Home সোশ্যাল মিডিয়া হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর আমলে সরকার ব্যবস্থা যেমন ছিল

হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর আমলে সরকার ব্যবস্থা যেমন ছিল

।। মাওলানা শহিদ উল্লাহ ।।

ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা আল্লাহর হাতে। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অহীর মাধ্যমে নবীর নিকট প্রকাশ করতেন। কুরআনে বিধিবদ্ধ আল্লাহর আইনের প্রতিপালন সমস্ত মুসলমান ও ইসলামী রাষ্ট্রের অধিকর্তা নবীর জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি কুরআনে কোনো বিষয়ের মীমাংসা না পাওয়া গেলে কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক ধার্মিক ও শিক্ষিত লোকদের সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রের সকল কার্য সম্পাদন করতেন। ইসলামী আদর্শের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন, ইসলামের সর্বাত্মক বিজয় প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামের মাধ্যমে জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধনই ছিল মদিনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের একমাত্র লক্ষ্য।

১. কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা

হযরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর সর্বপ্রথম যেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদেই ইসলামী রাষ্ট্রের কার্যালয় স্থাপিত হয়। একাধারে প্রার্থনাগৃহ, রাষ্ট্রীয় দফতর ও নবীর দরবার ছিল।

মসজিদ হতেই তিনি রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্য পরিচালনা করতেন। সরকারি কাজে নিয়োগের ব্যাপারে কৌলিন্য বা অভিজাত্যকে কোন মূল্য দেয়া হতো না। যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিগণকে শাসনকার্যে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হতো ।

মসজিদে বসে নবী কারীম (সা.) বিদেশি শাসক ও উপজাতীয় নেতাদের নিকট লিপি ও দূত প্রেরণ করতেন এবং সন্ধি সম্পাদন করতেন। বিদেশী দূত ও উপজাতীয় প্রতিনিধিদের তিনি মসজিদ প্রাঙ্গনে সংবর্ধনা জানাতেন এবং সেখান থেকে প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও কর -সংগ্রাহকারকদের উদ্দেশ্যে আদেশ জারি করেন। মসজিদ ছিল তার বিচারালয়।

২. প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা

আরব দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার পর হযরত মুহাম্মদ (সা.) একে প্রাচীন ইতিহাস ও ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কতিপয় প্রদেশ বিভক্ত করেন। এ প্রদেশগুলো হল মদিনা (নয়া ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এ প্রদেশে অবস্থিত হওয়ায় এখানে কোন প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন না), খাইবার, মক্কা, তায়িফ, তায়াম, সানা, ইয়েমেন (নাজরান), বাহারাযইন, ওমান ও হাযরামাউত।

আরও পড়তে পারেন-

প্রাদেশিক শাসনকর্তা ব্যতীত নবী (সা.) সকল উপজাতীয় এলাকায় ‘আমীল’ নিয়োগ করেছিলেন। তার উপর যাকাত বা মিসকিন কর আদায় এবং সদকাহ বা স্বেচ্ছামূলক খয়রাত সংগ্রহের দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল।

৩. রাজস্ব ব্যবস্থা

প্রাক- ইসলামী আরবে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন অস্তিত্ব ছিল না। তাই সরকারি আয় -ব্যয়ের কথাও কেউ জানতো না। হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বপ্রথম আরবে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।

রাজস্ব সংগ্রহের উৎস : ইসলামের অনুমোদিত পাঁচটি উৎস হতে রাষ্ট্রের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ করা হত। তা হলো- (১) যাকাত ও সদকাহ, (২) জিযিয়া, (৩) খারাজ (৪) খুমস বা যুদ্ধকালে সংগৃহীত মালের এক পঞ্চমাংশ (৫) আল-ফে।

যাকাত: কুরআনে নামাজের পরই যাকাতের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ধনী মুসলমানদের উপর যাকাত দেওয়া ফরয (অবশ্য কর্তব্য)।

জিযিয়া : জিজিয়া কর অমুসলমানদের নিকট হতে আদায় করা হতো। এটা সামরিক কর্তব্যের পরিবর্তে এবং জানমালের নিরাপত্তা ও হেফাজতের জন্য গ্রহণ করা হতো।

খারাজ: অমুসলমান প্রজাদের জমিভোগ দখলের জন্য খারাজ নামের ভূমিকর দিতে হতো। হযরত (সা.) উৎপন্ন শস্যের অর্ধেক খারাজ হিসেবে দেয়ার নিয়ম নির্ধারণ করেছিলেন।

খুমস (গণিমত) : অস্ত্রশস্ত্র, গোড়া ও অন্যান্য আস্থাবর সম্পত্তি খুমসের (গনিমত) অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আল-ফে: সরকারি জমি, দাবিদারহীন জমি প্রভৃতি আল -ফে বলে ঘোষিত হয়েছিল।

৪. সামরিক সংগঠন

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মুসলিম বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। কিন্তু তার কোন নিয়মিত সৈন্যবাহিনী ছিল না। প্রয়োজনের সময় সকল সবল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদেরকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হতো । সামরিক ও অভিযানের সময় নবী বা তার নিয়োজিত কোন সেনাপতি সৈন্য পরিচালনা করতেন। সামরিক অভিযান প্রেরণের দরকার হলে ফরমান পাঠিয়ে মিত্র উপজাতীয়দের এবং সার্বিকভাবে মুসলমানদের সমবেত হতে বলা হতো।

মুসলিম বাহিনী প্রথমে কেবল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কতিপয় দলের সমষ্টি ছিল। কিন্তু নবী (সা.) জীবনের শেষ ভাগে তা বিশাল সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়।

৫. শিক্ষাব্যবস্থা

শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা: নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) শিক্ষা ও জ্ঞানানুশীলনের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। তিনি মুসলমানদের সব সময় জ্ঞান সাধনার কথা বলতেন। তিনি শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা করেন-

  • শিক্ষিত সম্প্রদায় নবীর উত্তরাধিকারী।
  • জ্ঞানের জন্য চিনে যেতে হলেও এটি অনুসন্ধান করো।
  • জ্ঞানের অন্বেষণে যে তার বাসস্থান ত্যাগ করে সে আল্লাহর পথে ভ্রমণ করে
  • শহীদের রক্তের চেয়ে বিদ্ধানের কালি পবিত্রতর।

মদিনায় শিক্ষা কেন্দ্র: শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বাণী রয়েছে। কুরআনে ও জ্ঞান চর্চার নির্দেশ আছে। হিজরতের পর নবীজির উদ্বেগে মদিনায় জ্ঞানচর্চার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

প্রত্যেক মহল্লায় বিদ্যালয় স্থাপন: মদিনাতে ৯টি মসজিদ বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তন্মধ্যে নগরীর উপকণ্ঠে উপস্থিত কুবার মসজিদ-বিদ্যালয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে আগমন করতেন।

– মাওলানা শহিদ উল্লাহ, শিক্ষার্থী- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।