Home ইতিহাস ও জীবনী হুইল চেয়ার ছিল যাঁর সিংহাসন!

হুইল চেয়ার ছিল যাঁর সিংহাসন!

।। মুফতি জাবের কাসেমী ।।

আজ ১৩ ডিসেম্বর। আব্বাজান আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী রহঃ এর চলে যাওয়ার দু’বছর পূর্ণ হচ্ছে। সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে ততই আব্বাজান রহঃ এর শুন্যতা তীব্রভাবে অনুভব হচ্ছে। কারণ দ্বীন ইসলামের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে ছিল আপনার সরব বিচরণ। তালিমের ময়দানে ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর।

তাযকিয়ার ময়দানে ছিলেন ধী সম্পন্ন শাহ্ সাওয়ার।সিয়াসতের ময়দানে ছিলেন বীর সিপাহসালার।দাওয়াত ও তাবলীগের ময়দানে ছিলেন দরদী রাহবার।এজন্য সব মত ও পথের চোরাগলি ছিল আপনার সিদ্ধ হস্ত ।আপনার জীবদ্দশায় আপনার কাজের পরিধি নিয়ে অনেকেই ছিল ঈর্ষাপরায়ণ।

কিন্তু এতে কখনো আপনাকে পেরেশান হতে দেখা যায় নি। রাত -বিরাত নিজের আরাম,আয়েশ কোরবানি করে কাজ করে গেছেন উম্মতের কল্যাণে। সবসময় বলেছেন,কাজ কি করলাম না করলাম সেটা বড় বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হলো ইখলাসের সাথে কতটুকু করতে পারলাম। পরিণামে আপনার বিয়োগে তারা আজ আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আপনি সর্বদা প্রিয় মাতৃভূমি নিয়ে সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত ছিলেন। এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে পেরেশান ছিলেন। সব সময় ওলামায়ে কেরামকে সতর্ক করেছেন এই বলে যে,” যদি আমরা সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ভাবে শক্তি অর্জন না করি তাহলে এদেশের মসজিদ,মাদ্রাসা, খানকাহ ও তাবলীগ কিছুই নিরাপদ থাকবে না ।

আজ আমরা ঠিক বিপদের সেই অশনি সংকেত শুনতে পাচ্ছি । জাতীয় শিক্ষা সিলেবাস পরিবর্তন হয়ে গেছে । ধর্মীয় শিক্ষা ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। আলেম-ওলামা বন্দি হয়ে আছে। সবাই নিরব হয়ে আছে। এক থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার থেকে উত্তরণের যেন কোন পথ নেই।

আরও পড়তে পারেন-

অথচ বারবার বলেছেন,” যতদিন এদেশের ওলামায়ে কেরাম দারুল উলুম দেওবন্দকে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ না বানাবে ততদিন তারা সফলতা অর্জন করতে পারবে না”।

এজন্য প্রয়োজন ফিকরে ওয়ালিউল্লাহীর সাথে পরিচিত হওয়ার। শাইখুল হিন্দের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার সাথে পরিচিত হওয়ার।শাইখুল ইসলাম মাদানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির এর মুজাহাদার সাথে পরিচি হওয়ার। হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহমাতুল্লাহ আলাইহির রচনাবলী সাথে পরিচিত হওয়ার।

শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহঃ এর ইলমী ইনহেমাক এর সাথে পরিচিত হওয়ার।বারবার তালিবুল ইলমদের বলেছেন, বেটারা! “নিজেকে গড় তাহলে অন্যকে গড়তে পারবে”।”সফলতার জন্য সাধনার কোন বিকল্প নেই”।

জীবন সয়াহ্নে হাসপাতালে শুয়ে আফসোস করেছেন, আহ্! দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে যে চিন্তা চেতনা নিয়ে আসলাম সে অনুযায়ী কাজ পূর্ণ করতে পারলাম না। এখন যখন সুযোগ হলো তখন আর শরীর সায় দিচ্ছে না।অথচ যখনি দ্বীনের যে তাকাযা সামনে এসেছে আপনি ওই অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসে জাতির নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। কোন হুমকি ধমকি ও লোভ আপনাকে কাবু করতে পারেনি।সর্বশেষ হাসপাতালে শুয়ে ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সবাই বিশ্রামের কথা বললে ও আপনি বলেছেন ” দুনিয়া বিশ্রামের জায়গা নয় বিশ্রাম তো হবে কবরে। আজ আপনি কবরের জগতে। আমরা আশাবাদী নিশ্চয়ই সেখানে মাওলা পাকের ফযলে করমে ভালো আছেন। আল্লাহ পাক আপনার ফয়য ও বরকত দ্বারা আমাদেরকে মালামাল করুন।

কোরআন সুন্নাহর আলো কে যে আদর্শ আপনি রেখে গেছেন এবং যে পথ আমাদেরকে দেখিয়ে গেছে সে আলোকে কাজ করে যাচ্ছে আপনার রেখে যাওয়া সন্তান, রুহানি সন্তান, শাগরিদ,মুরিদ ও মুহিব্বীনগণ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

কাকতালীয় ব্যাপার!

(ক) ১ডিসেম্বর হযরত রহঃ কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তেরদিনের মাথায় জোহরের সময়ে হযরত রহঃ ইন্তেকাল করেছেন। যা কাকতালীয় ভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মিলে যায়। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তের দিন অসুস্থ থেকে জোহরের সময়ে ইন্তেকাল করেন।

(খ) হযরতের ইন্তেকালের আরবি হিজরী সন ছিল ১৪৪২। যার আরবি অক্ষরের মান হিসেবে আসে ১৪৪২। আরবি হরফগুলো একত্রিত করলে হযরতের উপাধি আসে فخر ملت محمد (ফখরে মিল্লাতে মুহাম্মদ )।

প্রিয় ভাই! আজ আমি আপনাদের কাছে হযরতের জন্য দোয়া চাই। আসুন! ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে একবার সূরা ফাতিহা ও তিন বার সূরা ইখলাস পাঠ করি। আল্লাহ পাক আমাদের তাওফিক দান করুন। হযরতের রেখে যাওয়া মিশন ও ভিশন নিয়ে আমাদের কাজ করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ পাক হযরতের কবরকে আলোকিত করুন। দরজাতকে বুলন্দ করুন।

পরিশেষে শুধু বলবো, “তামুতূনা কামা তাহয়ূন ওয়া তুহশারুনা কামা তামুতূন”। আমিন।

লেখক: সাহেবজাদা, আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী (রহ.) এবং মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।