সাবেক সিআইএ পরিচালক জর্জ টেনেট এবং সাবেক মোসাদ প্রধান শাবতাই শাবিত যার হত্যাচেষ্টা না করায় অনুতপ্ত ছিলেন, তিনি হলেন পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক ড. আব্দুল কাদির খান। প্রায় ২৫ কোটি পাকিস্তানির কাছে তিনি একজন কিংবদন্তি ও জাতীয় বীর।
১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণকারী এবং ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মারা যাওয়া এই বিজ্ঞানী পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন। তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা করতে একটি গোপন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেছিলেন। এই দেশগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক শক্তির মর্যাদা অর্জন করে।
ইসরাইল নিজেও একটি গোপন পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর হওয়া থেকে থামাতে তারা বিজ্ঞানীদের হত্যার হুমকি ও চেষ্টা করেছে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরাইল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ভারত শেষ পর্যন্ত ওই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।
পাকিস্তানের জনগণ এ কিউ খানকে স্মরণ করে এমন এক কিংবদন্তি হিসেবে, যিনি বিশ্বাস করতেন যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে তিনি দেশকে বৈদেশিক হুমকি থেকে, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী ভারত থেকে রক্ষা করেছেন।
‘কেন ইসলামিক বোমা নয়?’
ভারত পারমাণবিক বোমা তৈরি করার পর পাকিস্তান নিজস্ব বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ কোডনামে তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, ‘আমরা ঘাস বা পাতা খাব, এমনকি ক্ষুধার্ত থাকব। তবু আমরা একটি বোমা তৈরি করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি খ্রিস্টানদের বোমা থাকতে পারে, ইহুদি ও হিন্দুদেরও বোমা থাকতে পারে, তাহলে কেন মুসলমানদের বোমা থাকতে পারবে না?’
ইউরোপ থেকে পাকিস্তানে ফেরা
ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নেয়া এ কিউ খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি বার্লিন, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে প্রকৌশলবিদ্যা নিয়ে অধ্যয়ন করেন।
১৯৭৪ সালে তিনি ইউরেনকো নামক ইউরোপীয় পারমাণবিক জ্বালানি কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। এই কোম্পানিটি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করতো, যা পারমাণবিক জ্বালানির মূল উপাদান। খান সেখানে বিশ্বের সেরা সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি ও গোপন নকশার অ্যাক্সেস পেয়েছিলেন।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি আকস্মিকভাবে নেদারল্যান্ডস ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমাকে এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যা আমি কখনোই প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।’
পাকিস্তানের গোপন কর্মসূচি
পরে তার বিরুদ্ধে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি ও নীলনকশা চুরির অভিযোগ আনা হয়। পাকিস্তানে ফিরে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণাগার স্থাপন করেন, যা পরে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
বছরের পর বছর এই কর্মসূচি গোপনে চলতে থাকে। বিভিন্ন ডামি কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশ থেকে প্রযুক্তি ও উপকরণ আমদানি করা হতো, যা সরকারিভাবে নতুন একটি টেক্সটাইল কারখানার জন্য বলা হতো।
যদিও সামরিক বাহিনী এই প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল, বেসামরিক সরকারগুলো সচরাচর এই বিষয়ে অন্ধকারে ছিল। ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল ভুট্টো।
প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো পর্যন্ত জানতেন না যে পাকিস্তান ইরানের সাথে পারমাণবিক প্রযুক্তি ভাগাভাগির চুক্তিতে আছে। ১৯৮৯ সালে ইরান সফরের সময় রাষ্ট্রপতি রাফসানজানি তাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি যখন রাফসানজানিকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি ঠিক কী সম্পর্কে কথা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ‘ তিনি উত্তর দেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’
হত্যার হুমকি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
১৯৭৯ সালের জুনে ফরাসি ম্যাগাজিন ‘৮ ডেজ’ এ কিউ খানের কার্যক্রম প্রকাশ করে দিলে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইসরাইল নেদারল্যান্ডসের কাছে প্রতিবাদ জানায়। দেশটি এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ১৯৮৩ সালে ডাচ আদালত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে খানকে দোষী সাব্যস্ত করে। পরে তা কারিগরি কারণে বাতিল করা হয়।
তবু পারমাণবিক কর্মসূচি থেমে থাকেনি। ১৯৮৬ সালের মধ্যেই এ কিউ খান আত্মবিশ্বাসী হন যে পাকিস্তান সফলভাবে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম।
ড. এ কিউ খানের বিরুদ্ধে গোপন যুদ্ধ
এ কিউ খানের প্রেরণা ছিল মূলত আদর্শিক। তিনি বলেন, ‘আমি মার্কিন ও ব্রিটিশদের পবিত্র-অপবিত্র মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই। এই জারজরাই কি বিশ্বের অভিভাবক?’
পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে ইসরাইল বেশ কয়েকটি নাশকতা পরিকল্পনা চালায়। সেগুলোর পেছনে মোসাদের হাত রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।
এ কিউ খানের সাথে যুক্ত ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর অনেক নির্বাহী ব্যক্তিগতভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। পশ্চিম জার্মানির এক কর্মকর্তার বাসায় চিঠি বোমা পাঠানো হলে তিনি রক্ষা পেলেও তার কুকুরটি মারা যায়।
আরেকটি বোমা হামলা চালানো হয় সুইস কোম্পানি কোরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তার ওপর, যিনি পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির সাথে যুক্ত ছিলেন।
ইতিহাসবিদ অ্যাড্রিয়ান লেভি, ক্যাথরিন স্কট-ক্লার্ক এবং অ্যাড্রিয়ান হ্যানি যুক্তি দেন, মোসাদ পাকিস্তানকে পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে বিরত রাখতে হুমকি এবং হত্যাচেষ্টার ব্যর্থ অভিযান চালিয়েছিল।
সুইস ব্যবসায়ী সিগফ্রাইড শেরটলার জানান, মোসাদ এজেন্টরা তাকে ও তার বিক্রয়কর্মীদের বারবার ফোন করেছিল। জার্মানিতে অবস্থিত ইসরাইলি দূতাবাসের একজন ব্যক্তি, যিনি ‘ডেভিড’ নামে পরিচিত, তাকে বলেন, পারমাণবিক উপাদানের ব্যবসা ‘বন্ধ করতে’।
পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির সাবেক কর্মকর্তা ফিরোজ খানের মতে, ‘ইসরাইল চায়নি যে কোনো মুসলিম দেশের কাছে পারমাণবিক বোমা থাকুক।’
ইসরাইল-ভারত গোপন পরিকল্পনা
১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইসরাইল ভারতের কাছে প্রস্তাব দেয়, তারা একত্রে পাকিস্তানের কাহুতা পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালাবে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রথমে এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিলেও পরে পিছিয়ে যান।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতের গুজরাটের জামনগর ঘাঁটি থেকে ইসরাইলের এফ-১৬ এবং এফ-১৫ যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু হামলা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
১৯৮৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ভারতীয় সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুন্দরজি পাকিস্তানের কাহুতায় হামলার লক্ষ্যে সীমান্তে বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করেন। প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য, শত শত ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান সীমান্তে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনার পূর্ণ বিবরণ না জানায় এই উদ্যোগও ব্যর্থ হয়।
চীন-মার্কিন দ্বৈত সমর্থন
ইসরাইল ও ভারতের বিরোধিতা সত্ত্বেও চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছিল। চীন পাকিস্তানকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, ট্রিটিয়াম এবং বিজ্ঞানী সরবরাহ করে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীতল যুদ্ধের মিত্র হিসেবে পাকিস্তানকে পাশে রাখতে পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে চোখ বন্ধ রেখেছিল।
১৯৭৯ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প ফাঁস হলে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সাহায্য বন্ধ করেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আগ্রাসনের পর সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়।
১৯৮০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানি বিজ্ঞানীদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয় এবং কর্মসূচির অগ্রগতিকে অবজ্ঞা করেন।
শীতল যুদ্ধ শেষে চাপে পাকিস্তান
শীতল যুদ্ধের অবসানের পর যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পাল্টে যায়। ১৯৯০ সালের অক্টোবরে পারমাণবিক কর্মসূচির প্রতিবাদে তারা পাকিস্তানের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়।
পাকিস্তান দাবি করে, তারা অস্ত্র তৈরি বন্ধ করবে। কিন্তু পরে এ কিউ খান স্বীকার করেন যে গোপনে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন চলতে থাকে।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
সপ্তম পারমাণবিক শক্তি
১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করলে পাকিস্তান ২৮ মে বেলুচিস্তানে নিজের পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। বিশ্বে সপ্তম পারমাণবিক শক্তি হিসেবে পাকিস্তান আত্মপ্রকাশ করে।
ড. এ কিউ খান তখন জাতীয় বীর। প্রধানমন্ত্রী সমান নিরাপত্তা ও সম্মান পেতেন তিনি। রাস্তাঘাট, স্কুল, এমনকি ক্রিকেট দলের নামকরণ হয় তার নামে।
টেলিভিশনে একবার তিনি বলেন, ‘কে পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছে? আমি করেছি। কে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে? আমি বানিয়েছি। আমি তোমাদের জন্যই এসব করেছি।’
গোপন পারমাণবিক চোরাচালান
১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এ কিউ খান গোপনে একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং লিবিয়াকে প্রযুক্তি ও নকশা সরবরাহ করেন।
তিনি পাকিস্তানের জন্য অর্ডার করা যন্ত্রাংশের অতিরিক্ত অংশ চুপিসারে বিক্রি করতেন। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইরান খোমেনির সময় পাকিস্তানের জিয়াউল হক থেকে সহায়তা চায়। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে ইরানকে অস্ত্র-উপযোগী উপাদান সরবরাহ করা হয়, যদিও সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি পাকিস্তান নিজের কাছে রাখে।
মোসাদ ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যে তার গতিবিধির ওপর নজর রাখে। কিন্তু তার কার্যক্রম কী ছিল তা বের করতে ব্যর্থ হয়। মোসাদের তৎকালীন প্রধান শাভিত পরে বলেন, যদি তিনি খানের উদ্দেশ্য বুঝতেন, তবে ‘ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়ার’ জন্য তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিতেন।
গাদ্দাফির ফাঁসি, এ কিউ খানের অভিযান ও আমেরিকার প্রতিক্রিয়া
শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি এ কিউ খানের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক উন্মোচন করে দেন। তিনি মার্কিন সমর্থন পেতে চেয়ে সিআইএ ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর কাছে প্রকাশ করেন, খান লিবিয়ার জন্য পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করছেন। যেগুলোর কিছু ছিল মুরগির খামারের ছদ্মবেশে।
সিআইএ সুয়েজ খাল দিয়ে পাঠানো পারমাণবিক যন্ত্রাংশ জব্দ করে। ইসলামাবাদের একটি ড্রাই ক্লিনার থেকে তদন্তকারীরা ব্যাগভর্তি পারমাণবিক অস্ত্রের নীলনকশা উদ্ধার করে।
এই অভিযানের পর মার্কিন গোয়েন্দা মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নিউইয়র্ক টাইমসকে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি ছিল অভূতপূর্ব এক রূপান্তর। প্রথমে সে একটি খণ্ডিত বাজার ব্যবহার করে উন্নত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে। তারপর সে পুরো প্রবাহ উল্টে দেয়। কিভাবে বোমার নকশা থেকে শুরু করে সব কিছু বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সরকারগুলোর কাছে বিক্রি করা যায়, তা সে বের করে ফেলে।’
২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেলিভিশনে হাজির হয়ে খান স্বীকার করেন, তিনি ইরান, লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহ করেছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব কাজ তিনি একাই করেছেন, পাকিস্তান সরকারের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই।
পাকিস্তান দ্রুত তাকে ক্ষমা করে দেয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাকে ‘আমার নায়ক’ বলে অভিহিত করেন। তবে মার্কিন চাপের মুখে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাকে ইসলামাবাদে কার্যত গৃহবন্দী রাখা হয়।
‘আমি দুইবার পাকিস্তানকে রক্ষা করেছি’
পরে এ কিউ খান বলেন, ‘আমি যখন পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর বানাই, তখন প্রথমবারের মতো দেশকে রক্ষা করি। আবার যখন দায় স্বীকার করে সব দোষ নিজের কাঁধে নেই, তখনো দেশকে রক্ষা করি।’
২০০৬ সালে তার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে, কিন্তু সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। অসাধারণভাবে ধনী এ কিউ খান জীবনের শেষ দিকে ইসলামাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টারে তহবিল দিতেন এবং বানরদের খাওয়াতে যেতেন। যারা তাকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনতেন, তারা বলেন, তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন যে তার কাজ সঠিক ছিল।
তিনি পশ্চিমাদের প্রভুত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন এবং মুসলিমসহ অ-পশ্চিমা দেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে তাদের রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলতেন, একটি মুসলিম দেশকে প্রযুক্তি দেয়া কোনো অপরাধ নয়।
‘জাতীয় বীরের’ বিদায়
২০২১ সালে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এ কিউ খান মৃত্যুবরণ করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে শ্রদ্ধা জানান। আজো তিনি পাকিস্তানে স্বাধীনতা ও আত্মরক্ষার প্রতীক হিসেবে স্মরণীয়।
মৃত্যুর দুই বছর আগে ২০১৯ সালে খান আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলেন, আমার জাতি নিশ্চিত থাকতে পারে যে পাকিস্তানের দিকে কেউ নজর দেবে না। পাকিস্তান এখন নিরাপদ পারমাণবিক শক্তি।
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ করেছেন আবু সাঈদ
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ