Home ইতিহাস ও জীবনী ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের জীবনপুঞ্জ

ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের জীবনপুঞ্জ

-প্রতীকি ছবি।

আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন যে ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা মানবজাতির জীবদ্দশায় ও তার পরবর্তী অবস্থায় সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। অতীতের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, কিছু জাতি তাদের কুকর্মের ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে, আবার অন্যরা তাদের ভালো কাজের ফলে সাফল্য অর্জন করেছে।

নবীদের আবির্ভাবের সাথে সম্পর্কিত ঘটনা, যেমন: আদম, নুহ, ইব্রাহিম এবং মুসা; এবং কিছু খারাপ ঘটনা, যেমন: ফেরাউন, নিম্রোদ, ‘আদ এবং সামুদ- এদের কথা শুধুমাত্র বিস্ময় ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে আমাদের জানানো হয়নি। বরং এই ধরনের শিক্ষামূলক গল্পগুলির মূল উদ্দেশ্য হল, কুকর্মের বিরুদ্ধে সতর্ক করা, ভালো কাজ করার প্রতি উৎসাহিত করা এবং আমাদের জীবন ও তার পরবর্তী অবস্থাতেও সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের বর্তমান ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে সাবধান থাকা।

ইসলামী ইতিহাস ও কুরআন

কুরআন হ’ল আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত গ্রন্থ এবং এটি এখনও তার খাঁটি এবং অবিকৃত আকার বজায় রেখেছে। এটি শরিয়তের অন্যতম উৎস এবং অতএব এর নির্দেশ করা পথে হেঁটেই আমরা এই জীবনে সাফল্য ও তার পরে আমাদের জান্নাত লাভ নিশ্চিত করতে পারব। এই কারণেই যত্ন সহকারে কুরআনের অধ্যয়ন ও মনন প্রয়োজন।

আরও পড়তে পারেন-

কুরআনের একটি বড় অংশে ইসলাম পূর্ববর্তী দেশগুলি সম্পর্কে বলা রয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই তাদের কাছে প্রেরিত নবীকে প্রত্যাখান করেছিল এবং তাঁর প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রদর্শন করেছিল। এই ধরনের আচরণের ফলে তাদের উপরে আল্লাহর ক্রোধ বর্ষিত হয়েছিল। আল্লাহ আমাদের বলেছেন যে, এই ধরনের ধ্বংসের ঘটনাবলী পরবর্তী প্রজন্মকে সতর্কবার্তা হিসেবে জানানো উচিত।

অতীতে ঘটে যাওয়া কুকর্মের বিরুদ্ধে মানবজাতিকে সতর্ক করতে এবং এই ধ্বংসের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে আল্লাহ সমস্ত নবীদের প্রেরণ করেছিল। আরব বিশ্বে অতীতে আল্লাহকে অস্বীকার ও অবহেলা করা দেশ ও জাতিগুলির দুরবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং তার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার দ্বারা, সেই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকার মাধ্যমে, বহু মহান নেতা ও সংস্কারক পরবর্তী কালে সুষ্ঠু শাসন গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন।

মুসলমানদের জীবনগাঁথা

বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একমাত্র মুসলিমরাই বরাবর সৎ কর্ম ও মহৎ জীবনযাপনের আদর্শ মেনে চলেছে। বয়োঃজ্যেষ্ঠ এবং বীরপুরুষদের এমন জীবনযাপনের বহু অকাট্য প্রমাণ ইসলামী ইতিহাসে মজুত রয়েছে। এমন একটা সময় ছিল, শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরস্পরের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল।

সর্বাধিক গৌরবময় ইতিহাসের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা বরাবরই নিজেদের ইতিহাস সংরক্ষণের বিষয়ে সতর্ক ও যত্নবান ছিলেন না। খুব কম সংখ্যক মুসলিমই নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে লিখিত বিবরণ রেখে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। তার ফলস্বরূপ বর্তমানে যে মুসলিম ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, তার অধিকাংশই হল ইসলাম ও মুসলিম-বিরোধী ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের লিখে যাওয়া বিকৃত ইতিহাস।

ইংরেজিতে লেখা এই ইতিহাসের পরিবর্তে ইবনে কাসির, ইবনে হিশাম, ইবনে আল-আসির, আত তাবারি, মাসুদি এবং এমন আরও বহু মুসলিম ঐতিহাসিকের লিখে যাওয়া বিবরণের উপরে মুসলমানরা অনেক বেশি ভরসা করতে পারেন। ইসলামী ইতিহাস সম্পর্কিত এই ধরনের বইগুলিতে অতীত মুসলিম যুগের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলামী ইতিহাসের গভীর অধ্যয়ন প্রয়োজন, কারণ তার থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলি অন্যান্য ব্যক্তি এবং সমাজের পক্ষে লাভজনক হবে।

ইতিহাস রচনা

ইতিহাস রচনার শিল্পের সাথে সম্পর্কিত মুসলমানদের প্রথম স্মরণীয় কাজ হল হাদীস বিজ্ঞানের বিন্যাস ও সংকলন। একই ভাবে তাঁদের খলিফা, অভিজাতবর্গ, রাজা এবং স্কলারদের বিবরণ তাঁরা নথিভুক্ত করেছিলেন- যাকে অবশ্যই ইসলামী ইতিহাসের খাজানার ভাণ্ডার বলা যেতে পারে। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে, ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের ইতিহাস রচনার শিল্প দেখে মুসলিমরা বিস্মিত হন এবং তার প্রশংসা করে থাকেন। কিন্তু সেই মুসলমান ভাইদের অনেকেই জানেন না যে, প্রথম আধুনিক ইতিহাস লিখেছিলেন প্রখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন।

মনে রাখতে হবে, ইতিহাস শিক্ষা ভালো হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি করে, ভালো কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং অপরাধমূলক কাজ করা থেকে বিরত করে। এটি জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ ঘটায়, দূরদৃষ্টি বাড়ায় এবং সতর্কতা ও সজাগ বোধ তৈরি করে। এর দ্বারা ধৈর্য এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার বিকাশ হয় এবং এই শিক্ষা দুঃখ ও হতাশাকে দূরে রেখে হৃদয় ও মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

ইতিহাস অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষ প্রতিনিয়ত নবী, বাদশাহ, বিজয়ী বাদশাহ, আল্লাহের কাছে নিজেকে সমর্পণকারী ও বিদ্বান এবং তাঁর পাশাপাশি জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী পুরুষদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন। বহু মহান শাসক, সামরিক নেতা এবং চিন্তাবিদরা যে সমস্ত ভুল করেছেন, সেগুলির পুনরাবৃত্তি করার হাত থেকে মানুষ নিজেকে বাঁচাতে পারে ইতিহাস অধ্যয়নের মাধ্যমে। ইতিহাস ব্যতীত অন্য কোনও বিষয় নিয়ে চর্চা করলে তা হৃদয়কে এমন বিশুদ্ধ আনন্দ এবং এত ধরনের উপকার প্রদান করতে পারে না।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।