Home গল্প-উপন্যাস ন্যায় বিচার

ন্যায় বিচার

।। এইচ এম আবূ সালেহ ।।

চতুর্দিকে গভীর নিস্তব্ধতা। আতংকিত-ভীত সন্ত্রস্ত গ্রাম, থানা, উপজেলা, উপশহর, শহর। সর্বত্র চাপা উত্তেজনা। করোনার ভয়াল থাবার আঘাত বহন করে চলেছে এখনও অনেক মানুষ। পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধ। এরপর মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে ঘুর্ণিঋড় আম্ফান, তারপর শুরু হয়েছে দেশব্যপী বন্যা-প্লাবন এবং নদী ভাঙ্গনের তান্ডব। অথৈ পানিতে ভাসছে অসংখ্য বনি আদম, পশুপাখি, ছোট-বড় জীব জানোয়ার। সামনের দিনগুলোতে আরো বিশাল বন্যা ও বিপদের সম্মুখিন হতে হবে এই দেশের বাসিন্দাদের- সে ভবিষ্যত বার্তাও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস! দেখা দিতে পারে দূর্ভিক্ষও!

এসব দুর্যোগ, বিপদ-আপদ, আজাব-গজব, পরিক্ষা কবে শেষ হবে কেউ জানে না! এমনতর প্রতিকুল পরিস্থিতি এবং কঠিন বিপদকালেও দিন-বদিন সতেজ-সজীব হচ্ছে বহুসংখ্যক ভয়ংকর সিন্ডিকেট! এই বর্বর সিন্ডিকেটের পায়ে দড়ি লাগাতে পারে এমন কোনো শক্তি এই দেশে আছে বলে মনে হয়না তারেক সাহেবের ।

এই সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালদের মাঝে মানবতা আর মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই। ওরা চতুস্পদ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট! ওরা বাংলাদেশের কলঙ্ক। কিছুদিন যাবৎ ষাটোর্ধ বয়সী তারেক সাহেবের কেবলই মনে হয় ওরা স্বচ্ছ আলোকমালা উপেক্ষা করে নিকষকালো অন্ধকারের দিকে ধেয়ে চলেছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সেক্টরে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে মহাশক্তিশালী বহু সংখ্যক ভয়ংকর সিন্ডিকেট কালো স্বার্থ হাসিলের লোভে, অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ার মোহে এমন কোন কাজ নেই যা ওরা করতে পারে না।

এইসব সিন্ডিকেটের কোনোটি করোনাকালের ত্রান লুটপাট করেছে, কোনোটি  মানব পাচার করেছে। ধরাছোয়ার বাইরে থেকে কোনো কোনো সিন্ডিকেট মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার অথবা সেরকারী মেডিকেলে চাকুরির ইন্টারভিউর প্রশ্নপত্র অগ্রিম বিক্রি করেছে। ওরা স্বাস্থ্ বিভাগের টেন্ডার নিয়ে অপরাধ লীলায় মেতেছে। এক সিন্ডিকেটের উপর ভর করে আরেক সিন্ডিকেট আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এরা করোনা নেগেটিভের ভুয়া সার্টিফিকেট চড়া দামে বিক্রি করে দেশব্যাপী মহামারি ছড়িয়ে দিয়েছে।

একটি বিশেষ সিন্ডিকেট নকল মাস্ক, নকল পি-পি-ই বরাদ্দ দিয়ে হাজার হাজার চিকিৎসক ও পুলিশদের জীবনের ঝুকি সৃষ্টি করছে। আরেকদল সরকারী হাসপাতালের ঔষধপত্র, নিরাপত্তা সামগ্রী বাইরে বিক্রি করে দিয়ে পকেট ভারী করতে ব্যস্ত। ওরা এসব অপকর্মকে পাপের কাজ মনে করে না। আখেরাতের জবাবদিহীতার চেতনা ওদের নেই।

আরও পড়তে পারেন-

আরেক সিন্ডিকেট বাহিনী মাদক দ্রব্য আমদানী ও বিক্রয় করে উঠতি বয়সের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন শেষ করে দিচ্ছে। এতে ওদের কোনো অপরাধবোধ নেই। অনুশোচনা তো দূরের কথা! এই মাদক চোরাকারবারী, ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের দমন করার জন্য নিয়োগ করা আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ চৌকশ দল।মাদককে পুরোপুরিভাবে নির্মূল করার জন্য মাদক সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তি এমন কি ক্রস ফায়ারেরও গোপন অনুমোদন দেয়া রয়েছে! সেই অনুমোদন সূত্রে  দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন! বন্ধুকযুদ্ধে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যাচ্ছে শত শত অপরাধী!

তারেক সাহেব নিয়মিতই এসব খবর টিভিমাধ্যমে অবলোকন করেন অথবা এফ এম রেডিওতে শোনেন। কিন্তু তার হৃদয়-মনে জেগে উঠা একটি প্রশ্নের কোনো জবাব খুঁজে পাননা তিনি! কাউকে বলতেও স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না! একদিন তিনি তার সকাল বেলার ব্যয়াম সঙ্গী জাহেদ সাহেবের কাছে বিষয়টা উত্থাপন করলেন। প্রশ্নের স্বরে বললেন- ‘আচ্ছা জাহেদ ভাই বলুনতো! মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের দমনে এত কঠোর আইন, এতো কঠিন বিচার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও মাদক আমদানী রফতানী বন্ধ হচ্ছেনা কেন’?

জাহেদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেনঃ আপনার তো অজানা ‍থাকার কথা নয়, কেন মাদক ব্যবসা, মাদকের কারবার, মাদক সেবন বন্ধ হচ্ছে না?

পত্র-পত্রিকার দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই এপ্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। গতরাতে বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন সংস্কররণে একটি অনুসন্ধানী ভয়ানক  সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বাসায় গিয়ে আপনি দৈনিক পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করনেও তা দেখতে পারবেন। সেখানেই আপনি খুঁজে পাবেন আপনার কৌতুহলের জবাব। আপনাকে আমি আর কী বলবো! ‘ঠিক আছে জাহেদ ভাই আমি বাসার দিকে যাচ্ছি’ এই বলে জাহেদ সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলেন তারেক সাহেব।

হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে দৈনিক পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাতে শুরু করলেন। একাধিক পত্রিকা রাখেন তারেক সাহেব। তিনি দেখতে পান প্রত্যেকটি পত্রিকার (বাংলাদেশ প্রতিদিন, প্রথম আলো, নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব) প্রধান হেডিংয়ে একই বিষয় স্থান পেয়েছে। যার সার সংক্ষেপ হলো- “টেকনাফ থানার জনৈক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরকে ঠান্ডামাথায় পরপর চারটি গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে একজন এস আই।

পরবর্তী খবরে প্রকাশিত হয়েছেঃ ঐ কর্মকর্তা একটি ভয়ংকর সিন্ডিকেটের প্রতাপশালী সদস্য। বাহ্যত মাদক দমনের আড়ালে এই সিন্ডিকেট মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালানে সহযোগীতা, তদুপরি মাদক বেচাকেনা বা সেবনের সাথে জ[ড়িত নয় এমন ধনী-গরীব, নিরঅপরাধীদের ধরে এনে মোটা অংকের চাঁদা আদায়, চাঁদা দানে অক্ষম হলে কঠোর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা, এসবই এ ভয়ংকর বর্বর সিন্ডিকেটের নিয়মিত কাজ। এরা কারো তোয়াক্কা করে না। কেননা ওদের শত সহস্র অপরাধ ঢেকে রাখার জন্য উপরওয়ালা আছে।

আরেকটি খবরে বলা হয়েছে- ‘এই জঘন্য হত্যা ও বর্বর অপরাধের যথাযথ ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী’।

শেষ খবরটিতে সরলমনা তারেক সাহেব কিছুটা স্বস্তি লাভ করলেন। তার হৃদয়মনে ক্ষীণ স্বরে বেজে উঠলো-

“মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে-
সব লম্পটের বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা…..”

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।