Home ইতিহাস ও জীবনী ইসলামের ইতিহাসে সর্বসেরা হাসপাতাল কোথায় ছিল?

ইসলামের ইতিহাসে সর্বসেরা হাসপাতাল কোথায় ছিল?

-ফাইল ছবি।

শাসন ক্ষমতা যখনই এক রাজবংশের হাত থেকে অন্য রাজবংশের হাতে গিয়েছে তখনই ইসলামী খিলাফত সাম্রাজ্যের রাজধানী পরিবর্তিত হয়েছে। এভাবে, প্রতিটি রাজধানী শহরে একটি করে গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল সেন্টার গড়ে উঠেছিল। ফলত, ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, ইসলামী বিশ্বজুড়ে নির্মীত হয়েছিল বহু চিকিৎসা কেন্দ্র।

যেহেতু ইতিহাস একটি বিস্তৃত সময়ের আলোচনা, তাই এই শতাব্দী জুড়ে নির্মীত সমস্ত হাসপাতালের বর্ণনা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। সেই কারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়া হয়েছে, এবং নির্মাণ অঞ্চল অনুযায়ী সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে-

আশ-শাম (লেভান্ত)

বর্তমানে সিরিয়া, লেবানন, জর্ডন এবং প্যালেস্তাইন নামে পরিচিত এলাকা সেই সময় আশ-শাম হিসেবে পরিচিত ছিল।

আরও পড়তে পারেন-

দামাস্কাস

ইসলামের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত হাসপাতালটি ৭০৬ সালে দামাস্কাসে উমাইয়া খলিফা, আল-ওয়ালিদ (হামার্নেহ, ১৯৬২) দ্বারা নির্মীত হয়েছিল। মধ্যযুগে দামাস্কাসে নির্মীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়েছিল আন-নুরী হাসপাতাল, ১১৫৬ সালে রাজা নূর আদল-দীন জিংকির নামানুসারে।

এই হাসপাতালটি ক্রুসেড যুদ্ধের সময় নির্মাণ করা হয়েছিল। এই হাসপাতাল পরিষেবার দিক থেকে শ্রেণিভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি একটি দুর্দান্ত প্রথম শ্রেণির মেডিক্যাল স্কুল ছিল। তখন মুদ্রণ প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত না হওয়ায় বই হাতে লেখা হত। ফলে সেই সময় বই ছিল দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্য। তবু এই মেডিক্যাল স্কুলের গ্রন্থাগার ছিল সেই আমলের সর্বসেরা।

এখান থেকেই ডাক্তারি পড়েছিলেন ইবনে-আনল নাফিসের মতো স্বনামধন্য চিকিৎসক, যাঁকে আজও ফুসফুসের কার্যকলাপ প্রক্রিয়ার আবিষ্কর্তা হিসেবে সারা বিশ্ব মনে রেখেছে। এখনও এই হাসপাতালের ভগ্নাংশ রয়েছে।

জেরুজালেম

১০৫৫ সালে, ক্রুসেড যোদ্ধারা সেন্ট জনস হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন। একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, একে এতটা বিস্তৃত করা হয়েছিল যে এর মধ্যে একটি হাসপাতাল, নাইটদের জন্য একটি প্রাসাদ এবং নার্সিং সিস্টারদের জন্য একটি কনভেন্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিপুল সংখ্যক রোগী, তীর্থযাত্রী এবং আহত সৈনিক এখানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতেন।

১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সালাহ আদ-দ্বীন জেরুজালেমকে মুক্ত করার পরে, এই হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে আল-সালাহানী হাসপাতাল করা হয়। তিনি হাসপাতালটি অনেক বড় করেছিলেন, এবং ১৪৫৮ সালে ভূমিকম্পের ফলে ধ্বংস হওয়ার আগে পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা হত।

ইরাক ও পারস্য

বাগদাদ: ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আবু-জাফর আল-মনসুর দ্বারা আব্বাসীয় রাজবংশের রাজধানী হিসাবে বাগদাদ-কে বেছে নিয়েছিলেন এবং তখন এই শহর নির্মাণ করা হয়েছিল। ৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি জিন্দি শাপুর মেডিক্যাল স্কুলের প্রধান, জুডিস ইবনে-বাবতীশু’কে রাজ চিকিৎসক হিসাবে নিয়োগ এবং বাগদাদের গৌরব ও সমৃদ্ধি অনুযায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব দেন।

হারুন আরল-রশিদ ৭৮৬-৮০৯ খ্রিস্টাব্দ) শাসনভার গ্রহণ করার পরে ইবনে-বাবতীশু’র নাতি এবং রাজ চিকিৎসক জিব্রিলকে বাগদাদ হাসপাতাল তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

৯১৮ খ্রিস্টাব্দে, খলিফা আল-মুজতাদির বাগদাদে দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। একটি ছিল শহরের পূর্ব প্রান্ত, খলিফা তাঁর মায়ের নাম অনুসারে সেটির নাম রেখেছিলেন আসল-সায়িদাহ হাসপাতাল। অপরটি ছিল শহরের পশ্চিম প্রান্তে, নিজের নামানুসারে সেটির নাম রেখেছিলেন, আল-মুজতাদিরি হাসপাতাল।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের নাম হল আল-আদুদি হাসপাতাল। এটি বাদশাহ আদুদ আল্ড-দাওলার আমলে ৯৮১ সালে নির্মীত হয়েছিল। ১২৫৮ সালে চেঙ্গিস খানের নাতি হোলাগু-র নেতৃত্ব বাগদাদ অভিযানের সময় এই হাসপাতালটি ধ্বংস হয়েছিল।

উত্তর আফ্রিকা

মিশর

আল ফুস্তাত: ৮৭২ খ্রিস্টাব্দে, আহমদ ইবনে-টুলুন বর্তমানে পুরানো কায়রো-র অধীন আল-ফুস্তাত শহরে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন যার নাম ছিল আল-ফুস্তাত হাসপাতাল। এটি ছয় শতাব্দী ধরে কায়রোর বাসিন্দাদের পরিষেবা প্রদান করেছিল।

কায়রো: ১২৮৪ খ্রিস্টাব্দে, রাজা আল-মনসুর একটি বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন যার নাম ছিল কালাওয়ুন আল-মনসুরি হাসপাতাল। এর নির্মাণের পেছনের গল্পটি আকর্ষণীয়। ক্রুসেডারদের

সাথে লড়াই করার সময় রাজা আল-মনসুর কালাউন মুসলিম সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। পবিত্র ভূমিতে থাকাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আন-নুরি হাসপাতালে ভর্তি হন।

সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, কখনও মিশরের শাসক হলে তিনি কায়রোতে একটি দুর্দান্ত হাসপাতাল তৈরি করবেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, সেখানে অসুস্থ, দরিদ্র এবং ধনী সকলের সমান ভাবে চিকিৎসা করা হবে। (হামারনেহ, ১৯৬২)।

ইবনে-বতুতা এবং আল-কালকশান্দির মতো সমসাময়িক পর্যটক ও ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে জানা যায়, এটি সেই সময়ের সেরা হাসপাতাল ছিল।

বর্তমানে এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা হয় এবং এর নামকরণ করা হয়েছে কালাউন হাসপাতাল। এর অসাধারণ প্রাচীন দরজাটি কায়রোর ইসলামী যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

তিউনিসিয়া

৮৩০ খ্রিস্টাব্দে, যুবরাজ প্রথম জিয়াদাত আল্লাহ, কায়রওয়ান শহরের আদল-দিম্নাহ জেলায় আল-কায়রওয়ান হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিউনিসিয়ার সমস্ত হাসপাতালকে বিমরিস্তানের পরিবর্তে ডিম্নাহ নামে অভিহিত করা হত, এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ যার অর্থ একটি হাসপাতাল।

মরক্কো: ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা আল-মনসুর ইয়া’কুব ইবনে-ইউসুফ তাঁর রাজধানী মারাকেশে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন এবং এর নাম রেখেছিলেন মারাকেশ হাসপাতাল। সেই আমলে, এই হাসপাতালে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল।

আন্দালুসিয়া

১৩৬৬ খ্রিস্টাব্দে, যুবরাজ মুহাম্মদ ইবনে-ইউসুফ ইবনে নসর গ্রানাডা শহরে গ্রানাডা হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন। এই হাসপাতাল স্পেনের ইসলামী স্থাপত্যের সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করত এবং ১৪৯২ সালে গ্রানাডার পতনের আগে পর্যন্ত স্থানীয়দের পরিষেবা প্রদান করেছিল।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।