Home ইতিহাস ও জীবনী দেওবন্দিয়াত বলতে কি বুঝায় এবং দেওবন্দী কাদেরকে বলা হবে?

দেওবন্দিয়াত বলতে কি বুঝায় এবং দেওবন্দী কাদেরকে বলা হবে?

।। মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া ।।

দেওবন্দ হিন্দুস্তানের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার একটি থানার নাম৷ এখানে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম দেওবন্দ৷ প্রতিষ্ঠালগ্নে এর নাম দারুল উলূম ছিল৷ পরবর্তীতে জামিয়া ইসলামিয়া সংযোগ হয়েছে৷

দেওবন্দিয়াত বলতে কি বুঝায়? দেওবন্দী কাদের বলে? নির্দিষ্ট ঘরনার প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করার ফলেই কি দেওবন্দী বলা হবে?

এ প্রসঙ্গে মুরশিদুনা ও শায়খুনা ফিদায়ে মিল্লাত হযরত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী (রাহ.)এর একটি আলোচনা উল্লেখ করতে চাই৷

হযরত বাংলাদেশ সফরকালে হাটহাজারী মাদরাসার পুরাতন দারুল হাদীসে সমবেত উলামায়ে কেরাম ও ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, শুধু দেওবন্দী, দেওবন্দিয়াত বলা ঠিক নয়৷ দেওবন্দী ও দেওবন্দিয়াত বলার দ্বারা নিজেদেরকে নির্দিষ্ট গন্ডীবদ্ধ করা হয়৷ মূলত দেওবন্দিয়াত একটি নজরিয়া একটি বিপ্লবী চেতনার নাম৷ দেওবন্দিয়াতের মূলেই হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা-বিশ্বাসের চেতনা ধারন করা, লালন করা এবং প্রচার করা৷ দেওবন্দিয়াতের তুলনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ব্যাপক অর্থবহ৷

হযরত (রাহ.) আরো বলেন, এ হিসেবে কেবল দেওবন্দ কিংবা দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার দ্বারা দেওবন্দি হওয়া যায় না৷ আবার এ ঘরনার কোন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন না করেও দেওবন্দি চেতনা ধারন, লালন করায় দেওবন্দি হওয়া যায়৷

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মানদন্ড হল- মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবিহী৷ এর বাইরের চেতনা যারা লালন করবে তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ভুক্ত নয়৷ এর বিপরিত চেতনাধারী কেউ আহলে সুন্নাতভুক্ত হওয়ার দাবী করলে তা হবে সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা৷ এর উপর ভিত্তি করে দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া না করেও আহলে সুন্নাহর চেতনাধারী দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরার সদস্য মনোনীত হতে পারেন৷ দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরার সদস্য মনোনীত হওয়ার বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্যতম হল- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের চিন্তা-চেতনার অধিকারী এবং মাযহাবগতভাবে ইমাম আযম ইমাম আবু হানিফার অনুসারী হওয়া৷

আরও পড়তে পারেন-

হযরতের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, দেওবন্দি চিন্তা-চেতনার জন্য দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন শর্ত নয়৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিজনই দেওবন্দি৷ দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে কেউ যদি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের চিন্তা-চেতনা বিরোধী হন, তিনি কোনভাবেই দেওবন্দি হওয়ার দাবী করার হক রাখেন না৷

সন্দ্বীপের মাওলানা অজিউল্লাহ হযরত আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রাহ.)-এর সমসাময়িক ছিলেন৷ দেওবন্দ থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর কট্টর বিদআতী হয়ে যান৷ এমন কিছু কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে যান, যা আহলে সুন্নাহর বিপরিত৷ বিদআতী কখনো দেওবন্দি হতে পারে না৷

যেভাবে কোন বিদআতী দেওবন্দি হতে পারে না তদ্রুপ নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, উম্মাহাতুল মুমিনীন, কুরআন, হাদীসের সমালোচনাকারী, কটূক্তিকারী ও নাস্তিক, মুরতাদের সমর্থনকারীও দেওবন্দি হতে পারে না৷ এ ধরনের লোকদের কর্মসূচীর প্রতি সংহতি প্রকাশকারীও দেওবন্দি তথা আহলে সুন্নাহর দলভুক্ত হতে পারে না৷ যেভাবে আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরামের সমালোচকদের মুখোশ উন্মোচন জরুরী, তদ্রুপ নবী-রাসূলের কটূক্তিকারী, ব্যঙ্গকারী, চরিত্র হননকারীর বিরোধীতাও আহলে সুন্নাহর দাবীদারের জন্য অপরিহার্য৷ একটির বিরোধিতায় অপরটির প্রতি সংহতি প্রকাশ দেওবন্দি চেতনার ধারকের পরিচয় নয়৷ বিদআতী, মাজারি যেভাবে অগ্রহণযোগ্য, তদ্রুপ নবী-রাসূলদের কটূক্তিকারী, চরিত্র হননকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশকও গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে বিবেচ্য নয়৷

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।