Home ইতিহাস ও জীবনী ইয়াদগারে আকাবির হযরত নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)

ইয়াদগারে আকাবির হযরত নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)

।। ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ ।।

[রাজধানীর অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাহবারে মিল্লাত আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর জীবন ও চিন্তাধারা শীর্ষক দিনব্যাপী এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশবরেণ্য বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম হযরতকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভার শেষ অধিবেশন বাদ মাগরীব প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন ড. মাওলানা মুুশতাক আহমদ (হাফি.) আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর উপর স্মৃতিচারণমূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব ও সময়োপযোগীতা বিবেচনা করে তাঁর বক্তব্যটির হুবহু অনুলিপি নিম্নে পত্রস্থ করা হল। – সম্পাদক]

“ছেতারুসি আভি যাহা আওর ভি হে,
আওর ইশক কি ইমতিহা আওর ভি হে”।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) এই তো এক মহা আসমান। যেখানকার নক্ষত্র গুণে শেষ করা যায় না। তাঁর একেকটা গুণ যদি আলোচনা করা হয়, দিনের পর দিন, সাপ্তার পর সাপ্তাহ, মাসের পর মাস চলে যাবে, তবুও নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর ঐরকম তারিফের সেই অতলান্ত কখনো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি সংক্ষেপে আমার কল্পিত চিন্তা-চিত্র যেটা আমি দেখেছি- আমার ছাত্র জামানায় তিনি আমার উস্তাদ ছিলেন, আমার মুরুব্বি ছিলেন, আমার রাহবার ছিলেন, আমার পথনির্দেশক ছিলেন, আমাকে আমি হিসেবে যিনি গড়ে তুলেছিলেন যিনি সূচনা পর্বে, তিনি হলেন হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর (রাহ.)।

শুধু সংক্ষেপে একটা কথা বলবো, আলেম দু’কিসিম কা হুতা হে, কুয়িকো ইবলু ওয়াক্ত হোতা হে আওর কুয়ি হুতা হে আবুল ওয়াক্ত। কেউ যামানার বড় আলেম হয়। আবার কেউ কেউ নিজের আঙ্গিকে পুরো পৃথিবীকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেন।

আল্লামা ইকবাল নিজের পছন্দমত জগত নির্মাণ করার যেই আহ্বান রেখে গিয়েছিলেন, তার সফল বাস্তবায়ক হয়েছিলেন যিনি আমাদের যুগে, তিনি হলেন হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)। কেন বললাম? আমি আমার আগের বিষয়তো জানি না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে মাদরাসার অঙ্গনে আসলাম। হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) এবং একঝাক যোগ্য আলেম দেওবন্দ থেকে তখন তাশরিফ এনেছিলেন এবং তারাও নবীন। মাত্র মাদরাসায় অধ্যাপনা শুরু করলেন। আমরা হলাম তাদের প্রাথমিক সময়ের ছাত্র। তারা এই বাংলাদেশকে নতুন একটা আবহ, নতুন একটা চেতনা, নতুন একটা জাগ্রত, নতুন একটা দাওয়াত নিয়ে ফরিদাবাদ কাজ শুরু করেছিলেন।

এই যে নতুনভাবে আমাদের বাংলাদেশের আলেম ওলামারা ইতিহাস কাকে বলে? সাহিত্য কাকে বলে? এই সমাজকে পরিচালনা করার মতো যোগ্যতা, সে জন্য আবার সেই শাহ ওয়ালী উল্লাহ হতে হবে। আবার মুজাদ্দিদে আলফেসানী জন্ম দিতে হবে। আবার কাসেম নানুতবী দুনিয়ায় আসতে হবে। আবার রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী জেগে উঠবে। ঐ একই চেতনা নিয়ে তাঁরা ফরিদাবাদ থেকে একঝাঁক যুবক আলেম তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব যাকে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে সদর বলা হতো, হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে কাজ শুরু হয়েছিলো।

আরও পড়তে পারেন-

আজকেও আমার কাছে ভালো লাগে, আমার ডানপাশে এই স্টেজের মধ্যেই উপবিষ্ট ঐ সেনাপতিদের অন্যতম আমার উস্তাদ হযরত মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক (দা.বা.)। আমরা চাতক পাখির মতো এই সাত ফরিন্দি আবুল ফাতাহ ইয়াহইয়া, আবু সুফিয়ান, আর আমরা এরকম কিছু ছাত্র ছিলাম, যারা এমন চাতক পাখির মতো থাকতো, আর এদেরকে সবক পড়াতেন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)। নফহাতুল আরব পড়াচ্ছিলেন। আমাদের সবকের ভিতরে শাহ ওয়ালীউল্লাহ কী ছিলেন, মুজাদ্দিদে আলফে সানী কী ছিলেন, সারা জগতকে শায়খুল হিন্দ কীভাবে হেন্ডেল করেছিলেন, পুরো ইতিহাস, পুরো দর্শন, পুরো কর্মপদ্ধতি; সবকিছু আদবের সবকের মধ্যেই শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

একি অদ্ভুত তাদের কর্মতৎপরতা, অদ্ভুত পদ্ধতি ছিলো। কিতাব দিলো তো সুল্লাম, কিতাব পড়াচ্ছিলেন। সারা বছর সুল্লাম কিতাবটা হাতেও নেন নাই। এই হলো আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)।

“ফর আবুল মাত জু আপনি ধউর মে পুরি দুনিয়াকো আপনি আন্দার সাজাতে হে উয়ে আলেমি থা উয়ে ইনসান থা হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)।  আমরা তো ফন্নে ফন জানি, আদব জানি, ফিকাহ জানি, বালাগাত জানি, উসূল জানি, কিন্তু নূর হোসাইন কাসেমী সবক পড়াতে পড়াতে এক পর্যায়ে নতুন একটা সবক যেটা আমি কোনদিন শুনিনি, কোনদিন জানিনি, সর্বপ্রথম শব্দটা হযরতের মুখ থেকে শুনেছিলাম। ইয়ে হায় ফলসাফায়ে কাসেমী।

হযরত বারবার বলতেন, কাসেমী বহুত হে লেকিন ফলসাফায়ে কাসেমী পর মোতালাআ করনে ওয়ালা বহুত কম হে। এরপর সবকের মধ্যে পড়াইতেছেন এক কিতাব, হয়তো ওই সবকের মধ্যে নিয়ে আসলেন ফলসাফায়ে কাসেমী কিয়া থা। আপনাদের কাছেও আমি এটা হলফ করে বলতে পারবো। সুল্লাম ভি পর চুকি হে, মোল্লা হাসান ভি পর চুকিহে, লেকিন ফলসাফায়ে কাসেমী আপকি সায়াদকো মালুম হে। এই যে ফলসাফায়ে কাসেমী নতুন আঙ্গিকে হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতবী (রাহ.) পৃথিবীকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর জন্য একটা ফিকির নিয়ে আসলেন। এই ফিকিরকে হযরত কাসেমী সাহেব অনেক উচ্চ পর্যায়ের নিয়ে গেছেন। আমি হুজুরকে জিঙ্গাসা করলাম, হুজুর ফালসাফায়ে কাসেমী জিনিসটা কি? হুজুর সংক্ষেপে আমকে যেটা বুঝালেন, সেটা হলো- দেখ হযরত নানুতবী আলাইহি রাহমা পুরে শরয়ী ইয়াদ থি। যেরকম আকলিয়াতের দ্বারা শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাজিয়েছেন, মাখসুসাতের দ্বারা শাহ আব্দুল আজিজ সাজিয়েছেন, এরকমভাবে ফিতরিয়াতের দ্বারা পুরো শরীয়তকে ব্যাখ্যা করেছেন হযরত নানুতভী। বুঝানোর জন্য বলতেছি, নাকটা উপরে, চোখটা আরো উপরে, কপালটা আরো উপরে। হযরত নানুতবী প্রমাণ করেছেন কপালটা এখানে থাকা এটাই হটাই হলো আকলের তাকাযা। এই জন্যে কপালকে উপরে রাখা হয়েছে। এরপর কুরআন-হাদীস যুক্তিতর্ক দিয়ে এটাকে প্রমাণ করেছেন। চোখ কোথায় থাকতে হবে? 

যেখানে রাখা আছে এটাই যুক্তিযুক্ত। এটাকে হযরত নানুতবী ব্যাখ্যা করতে করতে মক্কা মুকাররামা দুনিয়ামে কাহা হুনা চাহিয়ে থা, মদীনা মুনাওয়ারা কাহা হুনা চাহা থা, আওর মক্কা ছে মদিনা কেতনি দূর চাহিয়ে হুনা থা। এই রকমভাবে হার হার ফিতরিয়্যাতকে আকলিয়্যাতের দ্বারা, মাখসুসাতের দ্বারা, মানকুলাতের দ্বারা প্রমাণ করার যে এক ফলসাফা, আল্লাহু আকবার।

হামি কাহি ভি নেহি মিলা ইহা তক কে দুনিয়া কে বহুত রুকু মে হাম খুবি হুয়ি হে, লেকিন ফলসাফায়ে কাসেমী কা তাহকীকাত কুয়ি নেহি মিলা। এক যাগা পর মিলা থা ও হায় হামারে উস্তাদ হযরত মাওলানা বাকিয়াতুস সালাফ, ইয়াদগারে আকাবির, হযরত নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)।

অনুলিখনে- মুহাম্মদ নূর হোসাইন সবুজ

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।