Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ আপনি কি জানেন আপনার আর্থিক ঘরটি কেমন?

আপনি কি জানেন আপনার আর্থিক ঘরটি কেমন?

সাইফুল হোসেন: পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ ওয়েলদি হতে চায়, ধনী হতে চায়, অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে। পরিশ্রম করে সঠিক নিয়ম-নীতি পরিপালন করে টাকা আয় করা আসলেই কঠিন। ধনী হওয়া বা ওয়েলদি হওয়া খুব সহজ কোনো কাজ নয়। এটা একটা জার্নি। অনেকেই বাবার অনেক টাকা থাকার কারণে ধনী হয়েছেন। অনেকে লটারি জিতে ধনী হয়েছেন। অনেকে বিয়ে করে ধনী হয়েছেন। তবে হ্যাঁ, সেই ধনসম্পদ টিকিয়ে রাখতে হলে আপনার আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান থাকতে হবে।  

ওয়েলদি বা ধনী হবার আগে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনার আর্থিক ঘরটি কেমন। আপনি যখন জানবেন আপনার আর্থিক ঘরটি কেমন তখন আপনার আর্থিকভাবে স্বাধীন হবার যে যাত্রা তা শুরু করা সহজ হবে। বলা যায় এই যাত্রার প্রথম ধাপ হল আর্থিক ঘর সম্পর্কে ভাল ভাবে জেনে নেওয়া।

আপনার ফিন্যান্সিয়াল হাউস কেমন তা জানার জন্যে প্রথমে যেটা করতে হবে তা হল আপনার অ্যাসেট একপাশে আপনি লিখবেন এবং আপনার লায়াবিলিটি বা দেনা একপাশে লিখবেন।

এটা লেখার সময় বামপাশ ডানপাশ কোনো ব্যাপার না। যেকোন পাশে আপনি অ্যাসেট লিখুন। বা উপরে অ্যাসেট লিখুন, নিচে লায়াবিলিটি লিখুন। অ্যাসেটে লিখবেন আপনার বাসায় ক্যাশ কত টাকা আছে, আপনার ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে কত টাকা আছে, আপনার কত টাকার এফডিআর আছে, কত টাকার সঞ্চয় পত্র আছে, বিভিন্ন স্কিমে কত টাকা আছে, কারো কাছে আপনি কত টাকা পান যেটা আদায় হবে বলে আপনি মনে করেন, আপনার জমি ও গোল্ড আছে তার ভ্যালু কত ইত্যাদি। এইসব একত্রে করে যোগ করলে যেটা হবে সেটা হচ্ছে আপনার মূল অ্যাসেট।

এবার অন্য কলামে লিখুন আপনার বিভিন্ন দেনা। যেমন আপনি কারো কাছ থেকে যত টাকা ঋণ নিয়েছেন, আপনি কোন ব্যাংক থেকে যে টাকা ঋণ নিয়েছেন, কোন লিজিং কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছেন, আপনি কোন কোঅপারেটিভ সোসাইটি থেকে যত টাকা ঋণ নিয়েছেন, এইসব লায়াবিলিটি। যেটা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে সেটা অ্যাসেট থেকে বাদ দিয়ে দিন। অ্যাসেট থেকে লায়াবিলিটি বাদ দিলে যেটা থাকে সেটা আপনার নিট সম্পদ।

যদি আপনি দেখেন আপনার নিট সম্পদ খুব কম তাহলে আপনি সতর্ক হোন। আপনার সম্পদ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যদি দেখেন যে অ্যাসেট এর পরিমাণ আপনার বেশি, অনেক বেশি, তাহলে আপনি খুব ভালো অবস্থানে আছেন। আবার যদি দেখেন অ্যাসেট ও লায়াবিলিটি সমান তাহলে আপনি খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন, যেকোন সময়ে আপনি বিপদে পড়ে যেতে পারেন।  আবার যদি দেখা যায় অ্যাসটের চাইতে লায়াবিলিটি অনেক বেশি তাহলে আপনি সমূহ বিপদের মধ্যে পড়ে গেছেন। যাহোক আপনি যখন লিখে হিসেব করলেন তখন আপনি আপনার আর্থিক ঘরটা বুঝতে পারবেন। এখানে থেমে গেলে হবে না।

এরপরে আপনি দেখুন আপনার মাসিক আয় কত। এটা খুব সহজ হিসাব কারণ একটা বা দুটো খাত থেকে আপনার আয় আসে। এর মধ্যে আসবে আপনার বেতন, ভাড়া বাবদ কোন আয় হলে সেটা, স্টক থেকে কোন লভ্যাংশ আসলে সেটা, সঞ্চয়পত্র থেকে কোন সুদ আসলে সেটা, ব্যাংকের এফডিআর থেকে সুদ আসলে সেটা এবং অন্যান্য কোন আয় যেমন রয়ালটি, কমিশন ইত্যাদি। এই যে মাসিক টাকা আপনার কাছে আসছে সব টাকা যোগ করলে সেটা হবে সেটাই আপনার মোট মাসিক আয়।

এবার দেখুন আপনার মাসিক খরচ কত। এই খরচের মধ্যে আসবে বাসা ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ইউটিলিটি চার্জ, খাবার খরচ, বাচ্চাদের পড়াশুনার খরচসহ যত টাকা প্রতিমাসে আপনার পকেট থেকে বের হয়ে যায় তার যোগফল। যদি দেখেন যে আপনার মাসিক আয় এবং খরচের পরিমাণ সমান সমান তাহলে আপনার বিপদ শুরু হয়ে গেছে। কোন সঞ্চয় নেই। আপনার উচিত খরচ কমিয়ে সঞ্চয় করা অথবা আয় বাড়িয়ে সঞ্চয় শুরু করা এবং ধীরে ধীরে সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ানো, ইমাজেন্সি ফান্ড তৈরি করা।

আর যদি দেখেন আপনার খরচের চেয়ে আয় অনেক বেশী তাহলে আপনি এই প্রবণতা চালাতে থাকবেন। আর যদি আয়ের চেয়ে খরচ অনেক বেশী হয় তাহলে আপনি ভীষণ বিপদে আছেন। নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনার বর সেফগার্ড তৈরি করা দরকার, আপনার খরচের হিসেবে কাঁচি চালানো দরকার। না হলে আপনি ঋণে জর্জরিত হয়ে একসময় মানবেতর জীবনযাপন করবেন।

আরও পড়তে পারেন-

একটা ছোট্ট গল্প বলি। একদিন একটা টেলিভিশনে টক শো করে আমি নিচে নেমেছি। আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা। তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। আমি যেহেতু পার্সোনাল ফাইনান্স নিয়ে কাজ করি, তাকে তার পার্সোনাল ফাইনান্স সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম অভ্যাসবশত। আমার বন্ধু প্রশ্নের জবাবে উত্তর দিল, ‘সঞ্চয় করবো কিভাবে কোন টাকাই তো থাকে না’। তখন আমি জানতে চাইলাম সে পার ডে কয়টা সিগারেট খায়। সে বলল ‘দুই প্যাকেট তো হবেই, এত টেনশন!’ দুই প্যাকেটের দাম যদি পাঁচশো টাকা হয় তাহলে আমার বন্ধু প্রতি মাসে পনেরো হাজার টাকার সিগারেট খায়। আমি বললাম, ‘তোমার যে ইনকাম লেভেল সেখান থেকে যদি পনেরো হাজার টাকা তুমি সিগারেট খাও আর সিগারেটের সাথে যদি তুমি চা খাও, যদি বন্ধুবান্ধব আসে তাদেরকে খাওয়াও তাহলে পনেরো হাজারটা চলে যায় বিশ হাজার টাকায়।’ বিশ হাজার টাকা যদি সিগারেট খেতে চলে যায়, যেটা বিশেষ কোনো কাজে লাগে বলে আমি মনে করি না, এবং আমার বন্ধু যদি সঞ্চয় করতে না পারে তাহলে ব্যাপারটা কতটা যৌক্তিক লাগে? আমি আমার বন্ধুকে বললাম যে সে তামাক বাদ দিয়ে সঞ্চয় শুরু করতে পারে খুব সহজেই। কিন্তু আমার বন্ধু উত্তরে বলল, ‘অসম্ভব।’

যাহোক আপনি যখন আপনার খরচের বাজেট করবেন তখন দেখবেন এরকম অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ আছে যা আপনি চাইলেই বাদ দিতে পারেন এবং বাদ দিলে আপনার বেশি অসুবিধা হবে না। আমি মনে করি সেভিংসটা শুরু করা খুব জারুরি। আপনার মাসিক আয়ের থেকে যদি আপনার মাসিক খরচ বেশি থাকে তাহলে সেটা আমি খারাপ বলছি। আবার মাসিক আয় যখন আপনার খরচের চেয়ে অনেক বেশি থাকে তখন সেটাকে আমি ভাল বলছি। আপনার মাসিক আয়ের থেকে আপনার খরচ কোনভাবে বেশি রাখা যাবে না। কারণ যখন আপনার আয়ের থেকে আপনার এক্সপেন্সেস বেড়ে যাবে আপনি ঋণ করবেন কারণ তাখন আপনার ঋণ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আপনি হয়ত কোন পার্সোনাল খাত থেকে অথবা কোন প্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণ নিবেন। একসময় গিয়ে আপনি অনেক বেশি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়বেন। আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল ঠিক মত পরিশোধ করতে পারবেন না এবং এক সময় মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হবে।  

তাই আপনার আর্থিক ঘর দেখার পরে সতর্ক হয়ে যান। যদি সঠিকভাবে না চলেন তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন। কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।

আর্থিক ঘর ঠিক করার জন্য আপনি সহজ পদ্ধতি যেমন ৫০/৩০/২০ ফর্মুলা এপ্লাই করতে পারেন। আমার ‘ফিনফাক্টস’ ইউটিউব চ্যানেল দেখলেও ওখানে আপনি একটা দিকনির্দেশনা পেয়ে যাবেন। আপনি যখন আর্থিক ব্যবস্থাপনার জ্ঞান অর্জন করবেন তখন নিজেই নিজের আর্থিক ব্যাপারে ভাল ভাল সব সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আপনার বয়স যাই হোক আপনি আজই আপনার আর্থিক ঘর দেখে নিন এবং আর্থিকভাবে স্বাধীন হবার জন্য কাজ শুরু করুন। কবে থেকে? এখন থেকে, জাস্ট এখন।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট; সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশীপ ইন্টারন্যাশনাল।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।