Home ইতিহাস ও জীবনী ভিলফ্রেদো পারেতো: যার মাথা থেকে উৎপত্তি হয়েছিল ফ্যাসিবাদের

ভিলফ্রেদো পারেতো: যার মাথা থেকে উৎপত্তি হয়েছিল ফ্যাসিবাদের

ফ্যাসিবাদের জনক ইতালির বেনিতো মুসোলিনি- এ কথা সকলের জানা। ১৯১৯ সালে মুসোলিনি ফ্যাসিস্ট পার্টির ভিত্তি স্থাপন করলেও ফ্যাসিবাদের প্রবর্তক কিন্তু তিনি নন; এর প্রবর্তক বা আবিষ্কর্তা ভিলফ্রেদো পারেতো (১৮৪৮-১৯২৩)।

পারেতো ছিলেন দার্শনিক নীৎসে ও নিক্কোলো মাকিয়াভেল্লির অনুরাগী। তাই ফ্যাসিবাদ নামক রাজনৈতিক মতবাদটি তিনি তৈরি করেছিলেন এ দুজন দার্শনিকের নীতির ওপর ভিত্তি করেই।

সাবালক হয়ে তিনি যখন রাজনীতিতে অংশ নিতে শুরু করেন, ঠিক তখনই হোঁচট খান নিজ আদর্শের কাছে। কারণ তার মুক্ত বাণিজ্যিক নীতি ও উদার বিচার ব্যবস্থা সরকারি মহল পছন্দ করেনি। এমনকি তার বাবাও ছিলেন মানবতাবাদী। আর সেজন্য একবার ইতালি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তারা।

তাকে যেন এই আঘাত আর সহ্য করতে না হয়, তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দুর্বল নয়, সবলদের মতো জীবন পার করবেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, মিথ্যার এই দুনিয়ায় ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে তাকে নিতে হবে মিথ্যা ও অন্যায়ের আশ্রয়। তাই মানবতার আদর্শ ছেড়ে পারেতো হয়ে উঠলেন শক্তির পূজারি। নিজেকে এতটাই বদলে ফেলেছিলেন, মানবতাবাদ, উদারনীতি ও সমাজবাদের চরম বিরোধিতা শুরু করেন।

পারেতোর এই নেতিবাচক তত্ত্বকে মুসোলিনি গ্রহণ করেন তার ফ্যাসিস্ট পার্টির মুখ্য কর্মসূচী রূপে।

সমাজের সর্বোৎকৃষ্ট রূপ কী হতে পারে? 

এমন প্রশ্নের জবাবে পারেতোর উত্তর ছিল, ‘সমাজের সেই রূপ, যা আমার চিন্তাধারার পক্ষে সবচেয়ে অনুকূল।’

তার মতে ,সামাজিক ব্যবস্থার মূল হবে জন্ম-নায়কের সিদ্ধান্ত।তিনি আরও বিশ্বাস করতেন, প্রত্যেক সমাজেই জন্মগত প্রতিভা নিয়ে কোনো না কোনো ব্যক্তি জন্মায়, যার সবরকম প্রতিভা, সাহস ও যোগ্যতা থাকে।

তিনি মনে করতেন, জন্ম-নায়কের সবধরনের ক্ষমতাই থাকে, শুধু একটি জিনিস তিনি তৈরি করতে পারেন না। সেটা হলো, তার নিজের মতো একজনকে জন্ম দেওয়া।

প্লেটোর মতো তিনিও প্রত্যেক প্রজন্মের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি থেকে জন্ম-নায়ক স্থির করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, সমাজ পরিচালনার ভার এই নায়কদের হাতেই থাকা উচিত। আর এজন্য জনতার মত প্রকাশ, চিন্তা করা, কোনো কিছু করার স্বাধীনতা না থাকাই সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক।

তিনি বিশ্বাস করতেন, জনতার কাজ হবে শুধু নায়কের অনুগামী হওয়া।

বিপ্লব সম্বন্ধে পারেতোর মতাদর্শ ছিল, যখন নিম্নবর্গের মাঝে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির আধিক্য এবং উচ্চবর্গের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের অভাব দেখা দেয়, তখন সমাজে বিপ্লব জন্ম নেয়। আর এই বিপ্লব ঠেকানোর উপায় হলো, মাঝে মধ্যে নিম্নবর্গের লোকদের উচ্চবর্গের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। তা না হলে সমাজে স্থান নিবে সাম্য ও মৈত্রীর পক্ষে   বিপ্লব। কিন্তু বিশ্বমৈত্রী, সাম্য- এসব ধারণা  ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের পক্ষে দুর্বলতা। অপরদিকে, ধোঁকাবাজি , মিথ্যাচার, বিশ্বাসঘাতকতা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য গুণ।

আরও পড়তে পারেন-

প্রফেসর অয়েলসোয়ার্থ ফাবিশের কথায়, ‘পারেতো সদাচারের নামকেও সাদা চোখে দেখতে পারতেন না। সত্য, ন্যায়, জনমত তার কাছে ছিল ঘৃণার বস্তু।’

পারেতো ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ও গণিতজ্ঞ। তিনি সুজারল্যান্ডের লুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। বেনিতো মুসোলিনি ছিলেন তার অন্যতন ছাত্র। ১৯২২ সালে মুসোলিনি যখন ইতালির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন, পারেতোকে তিনি একটি উচ্চপদ দেন। কিন্তু তার পরের বছরই মৃত্যুবরণ করায় পারেতো আর ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের দেশ ইতালির সেবা করে যেতে পারেননি!

নিজের আবিষ্কারের প্রতিফলন দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি ফ্যাসিবাদ প্রবর্তক ভিলফ্রেদো পারেতোর।

  • সূত্র: রাহুল সংস্কৃতায়নের ‘মানব সমাজ’ গ্রন্থ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।