Home ইসলাম বন্দি আলেমদের মুক্তি দিন, দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণেই হেফাজত কথা বলে: আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

বন্দি আলেমদের মুক্তি দিন, দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণেই হেফাজত কথা বলে: আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

- আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন।

সকল বন্দি আলেমের মুক্তি এবং ইসলামসম্মতভাবে দেশ পরিচালনার আহবান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক মুবাল্লিগে ইসলাম আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন।

গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) শনিবার রাজধানী ঢাকার কাজী বশির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মুফতি জসিম উদ্দীন বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণের লক্ষ্যেই অরাজনৈতিক প্লাটফরম থেকে কাজ করে আসছে।আর এই কল্যাণকামিতার লক্ষ্যেই হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে এই ১৩ দফা দাবি পুরণের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে বার বার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। হেফাজতে ইসলামের এই ১৩ দফার সবগুলোই ঈমান-আক্বিদার স্বার্থে এবং দেশের শান্তি ও কল্যাণের স্বার্থে। তাই এসব দাবি পুরণে সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীকে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করে যেতে হবে।

তিনি বলেন, আজকের এই ওলামা সম্মেলন থেকে আবারো আমাদের সকলে এই প্রতিশ্রুতিব্ধ হই যে, আমাদের মুরুব্বী, উস্তাদ, মুরশিদ শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)এর নির্দেশনা, শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.)এর প্রেরণা, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.)এর বুদ্ধিমত্তা এবং হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী (রহ.)সহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় উলামা হযরতগণ যে প্রেরণা ও চেতনা নিয়ে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই হেফাজতে ইসলামকে এগিয়ে নিতে প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়নে ও গ্রামে কমিটি গঠনের মাধ্যমে ঈমান-আক্বিদার ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ অব্যাহত রাখবো।

দেশের নীতি-নির্ধারকদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, ২০১৩ সালের পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে অনেক আলেম-উলামাকে জেলে বন্দি রেখেছেন। আপনারা শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)এর সাথে ওয়াদা করেছিলেন, ২০১৩ সালে আলেম-উলামার নামে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করবেন, কাদিয়ানীদেরকে অতি সত্ত্বর অমুসলিম ঘোষণা করবেন এবং ধর্মের নাম-পদবি ব্যবহার করে শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের মধ্যে অশান্তি তৈরি করে এমন কাউকে দেশে আসতে দিবেন না। আজ এই মজলিস থেকে আমি সরকারের নীতিনির্ধারকদেরকে পূর্বের এসব কৃত ওয়াদা স্মরণ করিয়ে অতি দ্রুত এসব বাস্তবায়নের উদাত্ত্ব আহ্বান জানাই। পাশাপাশি সকল বন্দি আলেমের মুক্তির দাবি জানাই।

তিনি আরো বলেন, অনেক আলেম-উলামা দীর্ঘ দিন ধরে জেলে বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। দীর্ঘ দিন না দেখার কারণে অনেক বন্দি আলেমের শিশু সন্তানরা তাদের পিতার চেহারা ভুলে গেছে। বন্দি পিতারা তাদের শিশু সন্তানদের চেহারা মনে করতে পারছেন না। অনেক বন্দি আলেমের বৃদ্ধ পিতা-মাতারা সন্তানের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হওয়ার পথে। দয়া করে এসব আলেম-উলামাদেরকে মুক্তি দিন। মজলুমের ‘আহ’কে ভয় করুন।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, বন্দি আলেম-উলামাদেরকে মুক্তি দিতে দীর্ঘ দিন ধরে মুরুব্বী আলেমগণ সরকারের কাছে দাবি ও অনুরোধ জানিয়ে আসছেন। অবশ্য ধাপে ধাপে অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আরো অনেকে এখনো জেলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দয়া করে অবশিষ্ট বন্দি আলেমদেরকেও ছেড়ে দিন।

সরকারের প্রতি উদ্দেশ্য করে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, আলেম-উলামাদেরকে আপনারা শত্রু মনে করবেন না। বরং আলেম-উলামা আপনাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের চিন্তা থেকেই কথা বলেন, উপদেশ দেন এবং দাবি-দাওয়া পেশ করেন।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, দেখুন- বায়তুল্লাহ শরীফের উপর আবরাহা বাদশাহ শক্তিশালী বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে হামলা করতে যায়। তখন বাইতুল্লাহর তত্ত্বাবধায়কসহ মক্কার কেউ আবরাহাকে বাধা দিতে সাহস করেনি। সবাই চুপচাপ দেখছিল। তখন আল্লাহ তাআলা আবিবলের মতো ছোট্ট পাখি দিয়ে আবরাহার শস্তিশালী হস্তিবাহিনীকে সমূলে ধ্বংস করে ধুলিস্মাত করে দেয়। সেই আল্লাহ কিন্তু এখনো আছেন।

তিনি বলেন, আবরাহার এই ঘটনার বর্ণনা পবিত্র কুরআনে এভাবে এসেছে-

اَلَمۡ تَرَ کَیۡفَ فَعَلَ رَبُّکَ بِاَصۡحٰبِ الۡفِیۡلِ. اَلَمۡ یَجۡعَلۡ کَیۡدَهُمۡ فِیۡ تَضۡلِیۡلٍ. وَّ اَرۡسَلَ عَلَیۡهِمۡ طَیۡرًا اَبَابِیۡلَ. تَرۡمِیۡهِمۡ بِحِجَارَۃٍ مِّنۡ سِجِّیۡلٍ. فَجَعَلَهُمۡ کَعَصۡفٍ مَّاۡکُوۡلٍ

অর্থাৎ- “তুমি কি দেখনি তোমার রব হাতীওয়ালাদের সাথে কী করেছিলেন? তিনি কি তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেননি? আর তিনি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেছিলেন। তারা তাদের ওপর নিক্ষেপ করে পোড়ামাটির কঙ্কর। অতঃপর তিনি তাদেরকে করলেন ভক্ষিত শস্যপাতার ন্যায়”।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, তাই আলেম-উলামারা কখনো সরকারের জন্য অকল্যাণকর কিছু বলেন না। বরং তাঁরা সময়ে সময়ে উপদেশের ভাষায় সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ, ক্ষমতাসীনদের প্রায় সকলে মুসলমান। আপনাদের কোন ভুল কর্মের কারণে যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে আপনাদের কোনরূপ ক্ষতি বয়ে না আসে, সেটাই আলেম-উলামারা চেয়ে থাকে এবং সেই লক্ষ্যে সতর্ক করে কথা বলেন ও দাবি পেশ করেন। আলেম-উলামা চান, ইসলামসম্মতভাবে ন্যায়-ইনসাফের সাথে দেশ পরিচালনার মাধ্যমে যাতে আপনারা পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ করেন, সে কথাই তারা বলে থাকেন।

হেফাজতে ইসলামের আমীর পীরে কামেল আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, নায়েবে আমীর আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আবদুল আওয়াল, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, মুফতি মোবারক উল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী প্রমুখ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।