Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উত্থান, হতাশ ভারত

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উত্থান, হতাশ ভারত

দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিতে যথেষ্ঠ হতাশা দেখা দিয়েছে ভারতে। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো নয়া দিল্লিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং এসব দেশ তাদের কৌশলগত অর্বিটে বা চক্রের মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু তারা ক্রমশ তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে সহায়তা পাওয়ার জন্য বিকল্প শক্তি হিসেবে বেইজিংয়ের দিকে ঘুরে যাচ্ছে। চীন স্মার্টলি কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক হাতিয়ারকে ব্যবহার করেছে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে গভীর করতে। আর এটা করা হয়েছে তাদের নিজেদের জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে। যেসব দেশ স্বেচ্ছায় তাদেরকে ভূ-কৌশলগত সুবিধা দিতে পারবে তাদের সঙ্গে তারা প্রাথমিকভাবে যুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফর করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। এ সময়ে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।

চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন এই দু’নেতা। ভবিষ্যতে পায়রা বন্দরে বিদ্যুত শক্তির প্রাণকেন্দ্র করতে বিআরআই উন্নয়নে সুবিধা চায় চীন। প্রকৃতপক্ষে ২০১৬ সালে এই বন্দরটি চীনের নৌবাহিনী প্রথম সফর করে। এরপর ২০১৭ সালে তারা আবার চট্টগ্রাম সফর করে। বাংলাদেশে একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। ২৫ কোটি ডলারের এই কাজের চুক্তিতে ভারতকে পরাজিত করতে শতকরা ৯৭ ভাগ বাংলাদেশি পণ্যের জন্য জুনে বাজার উন্মুক্ত করে দেয় চীন। অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইঙ্গিত দেন, তিনি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত।

২০১৮ সালের শেষের দিকে বিস্ময়কর নির্বাচনী ফলে চীন তার অনুগত মালদ্বীপের শক্তিধর আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে হারায়। তবে যাই হোক, দেশটি নয়া দিল্লিকে অগ্রাধিকার দেয়ার দিকে ফিরে গেলেও প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ’র অধীনে চীন-মালদ্বীপের সম্পর্ক আন্তরিক রয়েছে।

মালদ্বীপ বিআরআই’তে অংশ নেয়ার ফলে যে বিশাল ঋণ করেছে, তা নিয়েই ভারতের যত মাথাব্যথা। বিশেষ করে চায়না-মালদ্বীপ ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজসহ আরও বেশ কিছু প্রকল্প- যেমন বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ সমাপ্ত করা মালদ্বীপকে একটি অসামর্থ ও বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে গেছে। এক হিসাব মতে, ২০২১ সালে মালদ্বীপ সরকারের রাজস্বের শতকরা ৫৩ ভাগ পাওনা হবে বেইজিং। ভারত মহাসাগরে যোগাযোগের যে বিস্তৃত পথ রয়েছে, সেখান দিয়ে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ জ্বালানি আমদানি হয়, শতকরা ৫০ ভাগ বাণিজ্য চলে। এর ফলে ভারতের নজরের মধ্যে রয়েছে মালদ্বীপ। এক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।

নেপাল নিয়েও ভারত ক্রমবর্ধমান হারে উদ্বিগ্ন। ২০১৯ সালে চেন্নাইয়ে দ্বিতীয়বার অনানুষ্ঠানিক সামিট হয় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে। এরপর শি জিনপিং সরাসরি চলে যান কাঠমান্ডুতে। এর মধ্য দিয়ে ২৩ বছরের মধ্যে তিনিই ওই দেশটি সফরে যাওয়া প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ওঠেন। সেখানে তিনি বিআরআইয়ের অধীনে ২০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে নেপালের সঙ্গে উন্নয়ন ও সংযুক্তি উন্নততর করে চীন। বিশেষ করে এই সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয় ট্রান্স-হিমালয়ান মাল্টি ডাইমেনশনাল কানেকটিভিটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। দুই দেশ আরো স্বীকৃতি দেয় যে, তিব্বত হলো চীনের আভ্যন্তরীণ বিষয়।

আরও পড়তে পারেন-

মাউন্ট এভারেস্ট বিষয়ে তারা একটি চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করে এ মাসে। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে যে অভিন্ন মানসিকতা গড়ে উঠছে তা প্রকাশ পায় এবং এ ঘটনাগুলো ঘটছে তখন, যখন হিমালয়ের পাদদেশে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চীন-ভারত উত্তেজনা বিরাজমান। এ ছাড়াও চীন ও নেপালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। গত মাসে নেপাল সফর করেছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহে। তিনি প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন, নেপাল ভূখন্ডের অখ-তা রক্ষায় সহায়তা করবেন। এতে ভারত-নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সীমান্ত বিরোধ আরো বাড়বে বলে মনে করা হয়।

সর্বশেষ, শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় ফিরেছেন রাজাপাকসে ভাইয়েরা। সেখানে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মাহিন্দ রাজাপাকসে। বিষয়টি সম্ভবত ভারতের জন্য চালেঞ্জিং হবে। অতীতে, নয়া দিল্লির চেয়ে বেইজিংয়ের প্রতি এবং অবকাঠামোখাতে চীনা বিনিয়োগের প্রতি আসক্তি দেখিয়েছেন তারা। প্রকৃতপক্ষে বিআরআইয়ের মাধ্যমে কলম্বো সিটি বন্দর প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা। এর পরে তারা দক্ষিণে হাম্বানতোতা বন্দরের মালিকানা দিয়েছে চীনকে। পাশাপাশি ভারত মহাসাগরে গুরুত্বপূর্ণ সামুদিক লেনও তারা চীনের মালিকানায় দিয়েছে।

সম্প্রতি খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, রাজাপাকসে ভাইয়েরা হাম্বানতোতা বন্দর নিয়ে এ সময়ে নতুন করে চুক্তি করার চেষ্টা করছেন। এমন খবরের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াকে একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, তার বক্তব্যকে ভুলভাবে মিডিয়ায় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার অস্তিত্ব নেই। গত মাসে রাজাপাকসে ভাইয়েরা দৃশ্যত বিআরআই ইস্যুদে দ্বিমুখী অবস্থান নেন, যদিও সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা নিয়ে একটি সামিট হয়েছে।

এসব ঘটনা এটাই প্রদর্শন করে যে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে সহসাই বিদায় নিচ্ছে না চীন। পক্ষান্তরে, তারা এখানে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করছে। তাই ভারতকে সম্ভবত অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হবে। এ অঞ্চলে চীনের সফলতাকে শেষ করে দিতে তাদেরকে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমমনা অংশীদারদের সঙ্গে তাল মিলাতে হবে।

সূত্র- সাউথএশিয়ানমনিটর।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।