Home ফিকহ ও মাসায়েল তারাবীহ বিশ রাকাআত আদায়কারীদের প্রতি কিছু অনুরোধ

তারাবীহ বিশ রাকাআত আদায়কারীদের প্রতি কিছু অনুরোধ

।। মাওলানা সাঈদ আহমদ ।।

১. যারা বিশ রাকাআত তারাবীহ আদায় করি, আমরা আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করি। কেননা তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে সঠিক মাসআলা বুঝার ও আমল করার তাওফীক দিয়েছেন। আর শোকর আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, নেয়ামতের সঠিক ও যথার্থ ব্যবহার। এর অপব্যবহার কিংবা তার আসল রূপ বিকৃত না করা। তাই আমাদের জন্য পূর্ণ খুশু-খুযু ও একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করা জরুরী। এবং রুকু, রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো, সিজদা ও দুই সিজদার মাঝের বৈঠকসহ সকল রুকন ধীর-স্থিরতার সাথে আদায় করাও জরুরী।

অথচ অনেক মসজিদেই দেখা যায়, নামায তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য রুকু-সিজদা ইত্যাদিতে তাড়াহুড়া করে নামাযকেই বিকৃত করা হয়। এটা অবশ্যই সংশোধন করা চাই। কেননা ফরয নামাযের মত সকল নামাযেই রুকু-সিজদা ইত্যাদি সঠিকভাবে আদায় করা জরুরী। অন্যথায় নামায সহীহ-শুদ্ধ হবে না। তাছাড়া এমন নামাযকে হাদীসে নিকৃষ্ট চুরি বলা হয়েছে এবং সিজদাকে কাকের ঠোকরের মত আখ্যা দেওয়া হয়েছে!

২. তারাবীহর নামাযেও শুরুতে সানা, আউযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ ও শেষে দুআ পড়া। অথচ অনেক ইমাম সাহেব শুরুতে সানা পড়েন বলে মনে হয় না। ইমাম নববী রাহ.(মৃ. ৬৭৬ হি.) বলেন, তারাবীহর নামায এক সালামে দুই রাকাআত করে বিশ রাকাআত। এই নামায পড়ার পদ্ধতি অন্যান্য নামাযের মতই। এতেও অন্যান্য নামাযের মত সকল দুআ রয়েছে। যেমন নামাযের শুর“তে সানা এবং বাকী দুআগুলো পূর্ণভাবে আদায় করা। এভাবে সম্পূর্ণ তাশাহ্হুদ পড়া এবং এর পরবর্তী দুআ পড়া ইত্যাদি, যা উপরে উলে­খ হয়েছে। অতপর বলেন, এ সব দুআর কথা যদিও প্রসিদ্ধ একটি বিষয়। এরপরও এ বিষয়ে সতর্ক করার কারণ হচ্ছে, অধিকাংশ লোক (তারাবীহর নামাযে) অনেক দুআ অলসতা করে বাদ দেয়। অথচ সঠিক হচ্ছে দুআগুলো পড়া। (আল-আযকার পৃ. ৩১০)।

আরও পড়তে পারেন-

৩. তারতীলের সাথে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা। তারতীলের ব্যাখ্যায় হযরত আলী রা. বলেছেন, تَجْوِيدُ الْحُرُوفِ وَمَعْرِفَةُ الْوُقُوفِ.

অর্থাৎ হরফগুলো মাখরাজ ও সিফাতের সাথে আদায় করা এবং ওয়াকফগুলোর স্থান ও পদ্ধতি জানা। এটাই হচ্ছে তাজবীদের সারকথা। আর তাজবীদের বিধানসমূহ প্রয়োগের প্রকৃত ক্ষেত্রে হচ্ছে পবিত্র কুরআন। বিশেষত যখন তা আল্লাহ পাকের সামনে নামাযে তেলাওয়াত করা হয়।

তারাবীহতে কুরআন মজীদ খতম করা সুন্নতের আমল তারাই পালন করবেন, যারা কমপক্ষে হরফের মাখরাজ ও অপরিহার্য সিফতগুলোর প্রতি লক্ষে রাখেন এবং জর“রী ওয়াকফগুলো পালন করেন। অথচ এত তাড়াতাড়ি কুরআন তেলাওয়াত করা হয় যে, হরফগুলোর সঠিক উচ্চারণ হয় না এবং ঠিকমত বুঝা যায় না। এক্ষেত্রে কেউ কেউ মুসল্লীদের অজুহাত দেখান। কিন্তু ‘মারাকীল ফালাহ’ গ্রন্থে স্পষ্ট লেখা আছে, মুসল্লীরা বিরক্তি বোধ করলেও তারতীল ছাড়া যাবে না। বরং তাদেরকে পরিষ্কার বলে দিবেন, এত দ্র“ত পড়ে খতম করার চেয়ে শান্তভাবে সূরা তারাবীহ পড়াই উত্তম।

৪. অনেকে সূরা তারাবীহও এত দ্রুত পড়েন যে, পঁচিশ-তিরিশ মিনিটের মধ্যে সব নামায শেষ হয়ে যায়। আবার বিশেষ এমন কিছু মুসল্লীও দেখা যায়, যারা কোথায় তাড়াতাড়ি ও বেশি দ্রুত পড়া হয়- এর তালাশে থাকেন!

এ যেন তাড়াতাড়ি পড়ার ও পড়ানোর প্রতিযোগিতা। উভয়ের অবস্থা দেখে মনে হয়, যেন কোন বোঝা তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হল, আর তারা যেকোনভাবে তা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আরে ভাই! বিশ রাকাআত তারাবীহ একটু কষ্ট তো হবেই। এ জন্যই তো হাদীসে তারাবীহর নামায আদায়কারীর অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে অর্ধ রাত ও সেহরী পর্যন্ত তারাবীহ পড়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম শতাধিক আয়াত বিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন এবং দীর্ঘ নামাযের কারণে তাঁদের কেউ কেউ লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। তাহলে আমরা কি এক ঘন্টাও দাঁড়াতে পারি না? অন্যথায় উক্ত সুসংবাদের হকদার হওয়ার কীভাবে আশা করা যাবে!

৫. কিছু ভাই এমন আছেন, যারা রমযানের প্রথম ৫/৬ দিন বা ১০ দিনের মধ্যে কুরআন মজীদ খতম করে তাদের সব আগ্রহ-উৎসাহ শেষ করে ফেলেন। এরপর তারাবীহর প্রতি তেমন গুরুত্ব দেন না; এসব ঠিক না। কেননা পুরো রমযান মাসে প্রতিদিন তারাবীহ আদায় করা সুন্নত।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক পন্থায় পুরো রমযান মাসে আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন!

লেখক: শিক্ষক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।