Home অন্যান্য খবর তরুণের হাতে প্রযুক্তি: ভুল, মিথ্যা তথ্য ও বিদ্বেষ ছড়ানো রুখবো কীভাবে?

তরুণের হাতে প্রযুক্তি: ভুল, মিথ্যা তথ্য ও বিদ্বেষ ছড়ানো রুখবো কীভাবে?

।। শাহানা হুদা রঞ্জনা ।।

তরুণ সমাজ মানেই ডিজিটালাইজড সমাজ। তাদের হাতেই তথ্যপ্রযুক্তি, তারাই পারেন বিশ্বায়নকে প্রযুক্তির মাধ্যমে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৯ বয়সী মানুষ আছে প্রায় ২ কোটি ৬৮ লাখ। এদের অধিকাংশই ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ইমো ও লাইকি সহ আরো অনেকধরণের ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছেন। ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে তথ্য খুব দ্রুত ও সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে যায় বলেই, একে ব্যবহার করার ব্যাপারে তথ্যের নৈতিক সংরক্ষণ এবং নিরাপদ তথ্য প্রচারের বিষয়টিও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এইসময়ে সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে তথ্যের পাশাপাশি বিভ্রান্তি, ঘৃণাসূচক বক্তব্য, বিদ্বেষ ও ভুল তথ্যও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যেহেতু তরুণ-তরুণী ও যুব সমাজের হাতের মুঠোয় রয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম তাই ভুল তথ্য, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ডিজিটাল বিদ্বেষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কাজটাও মূলত তরুণদেরই হওয়া উচিৎ। অথচ আমরা লক্ষ্য করছি তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব যত বাড়ছে, বাকস্বাধীনতা এবং তথ্যের আদান-প্রদানের বিষয়টি ততোই ভারসাম্যহীন ও বিদ্বেষমূলক হয়ে উঠছে।

কেন হঠাৎ এখন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও এর অপব্যবহার নিয়ে কথা বলছি, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, কারণ দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ সাইবার নিরাপত্তা এবং আইনি অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) এর ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৩’ বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধের ধরনে বদল দেখা দিয়েছে এবং বেশি ঝুঁকিতে আছেন নারী ও শিশুরা। নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে সাইবার অপরাধ। জরিপে উঠে এসেছে, ভুক্তভোগীদের ৫৫ শতাংশই বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক আইন সম্পর্কে জানেন না।

সামনেই বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন বা হবেন, তারা প্রযুক্তিভিত্তিক প্রজন্ম। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী থেকে উঠে আসা শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত ও নিরক্ষর সব তরুণ-তরুণীদের হাতেই ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এই বিশাল সংখ্যার নব্য ভোটাররা কী ভাবছেন, কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছেন, নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে তারা কেমনটা ভাবছেন? বা নির্বাচন নিয়ে তরুণ সমাজ কতটা উৎসাহী এসব নিয়ে ভাবতে গিয়ে বেশকিছু বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে।

ডিডব্লিউ একাডেমি বর্তমানে এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যার লক্ষ্য বাংলাদেশের তরুণদের, বিশেষ করে কথোপকথনকে উৎসাহিত করা। এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, যুব ও তরুণ সমাজ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, ভোটের পরিবেশ এবং ভোটাধিকার, সুশাসন ইত্যাদি প্রসঙ্গে খুব একটা উৎসাহী নয়। তারা কোনো গুরুতর বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চান না, কারণ তাদের কথাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। যোগাযোগ ও মতবিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রবীণদের সাথে তাদের রয়েছে বিশাল ব্যবধান। তরুণদের প্রায় সবার হাতে প্রযুক্তি অথচ তথ্য যাচাইয়ে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে তারা খুব একটা সচেতন নন এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়েও সুনির্দিষ্টভাবে ওয়াকিবহাল নন।

এরকম একটি প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে ‘ইনফরমড ওপিনিয়নস ফর বেটার ডিসিশন: এমপাওয়ারিং ইয়ুথ ভয়েজেস’ শীর্ষক ডিডব্লিউ একাডেমির এই প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে তরুণদের সাথে কথা বলেছে যারা এবার প্রথম ভোট দেবে। এর মাধ্যমে চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্রুপটিকে ইন্টারনেট ব্যবহার, সঠিক তথ্য গ্রহণ ও তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সচেতন করে তোলার। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে যারা প্রথমবার ভোট দেবেন, তারা যেন প্রার্থী নির্বাচনের সময় তাদের সূক্ষ্ম যুক্তি ও চিন্তাকে কাজে লাগাতে পারেন। সেই সাথে তাদের সামাজিক দায়দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারেন। স্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে তরুণ ভোটাররা কিভাবে সংবাদ, তথ্য ও ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যম আমরা জানতে পারছি, তরুণ সমাজ কিভাবে টিকটক, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। এসবের মাধ্যমে নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা কতটা বাড়ছে। শুধু টিকটক বা লাইকি নয়, সারাদেশে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠছে, যারা ফাঁদে ফেলে শিশু ও নারীদের নিয়ে ব্যবসা করছে। ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ব্যবহার করে নানাধরণের অপরাধ করছে। ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করছে।

‘বাংলাদেশে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজ বিস্তার এবং নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশীয় অনলাইন ও মিডিয়াতে নারীর প্রতি অবমাননাকর, নারীর অশালীন দেহ প্রদর্শন, যৌন আবেদনময় ও পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট বা আধেয় বাড়ছে। প্রচুর সংখ্যক কিশোর, তরুণ ও যুবক নারীর প্রতি অবমাননাকর কনটেন্ট নিয়মিত দেখে থাকেন বলে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮১ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন। অনলাইনে নারীর অবমাননাকর যে ইমেজ (ভাবমূর্তি) দেখানো হয়, তা সমাজে প্রচলিত ‘মন্দ মেয়ে’র ইমেজকে আরো শক্তিশালী করছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তরদাতারা মোবাইল-ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করেন। স্মার্ট ফোনের ব্যবহারের হার অনেক বেশি। শতকরা ৫১ জন ছেলে ফেসবুক ব্যবহার করেন, নারী ব্যবহার করেন শতকরা ৩৯ জন। এরপরেই আছে ইমো, ছেলেরা শতকরা ২৯ ভাগ এবং মেয়েরা শতকরা ২০ ভাগ ব্যবহার করেন। এছাড়াও আছে টিকটক এবং লাইকি। অনলাইনে মন্দ কনটেন্ট যেমন এডাল্ট ম্যুভি, ন্যুডিটি, পর্নোগ্রাফি শতকরা ৭৫ জন তরুণ/যুবক দেখে থাকেন বলে উত্তরদাতারা মনে করেন।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৪ লাখের বেশি। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে বলে বিটিআরসি তাদের ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে কিশোর ও তরুণদের প্রায় সবারই এই ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার আছে।

বিভিন্ন সময় কাজ করতে গিয়ে এই ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রছাত্রী ও দু’জন কলেজে পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে, যারা এবারই প্রথম ভোট দিতে পারবেন। যেহেতু ভোটের আগে ও পরে নানা ধরণের ভুল তথ্য, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ডিজিটাল বিদ্বেষ সৃষ্টি হতে দেখা যায়, তাই সেই প্রসঙ্গে তারা কী ভাবছেন? তিনজনই সরাসরি উত্তর দিলেন, এসব নিয়ে খুব ‘সিরিয়াসলি’ কিছু ভাবছেন না। কারণ তারা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া এই প্রযুক্তির জগতকে তারা বিনোদন ও তথ্য পাওয়ার জগত বলে মনে করেন। এই মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানো ও বিকৃত তথ্য প্রচারকে অপরাধ বলে মনে করলেও একে কিভাবে থামানো যায়, সেসব নিয়ে ভাবেননি। তবে দু’জন ছাত্রীই ফেসবুকে ট্রল হওয়াকে ভয় পান। তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করা খুব দরকার। কারণ ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্যের ওপর যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ সাইবার জগত তৈরি করা যাবে এবং মানুষ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারবেন।

ডিডব্লিউ একাডেমিও তাদের প্রকল্পটিকে সামনে রেখে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ও চিটাগাং ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলেছে এবং সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। বিতর্ক অনুষ্ঠান ও সংলাপের মাধ্যমে তরুণ ভোটাররা বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। সেইসাথে গণমাধ্যম ও ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।

একথা সত্যি যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করার মাধ্যমে একদিকে যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করা যায়, তেমনি এর অপব্যবহার হলে তা অন্য মানুষের মর্যাদা, শান্তি, অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। ঠিক এই জায়গাটাতেই আমাদের কাজ করতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক এই প্রজন্মকে নিয়ে। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে তাদের বুঝাতে হবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে এমন কিছু প্রচার ও সম্প্রচার করা যাবে না, যা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধকে আঘাত করতে পারে ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এমন কোনধরণের বিদ্বেষপূর্ণ বা ঘৃণাসূচক বক্তব্য প্রচার করা বা ছড়ানো যাবে না, যা জনশৃঙ্খলা বা শান্তি নষ্ট করতে পারে, সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে বা সহিংসতা উসকে দিতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারী ও মেয়েদের যৌন হয়রানি করা যাবে না।

আমরা অতীতে দেখেছি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু বাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশে। এরপরেও আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে ফেসবুকের মাধ্যমে বিদ্বেষ ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মধ্য দিয়ে। ফেসবুকের মাধ্যমে এতবেশি ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে, যা গত এক দশকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুবিরোধী সংঘাত বাড়িয়ে তুলেছে। ফেসবুক থেকে উৎসাহিত হয়ে ঘটানো প্রথম বড় সংঘাতের ঘটনাটি ২০১২ সালের। কিন্তু এরপরেও আমরা দেখছি একশ্রেণির মানুষ ঘৃণা বা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য প্রচার করছেন এবং এর উপর নির্ভর করে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

আমাদের দেশে জনগণের বড় একটা অংশ কম পড়াশোনা জানা ও নিরক্ষর। তারা ডিজিটাল মিডিয়ার প্রচার-প্রচারণা নিয়ে খুব একটা সচেতনও নন। যা দেখেন, তাই বিশ্বাস করেন। আর এই সুযোগটাকেই কাজ লাগানোর চেষ্টা করেন অসাধু ব্যক্তিরা। গত বছর প্রকাশিত ফেসবুক পেপারস থেকে জানা যায়, ফেসবুকের অ্যালগরিদম অনলাইনের ঘৃণামূলক বক্তব্যের পাঁচ শতাংশেরও কম চিহ্নিত করতে পারে।

আরও পড়তে পারেন-

প্রায় শতকরা ৮৬ জন তরুণ-তরুণীর স্মার্টফোনের প্রবেশাধিকার রয়েছে। এত বড় একটা অংশ ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও এদের কতজন রাজনীতি, অর্থনীতি, সুশাসন, সমাজনীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে ভাবছেন? অথবা অনলাইনের ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন? অন্যদিকে সামাজিক জেন্ডার ধারণা এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্যের কারণে তরুণদের মধ্যে রয়েছে বড়ধরণের ডিজিটাল বিভাজন অভিজ্ঞতা, যা একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। শহুরে বাসিন্দাদের প্রায় ৫৫ শতাংশের তুলনায় ৩৫ শতাংশ গ্রামীণ বাসিন্দার ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার রয়েছে। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। অনলাইন নিরাপত্তাও ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৬৩.৫১ শতাংশ মেয়েশিশু ও নারী বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।

শুধু আইন বা পুলিশি তৎপরতা চালিয়ে ভুল তথ্য, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ডিজিটাল বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয়। এবং এর মাধ্যমে ইন্টারনেটভিত্তিক অপরাধও ঠেকানো যাবেনা। অন্যদিকে প্রযুক্তির ব্যবহারও বন্ধ করা অসম্ভব। তাই চেষ্টা করতে হবে তরুণদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ভালো-মন্দ দিক সম্পর্কে সচেতন করার। তাদের মাধ্যমেই বের করে আনতে হবে, কিভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের কাছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছানো যাবে। অ্যাপস ব্যবহার করা কোন অপরাধ নয় এবং অ্যাপস ছাড়া বর্তমানে চলা যাবে না। কিন্তু এটি ব্যবহার করতে গিয়ে যখন কেউ পাচার হয়ে যায়, ফাঁদে পড়ে তখনই সেটা হয় দুর্ভাগ্যজনক।

ঠিক এই মুহূর্তে কয়েকটি বিষয়ের দিকে তরুণদের দৃষ্টি ফেরাতে হবে। নতুন ভোটার যারা তাদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ডিডব্লিউ একাডেমি বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন গ্রামগঞ্জের চায়ের স্টলগুলোতে নির্বাচনের আগে যেরকম আলোচনা-সমালোচনা হয়, যেরকম সংলাপ ও বিতর্ক হয়, তরুণ ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ নিয়ে ঠিক সেরকম অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যেমন, ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার রোধ এবং যুবদের নাগরিক সম্পৃক্ততা নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও দেখানো হয়েছে। কারণ তরুণ ও যুব সমাজের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকারিতা ও বিপদ নিয়ে দিনদিন বিতর্ক বাড়ছে। ভার্চুয়াল জগতের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকলেও এর অন্ধকার দিকও রয়েছে। অনলাইনে সাইবার বুলিং, যৌন নিপীড়ন, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া, প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

আরেকটি বড় ব্যাপার হচ্ছে ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহার ও ঝুঁকি নিয়ে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের সাথে কথা বলার জন্য পরিবারকেই সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ব্যবধান ঘোচানোর জন্য। অনেকেই মনে করেন এসব বিষয়ে নজরদারির দায়িত্ব সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর হাতে রাখার দরকার নেই। এগুলো দেখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা ভাবা দরকার।

লেখক: যোগাযোগকর্মী ও কলামিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।