Home ইসলাম করোনাভাইরাস: আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে হক্ব ও সৎকর্মে দ্রুত ফিরে...

করোনাভাইরাস: আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে হক্ব ও সৎকর্মে দ্রুত ফিরে আসা জরুরী

খতীবে বাঙ্গাল আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব। - ফাইল ছবি।

।। খতীবে বাঙ্গাল আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব ।।

(তৃতীয় পর্ব)

আমাদের কি হলো? আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের ঈমান এত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কেন? ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে দুর্বল করে মুসলিম জাতিসত্তাকে নির্মূল করার জন্য পৃথিবীর তৎকালীন সুপারপাওয়ার ব্রিটিশ সরকার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু উলামায়ে দেওবন্দের ত্যাগ ও কুরবানীর বদৌলতে ইসলাম ও মুসলমান নির্মূল তো দূরের কথা ব্রিটিশ রাজ এ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ব্রিটিশের প্রায় দুইশত বছরের শোষণ ও নির্যাতন এবং পরবর্তীতে ইহুদী, খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, নাস্তিক-মুরতাদ ও তাদের দোসর কাদিয়ানী সহ সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকারী গোমডরাহ-পথভ্রষ্ট দল ও গ্রুপের, ইসলাম ও ইসলামী শরীয়তের এবং ইসলামী কৃষ্টি-কালচার ও সভ্যতা সংস্কৃতি বিরোধী সকল পথ ও মতের বিরুদ্ধে এককভাবে লড়াই করে ঈমান-আমল ও সহিহ আকিদা এবং মাসলা-মাসায়েলের ব্যাপারে সর্বত্র সর্বাবস্থায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন উলামায়ে দেওবন্দ।

সেবাহী মক্তব, নূরানী, নাদিয়া’সহ কুরআন ও ফরয ইলম শিক্ষার বিবিধ পদ্ধতি, তাবলীগ, খানকাহি তালিম, ইসলাহী মজলিস, ওয়াজ-মাহফিল, ইসলামী সম্মেলন, তাফসীর ও সীরাত মাহফিল, মসজিদ ভিত্তিক জুমার বয়ান ইত্যাদি সর্বাবস্থায় সব সময় জারি রেখে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনিক আইন-কানুন যাহোক পরিবার ও সমাজে ঈমান-আকিদা এবং ইসলামী সাংস্কৃতি ও সভ্যতা রক্ষার বিপ্লবী ভূমিকা পালন করে আসছেন তারা।

যার ফলে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস, স্থিতিশীলতা, মান-মান্যতা, পারিবারিক ও সামাজিক ভারসাম্যতা অক্ষুণ্ন রয়েছে ।

ওলামায়ে কেরামগণ যদি ওয়াজ নসিহত ও দ্বীনি তালিম এর মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুলের বিধান সমাজে জারি না রাখতেন, তাহলে আইন কানুন ও প্রশাসন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, আজ এক করোনা ভাইরাসের দোহাই দিয়ে উল্লেখিত সকল প্রকার দ্বীনি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

যুগে যুগে মহামারীর ইতিকথা

করোনা মহামারি, দুষ্কর্ম ও দুর্নীতি

মহানবী (সা.)এর মহিয়সী সহধর্মীনীগণ

গুগলের ম্যাপসের যে ব্যবহার জানা থাকা চাই

অমুসলিমদের সাথে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি

মসজিদভিত্তিক সেবাহী মক্তব বন্ধ, দৈনিক তালিম বন্ধ, সাপ্তাহিক গাশত বন্ধ, তাবলীগের দাওয়াত বন্ধ, তাফসীর-দরসে কুরআন-দরসে হাদিস বন্ধ, জুমার বয়ান বন্ধ, ওয়াজ মাহফিল বন্ধ, মাদ্রাসা সমূহ বন্ধ। এক কথায় দাওয়াতী তথা ধর্মীয় সকল কার্যক্রমের প্রচার-প্রসার সবই বন্ধ।

এমনকি কোন মুসলমান ইন্তেকাল করলে মুসলমানদের দায়িত্ব হলো মৃত ব্যক্তিকে ইজ্জত ও সম্মানের সাথে জানাযা ও দাফন করা। সেই জানাযায় পর্যন্ত শোকাহত জনগণের অংশগ্রহণ বন্ধ। কারণ একটাই, ‘করোনা’ ধরে ফেলবে, ‘সংক্রমিত’ হয়ে যাবে।

কি আশ্চর্য, রাস্তাঘাটে দোকানপাটে বাজারে-বন্দরে সামান্যতম দূরত্ব নেই। সর্বত্র ভিড়, গাদাগাদি, ধাক্কাধাক্কি। নাই কোন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নাই কোন স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা, সর্বত্র দুর্গন্ধ আর আবর্জনা, সেখানে করোনা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর যেখানে ওযু’সহ পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর হুকুম পালনে যাবে, সেখানে সকল বাধা ও তথাকথিত আইন প্রয়োগ।

আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী (রাহ.)এর জানাযা নিয়ে হাস্যকর মাতামাতি, প্রশাসনে রদবদল, লকডাউন, জনগণকে হয়রানি ইত্যাদি এত বড় নাটক সাজানোর পরেও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রমাণ করতে পারেনি কেউ। তারপরেও মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী এর জানাযায় ঢাকা থেকে রওনা হওয়া ৬/৭ জনকে ফিরানোর জন্য নরসিংদী জেলার চতুর্দিকে অন্তত ৪০ জায়গায় বেরিকেড ও হাজার হাজার মানুষকে হয়রানি করা হয়।

গত ৮ই জুন বি-বাড়িয়া সরাইলের অল্পবয়স্ক আলেম মাওলানা মাহমুদ স্ট্রোক করে মারা গেলে তার জানাযায় উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন সকাল আটটায়, কিন্তু রাত দুইটায় থানার ওসি সাহেব পুলিশ বাহিনী নিয়ে রাতের অন্ধকারে পরিবারের কয়েকজনকে জোরপূর্বক জানাযা দিয়ে দাফন করতে বাধ্য করে। পরিবারের লোকজন ওসি সাহেবকে “বাজারে লোকজনের ভিড়” সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে না পেরে শুধু একটি কথাই বললেন “উপরের অর্ডার”। একই অবস্থার সৃষ্টি করা হয় বি-বাড়িয়া সদরের মুফতি নুরুল্লাহ (রাহ.)এর ছেলে মুফতি কেফায়াতুল্লাহ সাহেবের জানাযা নিয়েও।

যার ফলে সমাজের সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে ঈমান ও ইসলাম পরিপন্থী সকল প্রচারণা এবং করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষার সকল জাগতিক ব্যবস্থাপনার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট ও রোগবালাই ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়ার “আল্লাহ প্রদত্ত পন্থা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত নিয়ম পদ্ধতি এবং শরীয়ত সম্মত উপায় উপকরণ” থেকে সুকৌশলে মুসলমানদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জনগণকে ঈমান ও আমল থেকে সরানোর গভীর অপকৌশল চলছে নানাভাবে, নানা কৌশলে, নানা অজুহাতে। [চলবে]

– আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব, প্রিন্সিপাল- জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলুম ঢাকা, যুগ্নমহাসচিব- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, সহ-সভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পেতে হলে সঠিক আক্বিদা-বিশ্বাসে ফিরে আসা জরুরী (১)

করোনাভাইরাস: আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে হক্ব ও সৎকর্মে দ্রুত ফিরে আসা জরুরী (২)