে হতাশাগ্রস্ত, কুসংস্কার ও শিরক-বিদ্আতে অবগাহিত বাংলাদেশের মুসলিম মিল্লাতকে রক্ষার নিমিত্তে পূর্ব বাংলার বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার কয়েকজন খ্যাতনামা উলামায়ে কিরাম এদেশের মুসলমানদেরকে কুরআন-হাদীস ও ইসলামী শরীয়তের সহীহ ইলম শিক্ষাদান কল্পে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দের অনুকরণে দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রাহ.)এর নির্দেশে তাঁরই প্রিয় মুরীদ ও শাগরিদ শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী (রহ.) ১৩১৫ হিজরী সনে এই দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ মহৎ কাজে মাওলানা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী (রহ.) হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রহ.), হযরত মাওলানা সূফী আযীযুর রহমান (রহ.) ও হযরত মাওলানা আব্দুল হামীদ (রহ.)এর সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করেন। তাঁদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা ও পরামর্শ এবং সক্রিয় কর্মতৎপরতায় হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী (রহ.) বর্তমান স্থানে পূর্ণাঙ্গরূপে দারুল উলূম প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে সবার প্রাণপ্রিয় “বড় মৌলভী সাহেব” নামে খ্যাত, বানীয়ে দারুল উলূম হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী (রহ.) ও চার মুরুব্বী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আল-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী আজ ১২৯ বছরে উপনীত হয়ে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে প্রতিষ্ঠাতা মুরুব্বীগণের মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নে নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।

প্রিয় হাজেরানে মজলিশ, আপনারা জেনে নিশ্চয় খুশী হবেন যে, আপনাদের এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠান তথা দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারীকে কেন্দ্র করে এ দেশে হাজার হাজার দ্বীনি মাদ্রাসা, মক্তব, খানকা, মসজিদ, ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহর কালাম এবং আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদীস ও সুন্নাহর অসাধারণ প্রচার প্রসার হয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে এ প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার উলামায়ে কিরাম তৈরী হয়ে দেশ-বিদেশের আনাচে-কানাচে দ্বীনের বিভিন্ন পর্যায়ের খেদমতে নিয়োজিত আছেন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফারেগীনে দারুল উলূম হাটহাজারীর মধ্যে শিক্ষকতার খেদমতে আছেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার জন। বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন ৩৫০০ জন। ওয়াজের ময়দানে বয়ান করছেন ৩৫০০ জন। হাদীসের মসনদে দরস দিচ্ছেন ১৩ হাজার মুহাদ্দিস। মুফাসসির রয়েছেন ৫২০০ জন। দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার কাজ আঞ্জাম দিচ্ছেন ২৫ হাজার ৭০০ জন। ইমামতির দায়িত্বে আছেন ১০ হাজার জন। খতীবের দায়িত্বে আছেন ৫২০০ জন। ইসলামী রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন ৫২০০ জন। বিভিন্ন ফেরকায়ে বাতেলা তথা গোমরাহীর বিরুদ্ধে বিতার্কিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ১০২০ জন। বিবাহ রেজিস্টার তথা কাজীর দায়িত্ব পালন করছেন ২২০ জন। বড় ও মাঝারি ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন ৩৫০০ জন। এভাবে দেশ-জাতি ও ইসলামের খিদমতের জন্য যত ময়দান রয়েছে সব ময়দানেই এ প্রতিষ্ঠানের কৃতি ছাত্রগণ ছিলেন ও আছেন।

দারুল উলূম হাটহাজারীর শাখা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেটসহ সারা বাংলাদেশে হাজার হাজার মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। দারুল উলূম হাটহাজারী থেকে উত্তীর্ণ আলেমগণ দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, ওয়াজ-নসীহত, দাওয়াত ও তাবলীগ, বাইআত-তালক্বীনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার-প্রসারে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এর ফয়েয ও বরকত আজ এশিয়া মহাদেশ পেরিয়ে ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় কাঠামোর প্রায় সর্বস্তরে দারুল উলূমের অনেক ছাত্র জড়িত ও কর্মরত এবং সম্পৃক্ত রয়েছে। এটা আপনাদের জন্য এক গৌরবের বিষয়।

ক্বওম ও মুসলিম মিল্লাতের সকল প্রকার ধর্মীয় সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছেন দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রায় ৪ হাজার মুফতিয়ানে কিরামের বৃহৎ জামাত। ১৪০০ বছরেরও অধিককাল পূর্বের হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখে যাওয়া হাদীস শাস্ত্রকে যিন্দা করে রেখেছেন দারুল উলূমের মধু আহরণকারী হাজার হাজার ছাত্র ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম। প্রায় ৩৫০০ জন পীর-মাশায়েখ সৃষ্টি হয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী থেকে, যাঁরা শুধু এদেশ নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার তা’লীম-তালক্বীন, যিকর-শুগোলের মেহনত করছেন বিরামহীনভাবে। দাওয়াত ও তাবলীগের রাস্তায় প্রায় ১০ হাজার সদস্যের একদল দ্বীনের মুবাল্লিগ সৃষ্টি করেছে দারুল উলূম হাটহাজারী, যারা দাওয়াত-তাবলীগ ও মুজাহাদার ময়দানে খিদমতে রয়েছেন সদা নিয়োজিত।

প্রিয় উপস্থিত উলামায়ে কিরাম ও দেশবাসী ভাইয়েরা!

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিরোধী চক্র মুসলিম মিল্লাতকে পর্যুদস্ত করতে হাজারো ফাঁদ বিস্তার করে রেখেছে। ফলে কাদিয়ানী ফিতনা, বাহাঈ ফিতনা, বিদেশী সমর্থন মেধা ও সাহায্যপুষ্ট এনজিও ফিতনা, নাস্তিকতার ফিতনা, প্রগতির নামে স্বেচ্ছাচারিতার ফিতনা, বাতিল পীর ও কবরপূজার ফিতনা, আহলে হাদীস ও আহলে কুরআনের নামে আগে সূক্ষ্ম ফিতনা এবং পাশ্চাত্য তথা গোটা ইহুদী-খ্রীস্টান শক্তির বর্তমানে মুসলিম বিরোধী প্রকাশ্য আগ্রাসনসহ অগণিত ফিতনায় গোটা মুসলিম সমাজ আজ ভয়াবহ ও মারাত্মক হুমকীর মুখে চরম বিপন্ন বোধ করছেন।

এহেন নাজুক মুহূর্তে দারুল উলূম-হাটহাজারী প্রতি বছর বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উলামা, তুলাবা ও ফারেগীনদেরকে জমায়েত করেন এসব বাতিলের মোকাবেলায় কি পন্থা অবলম্বন করা যায়, সে বিষয়ে দেশ বরেণ্য মুরুব্বিয়ানে কিরাম ও মুসলিম নেতৃত্বের দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শের আলোকে সমগ্র আলেম সমাজ ও মুসলিম উম্মাহর করণীয় নির্ধারণের জন্য।

সম্মানিত হাজেরীনে মজলিশ!

আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কালামে ইরশাদ করেছেন-

لَقَدۡ مَنَّ اللّٰهُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ بَعَثَ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡ اَنۡفُسِهِمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ۚ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ

অর্থাৎ- “আল্লাহ্ ঈমানদারগণের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্যে থেকে নবী পাঠিয়েছেন, তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট”। (সূরা আলে ইমরান, ১৬৪)।

কুরআন মাজীদের উক্ত আয়াত হতে বুঝা যায় যে, মানুষের হিদায়াতের জন্য ভাষাজ্ঞান ও পুঁথিগত বিদ্যাই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট হলে নবী-রাসূল প্রেরণের আবশ্যকতা ছিল না। বরং আসমান থেকে কিতাব নাযিল করে এবং “এ কিতাব মতে তোমরা ঈমান-আমল ঠিক করে নাও” ঘোষণা দিলেই হত। কিন্তু তার পরিবর্তে আল্লাহ্ তাআলা কিতাবের সাথে এমন এক রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি সকলের জন্য উত্তম আদর্শ। নবীর অবর্তমানে আলেমগণই তাঁর উত্তরাধিকারী। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সাহাবায়ে কিরাম যেরূপ জান-মাল ত্যাগ করে পালনের চেষ্টা চালিয়েছেন, তদ্রুপ আমাদের উলামায়ে আকাবিরীন নবীর উত্তরসূরী হিসেবে উক্ত দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োজিত ছিলেন।

এতদুদ্দেশ্যেই আমাদের মুহতারাম মুরুব্বীগণ দারুল উলূম হাটহাজারী’র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশুদ্ধরূপে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন মুরুব্বীদের আপ্রাণ চেষ্টার ফলে বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জে, শহরে সর্বত্র পবিত্র কুরআন শিক্ষার অনেক আদর্শ মক্তব দেখা যায়। দারুল উলূমের পৃষ্ঠপোষকতায় নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজার নূরানী মাদ্রাসায় আজ বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াতের যে চর্চা হচ্ছে, ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান দিয়ে শিশুদেরকে গড়ে তোলা হচ্ছে, এটা এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম অবদান।

এতদাঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর তাযকিয়ায়ে নফস বা আত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে দারুল উলূম হাটহাজারীর মুরুব্বীগণ অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেন। হযরত মাওলানা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী (রহ.) ও হযরত মাওলানা ফযলে রহমান গঞ্জেমুরাদাবাদী (রহ.)এর খলীফা হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রহ.), ফক্বীহুল উম্মত হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী (রহ.)এর খলীফা হযরত মাওলানা যমীরুদ্দীন (রাহ্.), শাইখুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান (রহ.)এর খলীফা হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ সন্দ্বীপী (রাহ্.), হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)এর খলীফা হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহ.), হযরত মাওলানা সাঈদ আহ্মদ সন্দ্বীপী (রহ.)এর খলীফা হযরত মাওলানা মুফতি ফয়যুল্লাহ (রহ.), হযরত মুফতিয়ে আযম (রহ.)এর খলীফা হযরত মাওলানা হামেদ (রহ.), হযরত মাওলানা যমীরুদ্দীন (রহ.)এর খলীফা শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম (রহ.) ও হযরত মাওলানা হাফিজুর রহমান পীর সাহেব (রহ.), হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) ও হযরত মিয়া আছগর হুসাইন (রহ.)এর খলীফা হযরত মাওলানা মুফতি আহমাদুল হক সাহেব (রহ.), হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহ.)এর খলীফা শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল আযীয (রহ.), শায়খুল আরব ওয়াল আজম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)এর অন্যতম বিশিষ্ট খলীফা শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রমুখ মনীষীগণের সিলসিলার মাধ্যমে তাযকিয়ায়ে নফস্ বা আত্মশুদ্ধির যে অসাধারণ খিদমাত সাধিত হয়ে আসছে। তাঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাজার হাজার খলীফা ও মুরীদগণ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলাহ্ ও তালক্বীনের খিদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন।

পবিত্র কুরআন-হাদীসের শিক্ষা ও হিকমতের তা’লীম-এর ব্যাপারে দারুল উলূম হাটহাজারীর আকাবিরগণ দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং নিজেরাও ব্যাপকভাবে এতে অংশগ্রহণ করেন। ফলে বাংলাদেশ, আসাম, বার্মার বহুস্থানে হাজার হাজার দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র তথা মাদ্রাসা আজ গড়ে উঠেছে।

পূর্ণাঙ্গরূপে হাদীস শিক্ষার ব্যাপারে দারুল উলূম হাটহাজারীর অবদান অতুলনীয়। বাংলাদেশ, বার্মা, আসাম, কলিকাতা অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নিয়মিতভাবে সিহাহ্ সিত্তাহ্ তথা প্রামাণ্য ছয় হাদীস গ্রন্থসহ হাদীসের অপরাপর নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলী শিক্ষাদান তথা দাওরায়ে হাদীসের শিক্ষা ১৯০৮ ইংরেজী/১৩২৬ হিজরী সনে দারুল উলূম হাটহাজারীতেই প্রথম আরম্ভ করা হয়। আজ দারুল উলূম হাটহাজারীর অনুকরণে এতদাঞ্চলের শত শত মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদীসের দরস চালু রয়েছে।

উপস্থিত সূধীবৃন্দ!

দারুল উলূম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই বুযুর্গানে দ্বীন বিভিন্ন এলাকায় “আঞ্জুমানে এশাআতে ইসলাম”, “আঞ্জুমানে হেমায়েতে ইসলাম”, “ইসলাহুয যমীর” প্রভৃতি বহু সংখ্যক আঞ্জুমান প্রতিষ্ঠা করেন। এ আঞ্জুমানগুলোর মাধ্যমে তাঁরা সমাজের সর্বস্তরে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের সর্বস্তর থেকে সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ, শরীয়ত বিরোধী রেওয়াজ, শিরক-বিদ্আত দূর করার প্রচেষ্টা চালাতেন। আঞ্জুমানগুলোর মাধ্যমে বহু নতুন মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে এবং বহু ইসলামী সভা-সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। শত বছর ব্যাপী এই দ্বীনি সভা সম্মেলন দ্বারা দ্বীন ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার হয়েছে ও হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন-

দারুল উলূম হাটহাজারী’র পৃষ্ঠপোষক, মুরুব্বী, শিক্ষক এবং এখান থেকে উত্তীর্ণ আলেম সমাজ আরবী, উর্দু, ফার্সী, বাংলা প্রভৃতি ভাষায় বহু সংখ্যক দ্বীনি কিতাবাদী রচনা করেছেন। বহু ইসলামী পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী প্রকাশ করেছেন। বৃটিশ আমলেই হযরত মাওলানা যমীরুদ্দীন (রাহ্.) ও হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রাহ.)এর পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ইসলাম প্রচার’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পাকিস্তান আমলে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ নামে পত্রিকাটির পুনঃ প্রকাশনা শুরু হয়। বর্তমানে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। কুরআন-হাদীস ও ইসলামী শরীয়তের আলোকে ধর্মীয় বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান দেয়া ছাড়াও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণাধর্মী নানা বিষয়ের সমন্বয়ে প্রকাশিত পত্রিকাটি দেশ-বিদেশের পাঠক সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে।

আল্লাহর অপার রহমতে আজ দারুল উলূম হাটহাজারী থেকে উত্তীর্ণ আলেমগণ দেশের বহু সংখ্যক দ্বীনি পত্রিকার সম্পাদক ও লেখক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তাঁরা বাংলা ইসলামী সাহিত্যেও বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের তাফসীর, হাদীসের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা ছাড়াও তাঁরা বহু সংখ্যক ইসলামী সাহিত্য রচনা করেছেন, বর্তমানেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।

দারুল উলূম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দারুল উলূম দেওবন্দের বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বীন ইসলামকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে। তারই অনুকরণে দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রতিষ্ঠাতা মুরুব্বীগণ তাই প্রথম থেকেই দ্বীন ইসলামকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন। দারুল উলূম হাটহাজারীর  বহু মুরুব্বী, শিক্ষক, ছাত্র, ফুযালা বিবিধ কার্যক্রমে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে গিয়ে শারীরিক মানসিক এবং কারা নির্যাতনসহ সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন।

প্রিয় উপস্থিত!

একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব পরিস্থিতি বিগত শতাব্দীর চেয়েও অনেক অনেক বেশী নাজুক বলে মনে হচ্ছে। মুসলিম বিশ্ব আজ ইসলাম নির্মূলবাদী চক্রের প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের শিকার। ইসলাম বিরোধী সকল অপশক্তি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্কে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে আজ প্রকাশ্যভাবেই। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের আজ যে সমস্যা ও হুমকীর সৃষ্টি হয়েছে, তার একমাত্র কারণ হলো পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ থেকে দরে সরে যাওয়া। ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন সুন্নাহর আদর্শের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী যদি আমরা হতে পারি, তবে মুসলিম উম্মাহর সকল সমস্যারই সমাধান হওয়া কঠিন কিছু নয়। পৃথিবীতে মুসলমানরা অপারেজয় শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারবে, ইন্শাআল্লাহ্।

বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামী আদর্শে গড়ে তুলতে এবং শিক্ষা ও সেবার ক্ষেত্রে বৈদেশিক চক্রান্তমুক্ত করতে আমরা কি ভূমিকা রাখতে পারি সে ব্যাপারে আপনাদের খিদমতে প্রস্তাব আকারে কতিপয় বিষয় পেশ করছি। আশা করি প্রস্তাবনাগুলো পর্যালোচনা করে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণে সচেষ্ট হবেন।

এ পর্যায়ে সর্বাগ্রে আমাদেরকে তাওহীদে খালেস ও সুন্নাতে রাসূলের আলোকে আমাদের গোটা জীবন ব্যবস্থার পূনর্গঠন করতে হবে। জীবনের প্রতিটি স্তর থেকে র্শিক-বিদ্আত, শরীয়ত বিরোধী আচার-অনুষ্ঠান উৎখাত করা এবং সর্বস্তরে নির্ভেজাল তাওহীদ ও সুন্নাতে রাসূলের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা একান্ত অপরিহার্য। কেননা দারুল উলূম হাটহাজারী ও তার অনুকরণে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাসমূহ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই হচ্ছে- (ক) আক্বীদায়ে তাওহীদে খালেস (খ) ইত্তিবায়ে সুন্নাত (গ) তাআল্লুক মাআল্লাহ্ (ঘ) ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ। (ঙ) শিরক, বিদআতসহ সকল কুসংস্কার উৎখাত করা।

বিশ্বব্যাপী দ্বীন সম্পর্কে আজ অনেক বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা ধারণার প্রচারণা চলছে। দ্বীনের সার্বিক ও পূর্ণাঙ্গ রূপ জাতির ও বিশ্ববাসীর সামনে সহজ ভাষায় পেশ করা খুবই জরুরী। দেশের বাংলা ভাষাভাষী জনতার কাছে সহজ সরল বাংলা ভাষায় দ্বীনের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গরূপ ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে। আমাদের আকাবির বুযুর্গগণ বাংলা ভাষা ছাড়াও আরবী, উর্দু, ফার্সী প্রভৃতি ভাষায় এ বিষয়ে বহু বই-পুস্তক লিখে গেছেন। এসবের বঙ্গানুবাদ সমাজের সম্মুখে তুলে ধরা যেতে পারে। আরবী, ইংরেজীসহ বিশ্বের বহুল প্রচলিত অন্যান্য ভাষায়ও পর্যাপ্ত বই পুস্তক রচনার প্রতি আমাদের বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি। আজ আমাদের দেশের সীমান্ত অঞ্চলের বহু উপজাতিকে খ্রিষ্টান মিশনারীরা ধর্মান্তরিত করছে। দেশের সীমান্ত এলাকার উপজাতিসহ অন্যান্য বহু মানুষকে ইতিমধ্যেই খ্রীস্টান বানিয়ে নিয়েছে। এটা জাতির জন্য ভবিষ্যতে একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। তাই এখন থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার। পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে ইসলামের প্রকৃত রূপ জনসমক্ষে তুলে ধরার লক্ষ্যে শিশু-কিশোরদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রত্যেক গ্রামে নূরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও মাতৃভাষাসহ দ্বীনি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করা জরুরী। এতে করে বিজাতীয় এনজিওরা ঢালাওভাবে শিক্ষার নামে কোমলমতি মুসলিম শিশুদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী করে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে না। নাস্তিক্যবাদিরাও সাধারণ মানুষকে গোমরাহ করতে পারবে না।

প্রিয় হাজেরীনে মজলিশ!

নুবুওয়্যাতের সোনালী যুগ থেকে মুসলিম মিল্লাত যতই দূরবর্তী হচ্ছে ততই জীবনযাত্রার প্রতিটি ধাপে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। কোন ব্যক্তি বিশেষের পক্ষে এককভাবে এগুলোর সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়া জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মুসলিম মিল্লাতের দৈনন্দিন জীবনের নানা জটিল সমস্যার ইসলামী সমাধান প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রতিটি থানায় ‘দারুল ইফতা’ কায়েম করা একান্ত জরুরি।

আল্হামদুলিল্লাহ, দারুল উলূম হাটহাজারীর মুফতিয়ানে কেরামের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সফল প্রচেষ্টায় “ফাত্ওয়ায়ে দারুল উলূম হাটহাজারী” এবং বাংলা ভাষায় “দরুসুল ফিকাহ” ও “ফতোয়ায়ে মুঈনুল ইসলাম” প্রকাশিত হয়েছে। এসব মূল্যবান ফাতওয়া গ্রন্থসমূহ মুসলিম উম্মাহর দৈনন্দিন শরয়ী সমস্যার সমাধানে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হবে, ইনশাআল্লাহ্। এছাড়াও দারুল উলূম হাটহাজারী থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত “মাসিক মুঈনুল ইসলাম” পত্রিকায় প্রতি মাসে পাঠকদের পাঠানো জটিল জটিল সমস্যার ফাত্ওয়া আকারে সমাধান দেওয়া হচ্ছে। যা দেশ-বিদেশের পাঠক মহলে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে।

প্রাণ প্রিয় ফুযালা ও তুলাবায়ে দারুল উলূম!

আল্লাহ্ তাআলা বিশ্ববাসীর জন্য তাঁর মনোনীত দ্বীন হিসেবে একমাত্র ইসলামকেই নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহর মনোনীত এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা এবং এর প্রচার-প্রসারের জন্য আখেরী যামানায় আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় হাবীব হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনোনীত করে পাঠিয়েছেন। নুবুওয়্যাতী যিন্দেগীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার তরে কঠোর দায়িত্ব পালন শেষে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের মাঝ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় নিয়েছেন। দ্বীনের উপর চলার ক্ষেত্রে আখেরী যামানার উম্মতকে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি ও ফিত্না-ফাসাদ মুকাবেলা করে চলতে হবে বিধায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গেছেন তাঁর প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী হিসেবে হযরাত উলামায়ে কিরামের জামাআতকে।

সুতরাং আখেরী নবী হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.)এর নায়েব আপনারা এবং ইলমে নববীর প্রতিনিধিত্বের গুরুদায়িত্ব আপনাদের স্কন্ধেই ন্যস্ত। তাই খুবই সাবধানে আপনাদের নিজেদেরকে সমাজে প্রচলিত সর্বপ্রকার ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বাঁচিয়ে ইল্মে নববীর উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় নূর দ্বারা আলোকিত করতে হবে। আখ্লাক-চরিত্র ও কথা-বার্তায় রাসূলের পূর্ণ অনুসরণই হবে দায়িত্ব পালনে বড় সফলতা। যেরূপ ইখলাস ও তারবিয়্যাতের সাথে আপনারা ইলম হাসিল করেছেন, কর্মময় জীবনেও দৃঢ়-অবিচলভাবে তা বজায় রাখতে সদা সচেষ্ট থাকবেন। আপনারা অবশ্যই হক্ প্রতিষ্ঠায় বিদ্আত ও তাগুতের বিরুদ্ধে আমরণ লড়াই করে যাবেন। আপনাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ্ এমনই এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যখন ইসলামের চিরশত্রু ইহুদী-নাসারা ও তাদের দোসররা সমগ্র বিশ্ব থেকে ইসলামের উত্থানকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার হীন লক্ষ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করেছে। নানামুুখী কুফ্রী শক্তির হয়রানির মুখে মুসলিম জাতি আজ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

সুতরাং মুসলিম জাতির এ দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আপনাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সকল তাগুতি শক্তির মুকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে শরীয়তের প্রতিটি হুকুম-আহ্কাম এবং যাবতীয় মুয়ামালা-মুয়াশারার মধ্যে আল্লাহর আদেশ ও প্রকৃত সুন্নাতের বাস্তব অনুসরণ সম্পূর্ণভাবে লোপ পেতে চলেছে। যার ফলে বিজাতিদের হাতে মুসলিম জাতি আজ নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে নায়েবে নবী হিসেবে খালেস নিয়্যাতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে  ইহ্ইয়ায়ে সুন্নাত ও ইমাতাতে বিদ্আত করতঃ সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্য নিয়েই আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।

ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।