Home ইসলাম মুহাররমের শিক্ষা, আমল ও ফযীলত

মুহাররমের শিক্ষা, আমল ও ফযীলত

।। আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব ।।

হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররম। মুহাররম শব্দের অর্থ হলো হারাম, নিষিদ্ধ ও পবিত্র। মুহাররম মাসসহ আরো তিনটি মাস গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদা সম্পন্ন মাস। আরবি বারো মাসের মধ্যে মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এ চারটি মাস হলো- ১ মুহাররম, ২. রজব, ৩. যিক্বাদাহ, ৪. যিলহজ্ব।

মুহাররম মাসের আমলের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হযরত রাসূল (সা.) মদিনায় এসে দেখেন যে, ইহুদীরা আশূরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদেরকে বললেন, এ দিনের কোন বিশেষত্বের কারণে তোমরা রোজা পালন কর?

তারা বলল, এটি একটি মহান দিন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা মূসা (আ.) ও তার জাতিকে পরিত্রাণ দান করেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে নিমজ্জিত করেন। এ জন্য হযরত মূসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এ দিন রোজা পালন করেন। তাই আমরা এ দিন রোজা পালন করি।

তখন হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, হযরত মূসা (আ.)এর বিষয়ে আমাদের অধিকার বেশি। এরপর তিনি এ দিন রোজা পালন করেন এবং রোজা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করনে।’ (মুসলিম- ২৭১৪)।

আরও পড়তে পারেন-

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা। আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। (সহিহ মুসলিম- ১/৩৫৮)

তাই এর পূর্ণ অনুসরণ ও আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে উম্মতের কল্যাণ। আবু কাতাদা (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সা.)কে আশূরার রোজার ফযীলত সম্পর্কে আরজ করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস নং- ১১৬২)

হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, ‘জাহিলি যুগে কুরাইশরা আশুরার দিনে রোজা পালন করতো। রাসূলুল্লাহ (সা.)ও সেকালে রোজা পালন করতেন। মদিনায় এসেও তিনি রোজা পালন করতেন এবং অন্যদেরও নির্দেশ দিলেন।

প্রকৃত সুন্নাত হলো- আগের দিন ৯ মুহাররম বা পরের দিনের সঙ্গে ১১ মুহাররম মিলিয়ে আগে পরে মোট ২ দিন রোজা রাখা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা মুহাররমের নবম ও দশম দিবসে রোজা রাখ। (তিরমিযী- ৭৫৫)।

এ মাসে মহানবী (সা.)এর দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রাযি.) ও তার সঙ্গী সাথীদের বর্বরোচিতভাবে শহীদ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুহাররম তথা কারবালা বা আশূরার ইতিহাস নতুনভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ মাসে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। মুহাররম মাসে আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। মুহাররম মাসেই হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ায় জান্নাত থেকে বের হতে হয়ে হয়েছিল।

আল্লাহতায়ালা এ মাসে হযরত আদম (আ) ও হযরত হাওয়া (আ.)এর তওবা কবুল করেছিলেন। হযরত ইউনুছ (আ.) চল্লিশ দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তি পেয়েছিলেন। হযরত ইয়াকুব (আ) তার প্রিয় পুত্র হযরত ইউসূফ (আ.)এর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। হযরত সোলায়মান (আ.) হারানো রাজত্ব ফিরে পেয়েছিলেন। হযরত নূহ (আ.) মহাপ্লাবন থেকে বাঁচতে বিশাল আকারের কিস্তি তৈরী করেছিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.)কে নমরূদের আগুন থেকে রক্ষা করেছিলেন। হযরত আইয়ুব (আ.) কুষ্ঠু রোগ মুক্ত হয়েছিলেন। ফেরাউন দলবলসহ নীল নদে ডুবে নিহত হয়েছিল।

এ মাসের আমলসমূহ পালন করার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদের পূর্বেকার পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। তাই আমাদেরকে বেশি বেশি নফল রোজা, নফল নামাজ ও তাসবিহ তাহলিল পাঠ করতে হবে।

মুহাররম উপলক্ষে হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, ব্লেড বা ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা, নিজের শরীর থেকে চাবুক মেরে রক্ত বাহির করা, ইত্যাদি শরীয়ত বিরোধী কার্যক্রম করে বিরত থেকে, আসুন আমরা সকলেই মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার লক্ষ্যে, কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুক! আমীন।

– আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও মুহতামিম- জামিয়া কাসেমিয়া আশরাফুল উলূম-ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।