Home বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মোবাইল ফোন থেকে চোখ তুলুন: মোবাইল ফোন আবিষ্কারকের আর্তি

মোবাইল ফোন থেকে চোখ তুলুন: মোবাইল ফোন আবিষ্কারকের আর্তি

দুই প্রজন্মের মোবাইল ফোন হাতে মার্টিন কুপার। ছবি- ডায়নাএলএলসি।

মোবাইল ফোনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো লোকজন এটি একটু বেশিই ব্যবহার করে, অন্তত তাই মনে করেন ৫০ বছর আগে এই প্রযুক্তির আবিষ্কারক।

‘সেল ফোনের জনক’ হিসেবে পরিচিত মার্টিন কুপারের মতে, আমাদের পকেটে থাকা ছোট ডিভাইসটির অভাবনীয় সম্ভাবনা রয়েছে। একদিন এটি শারীরিক রোগকেও জয় করবে বলে মনে করেন তিনি। তবে মানুষের চিন্তা এখন এটা নিয়ে একটু বেশিই কেন্দ্রীভূত।

“আমি হতাশ হয়ে পড়ি যখন আমি কাউকে রাস্তা পার হওয়ার সময়েও হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে হাঁটতে দেখি। তারা বাস্তব জগতের বাইরে,” বলে জানান এই ৯৪ বছর বয়সী ব্যক্তি।

“তবে তারা কয়েকজন গাড়ির সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর হয়তো কারণটা বুঝতে পারবে,” মজাচ্ছলে মন্তব্য করেন তিনি।

কুপার নিজেই অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার করেন, ব্যবহার করেন সবচেয়ে আপডেটেড আইফোন। ই-মেইল, ছবি তোলা, ইউটিউব দেখা কিংবা নিজের হেয়ারিং এইড নিয়ন্ত্রণ করা, সবই মোবাইলের মাধ্যমে করেন তিনি। বাজারে নতুন মডেল আসার সাথে সাথেই তার হাতে চলে আসে সেগুলো। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন, এটি প্রায়ই ‘অতিরিক্ত’ অনুভূত হয়।

তিনি জানান, “যেভাবে আমার নাতি-নাতনীরা সেলফোন ব্যবহার করে সেটা আমি কখনোই বুঝতে পারবো না।”

আসল মোবিলিটি

কুপার তার আইফোন ব্যবহার করেন মূলত মানূষের সাথে কথা বলার জন্য। ৫০ বছর আগে তার আর সার্কিটের সমন্বয়ে যে বিশাল ব্লকাকার মোবাইল বানিয়েছিলেন তিনি, সেটি যে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে তা বলাই যায়। ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল ঐ মোবাইল ফোন দিয়েই প্রথম মোবাইল কল করেন তিনি।

সে সময়ে তিনি মটোরোলার হয়ে কাজ করতেন। একদল ডিজাইনার আর ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি, যারা কাজ করছিলেন সবার আগে মোবাইল টেকনোলজি বাজারে আনার জন্য। কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই প্রযুক্তিটির পেছনে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলেছিলো, যাদের উদ্দেশ্য ছিল বাজার থেকে বেল কোম্পানিকে হটিয়ে দেওয়া, যারা ১৮৭৭ সালে টেলিফোন আবিষ্কার করার পর থেকেই বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছিল।

বেলের ইঞ্জিনিয়াররা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সেলুলার ফোনের আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে থাকে। ষাটের দশকে গাড়ির মধ্যেও ফোন ইন্সটল করে ফেলে তারা, কারণ এগুলো চালানোর জন্য বড় আকারের ব্যাটারি প্রয়োজন ছিল। তবে কুপারের কাছে এটা আসল মোবিলিটি ছিল না।

১৯৭২ সালের শেষদিকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এমন এক ডিভাইস বানাবেন, যেটি সব জায়গাতেই ব্যবহার করা যাবে। তাই তার হাতে থাকা মটোরোলার সমস্ত সম্পদ নিয়ে তিনি সেমিকন্ডাকটর, ট্রানজিস্টর, ফিল্টার আর অ্যান্টেনার ওপর বিশেষজ্ঞ একদল লোকজনকে জড়ো করলেন, পুরোদমে খাটলেন তিন মাস।

আরও পড়তে পারেন-

মার্চের শেষদিকে এসে তারা ফর্মুলা আবিষ্কার করে ফেললেন, উন্মোচন করলেন ডাইনাট্যাক বা ডাইনামিক অ্যাডাপ্টিভ টোটাল এরিয়া কাভারেজ – ফোন।

কুপার জানান, “এই ফোনের ওজন ছিল এক কিলোগ্রামেরও বেশি, প্রায় আড়াই পাউন্ডের মতো। আর ব্যাটারি দিয়ে মাত্র ২৫ মিনিট কথা বলা যেত। তবে সেটি মূল সমস্যা ছিল না, কারণ এটি এতটাই ভারি ছিল যে আপনি ২৫ মিনিট একটানা ধরে কথাও বলতে পারবেন না।”

তাই প্রথম মোবাইল ফোন কলটি খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি, এটি কেবল ব্যবহার হয়েছিল যন্ত্রটি আসলেই কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য।

তবে কুপার কাকে ফোন করেছিলেন? নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ভালো আর কে-ই বা হতে পারে?

“আমি নিউ ইয়র্কের সিক্সথ অ্যাভিনিউয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো বেল সিস্টেমের আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ড. জোয়েল এঙ্গেলকে ফোন করলে কেমন হয়?”

“আমি বললাম, ‘জোয়েল, আমি মার্টিন কুপার বলছি। আমি একটা হাতে ধরা সেল ফোন দিয়ে তোমার সাথে কথা বলছি। একটা আসল সেলফোন, ব্যক্তিগত, হাতে-ধরা এবং বহনযোগ্য’।”

“লাইনের ঐপাশে কোনো কথা নেই। আমার মনে হয় ও ঐপাশে ওর দাঁত কামড়াচ্ছিলো।”

“রোগ জয়”

প্রথম মোবাইল ফোনগুলো মোটেই সস্তা কিছু ছিল না, ঐ সময়েই এগুলোর দাম ছিল ৫,০০০ মার্কিন ডলার। তবে এত দাম হওয়া সত্ত্বেও আগেই সেগুলোকে গ্রহণ করে নেওয়ার মতো লোকের অভাব হয়নি। কুপার জানান, “জমি বিক্রির এজেন্টরা মোবাইল ফোনের বিশেষ ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ তাদের হাতে কাজই ছিল দুটো: লোকজনকে বাড়ি দেখানো এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা। মোবাইল আবিষ্কারের পর তারা দুটো কাজই একসাথে করার সুযোগ পেলেন।”

আর মোবাইল ফোন ক্রমেই জনগণের জীবনমান উনত করতে ভূমিকা রাখতে লাগলো।

কুপার জানান, “সেল ফোন এখন মানুষের সংযোজিত রূপে পরিণত হয়েছে। এটা যে এতকিছু করতে পারবে তা ঐ সময়ে কল্পনাই করা যায়নি। শুরুর দিকে আমরা বোঝার চেষ্টা করছিলাম এটি দিয়ে আর কী কী করা যেতে পারে।”

“ভবিষ্যতে সেল ফোন আরও পরিবর্তন হবে। এখন যেমন এটি আমার হার্টবিট মাপতে পারছে, কিংবা আমার হেয়ারিং এইড নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, তেমনিভাবে এমন একসময় আসবে যখন আরও বেশ কিছু বডি সেন্সরের মাধ্যমে এটি শরীরে রোগ হওয়ার আগেই ধরে ফেলতে পারবে।”

ঐ বিশাল হ্যান্ডসেট থেকে মোবাইল ফোনের এ পর্যন্ত আসতে মার্টিন কুপারের অবদান হয়তো খুব বেশি ছিল না, তবে কুপার সবসময়েই জানতেন তিনি এবং তার দল যে ডিভাইস তৈরি করতে যাচ্ছেন তা পুরো বিশ্বকেই পরিবর্তন করে দেবে।

“আমরা সবাই জানতাম যে একদিন আমরা সেলফোন আবিষ্কার করবোই। আমরা সেটা আবিষ্কার করার প্রান্তে রয়েছি। পৃথিবীতে এখন মানুষের চেয়ে মোবাইল ফোনের সংখ্যা বেশি। তা-ই আমাদের স্বপ্ন যে সত্যি হয়েছে তা বলতেই হয়।”

তবে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে, এমনকি রাস্তা পার হওয়ার সময়েও মোবাইল ফোন নিয়ে তিনি খুব বেশি চিন্তিত নন। নতুন প্রযুক্তি সবসময়েই নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

“যখন প্রথম টেলিভিশন বাজারে আসে, লোকজন সম্মোহিতের মতো আচরণ করতো। তবে আমরা এখন সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি, আমরা বুঝতে পেরেছি টিকে থাকতে হলে কোয়ালিটিও দরকার।”

মোবাইলের ক্ষেত্রেও পৃথিবী একইরকম অবস্থায় পৌঁছেছে, তবে এটি বেশিদিন থাকবে না বলেও জানান তিনি।

“প্রতিটা প্রজন্ম আরও বেশি স্মার্ট হয়ে উঠছে। তারা শিখবে কীভাবে আরও ভালোভাবে সেলফোন ব্যবহার করা যায়। মানবপ্রজাতি দ্রুত হোক কিংবা ধীরে ধীরে হোক, এটি শিখে যাবে।”

“আমাকে শুনে হয়তো অতি আশাবাদী মনে হতে পারে, কিন্তু আমি সবাইকে জানাতে চাই যে এক থেকে দুই প্রজন্ম পরেই আমরা মোবাইলের মাধ্যমে রোগ জয় করে ফেলব।”

সূত্র: টেকএক্সপ্লোর

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।