Home সম্পাদকীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ‘করোনা মহামারি’র প্রকোপ ঠেকাতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার মার্চের শেষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। অফিস-আদালতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি এবং যানবাহান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করায় বাংলাদেশে লকডাউন শুরু হয় সেই মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে। এই লক ডাউনের সময় প্রায় সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়।

মূলত: মার্চের শেষ ভাগে শুরু হওয়া এই লকডাউন এপ্রিল এবং মে এই দুই মাস কার্যকর ছিল। জুনের শুরু থেকেই সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউন শিথিল করা শুরু করে। সীমিত পরিসরে অফিস, কলকারখানা, দোকানপাট, শপিং মল চালু করে। যাতাযাতের জন্য বাস, ট্রেন, লঞ্চ এবং বিমান চলাচলও শুরু করে। এভাবে পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করে এবং ক্রমান্বয়ে এর পরিধি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।

বর্তমানে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে না। এর ক্ষতি সুদূরপ্রসারী। একটা দেশ ও জাতি উন্নত ও গড়ে ওঠার জন্য জনগণ কতটা শিক্ষিত, তার উপর প্রধানত: নির্ভর করে। দীর্ঘ সময় পড়াশোনার একাডেমিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে কিশোর-তরুণদের মানসিক পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অনেকে শিক্ষার বাইরে অনেক আচার-অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ছে, যেটা আগামীতে শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদেরকে অনেক পেছনে ঠেলে দিতে পারে।

আরও পড়তে পারেন-

যেহেতু করোনার প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে এবং দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে ইতোমধ্যে শিক্ষাব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে, তাই শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়ার কারণে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে প্রয়োজনে পুনরায় বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ তো হাতেই রয়েছে। এমনকি, জুন থেকেই প্রয়োজনে একই ক্লাসকে দুই ভাগ করে একদিন পর পর, এভাবেও পরীক্ষামূলক চালু করা জরুরী ছিল। তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক ক্ষতি এড়ানো যেতো।

সরকার অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে, অনেক শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন এবং অনেক স্টুডেন্ট অনলাইনে ক্লাস করছে। এটা বিদ্যমান শিক্ষা পদ্ধতির বিকল্প নয়। এটি হচ্ছে সহায়ক মাত্র। আর দেশের সকল স্টুডেন্টের কাছে অনলাইনে ক্লাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণে স্টুডেন্টরা লেখাপড়া থেকে কিছুটা হলেও দূরে আছে। ফলে তারা অন্য কিছুতে মনোযোগী হয়ে পড়ছে, যা তাদের ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়ার বিকল্প নেই।

যেহেতু করোনাভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল হয়নি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া দরকার, সেহেতু শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে আর এ পরিবর্তন হতে হবে বাস্তবসম্মত। এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি।

ছাত্র শিক্ষক সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে আসবে এবং ক্লাস শেষ করেই বাসায় চলে যাবে। স্টুডেন্টরা দূরত্ব বজায় রেখেই ক্লাসে বসবে এবং কোনো ধরনের জমায়েত করবে না। স্টুডেন্টদের ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা যাবে না। স্টুডেন্টরা তাদের সুবিধা এবং ইচ্ছামত ক্লাসে উপস্থিত থাকবে। এ বছর প্রাইমারী এবং হাই স্কুলে কোনো মিড টার্ম পরীক্ষা হবে না। শুধু মাত্র ফাইনাল পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা এবং সেটার প্রশ্ন হবে এমসিকিউ। আগে যেখানে পরীক্ষার সময় ছিল তিন ঘণ্টা, সেখানে এখন পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা। ফলে একদিনে কয়েক শিফটে পরীক্ষা নেয়া যাবে এবং এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিড় কম হবে।

পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা ঠিক হবে না এবং তা বরাবরের মতই অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেই পরীক্ষার সময়ও হবে এক ঘণ্টা এবং প্রশ্নপত্র হবে এমসিকিউ। একইভাবে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কোনটাতেই শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামত ক্লাসে উপস্থিত থাকবে এবং পরীক্ষা দেবে। আর করোনার প্রভাব পুরোপরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা এবং প্রশ্নপত্র হবে এমসিকিউ। কোনো স্টুডেন্ট অসুস্থতার কারণে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হতে না পারলে তার পরীক্ষা বাসায় নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে শিক্ষাবর্ষ ছয় মাস পিছিয়ে গেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছয় মাসের সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষার্থীদেরও অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাদান পদ্ধতিকে পুনর্বিন্যাস করে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে উপযোগী পদ্ধতি ও ব্যবস্থা অবলম্বন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সত্ত্বর খুলে দেওয়ার উপায় নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হয়, দেশ ও জাতির আগামী দিনের কাণ্ডারিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।