।। মাওলানা কামরুল ইসলাম ।।
বাইশ বছর আগে ইরাকের হাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার কাল্পনিক অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দেশটি ধ্বংস করেছিল। আজ সেই একই অজুহাতে, বিনা উসকানিতে ইরানের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং ইসরায়েলের ‘দোসর’ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। অথচ এই অভিযোগের ভিত্তি কতটা দুর্বল, তা একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায়।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য এবং জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা (আইএইএ) নিয়মিত তাদের স্থাপনা পরিদর্শন করে। তেহরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। অন্যদিকে, ইসরায়েল এনপিটিতে স্বাক্ষর না করেই মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং তারা কখনো নিজেদের স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বিমুখী নীতিই প্রমাণ করে, আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন।
২০০৩ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের নির্দেশে ইরাকে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, পরে প্রমাণিত হয় তার পুরোটাই ছিল এক ‘ভয়াবহ ভুল’। আজ আরেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের আমলে সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও প্রশ্ন তুলেছে- যুক্তরাষ্ট্র কি একই ভুল ইরানের ক্ষেত্রেও করতে যাচ্ছে?
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
তবে ইরানকে ইরাকের সঙ্গে মেলানো ঠিক হবে না। সামরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে ইরান অনেক বেশি শক্তিশালী। ১৯৮১ সালে ইসরায়েল সহজেই ইরাকের পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করেছিল, কিন্তু ইরানের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ইরানের জনগণ শাসকবিরোধী হলেও বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ।
ইসরায়েলের মূল উদ্দেশ্য হলো- যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং সেখানে সরকার পরিবর্তন ঘটানো। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং বর্তমান সংঘাত- সবই সেই পরিকল্পনার অংশ। এর ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে এক দীর্ঘস্থায়ী ও বিধ্বংসী যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠতে পারে। প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই আরেকটি মুসলিম দেশকে ধ্বংস করে নতুন এক ‘ইরাক’ বানানোর পথে হাঁটছে?
লেখক: পরিদর্শক ও প্রশিক্ষক, নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ