Home ইতিহাস ও জীবনী আল্লামা কাসেমী (রাহ.)কে আমি যেমন দেখেছি

আল্লামা কাসেমী (রাহ.)কে আমি যেমন দেখেছি

ছবি- উম্মাহ।

।। মাওলানা আবদুস সাত্তার ।।

১৯৯৯ইং সালে শরহে বেকায়ার বছরে একদিন কুমিল্লার ইসমাইল ভাইয়ের সাথে নাহূ সারফ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। তখন আমি কুমিল্লার এক স্বনামধন্য মাদরাসার তালিবে ইলম। তিনি “আলহামদু” শব্দ নিয়ে নাহূ সারফ এর পুরা আলোচনা চালিয়ে দিলেন। অথচ তখনো জানতাম না, “আলহামদু” যে ইসম সেটা কী কারণে।

তো এরপর আমার দিলে একটি তলব পয়দা হলো, আমাকে এগুলো শিখতে হবে যে কোন মূল্যে। কুমিল্লা ছেড়ে ঢাকায় চলে এলাম। সমস্যায় পড়লাম কোথায় ভর্তি হব। ২০০০ ঈসায়ী সাল। মুফতী ফজলুল হক আমিনী সাহেব রহ. এর মাদরাসা জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগে ভর্তি হলাম। ইতিমধ্যে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারপতি গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সকল প্রকার ফতোয়া অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত ঘোষণা করেন। এতে মুসলমানদের অন্তরে বিশেষত দেশের কওমী মাদরাসাসমূহের অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিলো।

এর প্রেক্ষিতে মুফতী ফজলুল হক আমিনী সাহেব রহ. ঐ বিচারপতিসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের মুরতাদ কাফের বলে ফতোয়া দিলেন। মাদরাসাসমূহের হুজুর ও ছাত্রদের পাশাপাশি ইসলামপ্রিয় মুমিনভাইগণ ঢাকাসহ পুরা দেশের রাজপথ দখলে নিলো। আন্দোলন, মিছিল ও মিটিংয়ে চারিদিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করলো। তখন লালবাগ মাদরাসা থেকে আমাদের জামাতের ছাত্ররাই বেশি কর্মতৎপর ছিল। এজন্য প্রত্যেক জনসভা আর মিছিল মিটিংয়ে আমরাই থাকতাম প্রথম সারিতে। তখন অনেক মনিষীদের ভিড়ে একজন সহজ সরল অথচ দৃঢ়চেতা মুখলিস ও দরদী মানুষকে লক্ষ্য করতাম। নিরবে নিভৃতে একজন নিঃস্বার্থ মানুষকে সকাল সন্ধ্যায় লক্ষ্য করতাম জামিয়া লালবাগে যাওয়া আসা করতেন। তাঁর বক্তৃতা ছিলো খুবই সাজানো গুছানো ও সংক্ষিপ্ত অথচ জ্বালাময়ী। অন্তরে দাগ কাটতো। হযরতের সুউচ্চ মাকাম সম্পর্কে তখনই কিছু ধারণা হয়ে গিয়েছিলো।

তারপরও আরো কিছু ধারণা নেয়ার জন্য আমার সহপাঠী হাফেজ মাওলানা ইসমাইল ভাইকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, তিনি হলেন একাধারে দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন, শাইখুল হাদিস, প্রাজ্ঞ ইসলামী রাজনীতিবিদ ও আধ্যাত্মিকজগতের শাইখে কামেল। পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব, নানাবিধ দ্বীনী অবদান ও নীতিনিষ্ঠার কারণে দেশের আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ভালোবাসার পাত্র। তার সান্নিধ্যে কেউ অল্প সময়ের জন্য এলেও তার ব্যক্তিত্ব ও উত্তম আখলাকের সম্মোহনে সে বিশেষভাবে সম্মোহিত হয় এবং তার ভালোবাসা অন্তরে নিয়ে ফিরে যায়। তার শিষ্যত্ব লাভকারী আলেম ও তালিবে ইলমরা তো তার জন্য নিবেদিতপ্রাণ। লাখো মানুষের অন্তর্লোকে ভালোবাসার তরঙ্গ সৃষ্টিকারী, ছাত্র ও মানুষ গড়ার কারিগর। মাদরাসা এবং তালিবে ইলমদের জন্য উৎসর্গিতপ্রাণ এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন! কিন্তু যারা হযরতকে চেনেন তারা খুব ভালোভাবেই জানেন-এই বৈশিষ্ট্যগুলো হযরতের মাঝে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান।

সুযোগ্য ও আদর্শ ছাত্র গড়া এবং সুদক্ষ আলেম তৈরির ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার। অমনোযোগী ও হতাশাগ্রস্ত ছাত্রদের তিনি আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে কৌশলে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলেন। আর মেধাবীদের বিশেষ উৎসাহ ও নৈকট্য দিয়ে তাদের মেধা-মননকে বিকশিত করার ব্যবস্থা করেন পরম দক্ষতার সাথে। আসলে তখনও বুঝিনি যে তিনিই ছিলেন তখনকার ওলামা মাশায়েখ আন্দোলন আর ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা আর নেপথ্য কারিগর।

আমি হুজুরের ব্যাপারে এগুলো শুনে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাাসায় ভর্তি হবো। পরে কোনো কারণে বারিধারায় ভর্তি না হয়ে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা জামিয়া মানিকনগরে ভর্তি হলাম। তখন অনেক কাছে থেকেই তাঁকে দেখার সুযোগ হলো। তাঁকে যতর দেখতাম আর তাঁর কথাগুলো শুনতাম, ততই তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার অদম্য স্পৃহা মনে জাগ্রত হতো। ২০০৩ ঈসায়ী সালে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় মেশকাত জামাতে ভর্তি হলাম। প্রথম পরীক্ষা পর্যন্ত ভয়ে হুজুরের আশেপাশে যাওয়ার সাহস হতো না। পরীক্ষার পর একদিন হুজুর স্বভাবসুলব নিজেই আমাকে ডেকে নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন। সেদিন আমি খুবই শিহরিত ছিলাম। এরপর থেকে হুজুরের কাছে একটু আধটু যাওয়া আসা শুরু হলো। হুজুরের প্রতিটি কথা, প্রতিটি নির্দেশ কেমন জানি স্বর্গীয় অনুভব হতো।

আরও পড়তে পারেন-

ছাত্ররা কোনো অসুখে আক্রান্ত হলে হুজুর নিজ পায়ে হেঁটে এসে মাথায় হাত রেখে পরম আদর ও পিতৃস্নেহে হালপুরছি করতেন। তিনি মাঝে মধ্যেই বলতেন, বাজি! আগে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা তারপর লেখাপকড়া। এতেই বুঝা যায় তিনি ছাত্রদের প্রতি কতোটা স্নেহশীল ছিলেন। তাঁর এই বাজি সম্বোধনটাই কেমন জানি ছাত্রদেরকে সম্মোহিত করতো। অসুস্থতা প্রায়ই সেরে যেত। তাঁর এই সম্বোধনে কেমন জানি মনটা প্রশান্ত হয়ে যেত। “বাজি” ছোট্ট একটি শব্দ। অথচ মায়া-মমতা, নিঃস্বার্থ স্নেহ-ভালোবাসা, শাসন-সোহাগের সবকিছু লুকিয়ে আছে এই শব্দের মধ্যে। বাজি উচ্চারণ করলেই হৃদয়ের মণিকোঠায় ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়। পৃথিবীর সব শিক্ষকই শ্রেষ্ঠ, তবে তিনি অনন্য, অতুলনীয়। আমি কোনো শিক্ষককে ছোট করছি না।

সব শিক্ষকই তার সন্তানসম ছাত্রদের ভালোবাসেন। কিন্তু আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি ছাত্রদের হার হার বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। যাকে যে কৌশলে বললে ইলমের তরাক্কী হবে তাকে সেভাবেই কাজে লাগাতেন। একজন রাজনীতিবিদ, মাঠের নেতা, ক্লাসের শিক্ষক, শায়খুল হাদিস ও পীর হিসেবে তার উদাহরণ তিনিই। তার মতো মমতাসুলভ ব্যবহার সাধারণত অন্যকে করতে দেখিনি। তার মতো শাসন-সোহাগ মেশানো সম্বোধন সাধারণত কেউ করেন না। বিভিন্ন সংকট ও উদ্বেগের সময় তিনি যেভাবে ছাত্র, শিক্ষক ও নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছেন, সদ্য মাওলানা পাশ করা ছাত্রদের কর্মসংস্থানের জন্য চেষ্টা করেছেন- তা বিরল ঘটনা।

ছাত্রদের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিও খেয়াল রাখতেন। কখনো নিজের পকেট থেকে আবার কখনো অন্যের মাধ্যমে ব্যবস্থা করিয়ে দিতেন। যার দৃষ্টান্ত আমি নিজেই।

আমাদের দাওরা হাদীস সমাপনী বেফাক পরীক্ষা শেষে হুজুরের কাছে গেলাম বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতির জন্য। উদ্দেশ্য ছিলো, আমার কাছে টাকা ছিলো না, হুজুরের কাছে গেলে হয়ত জিজ্ঞেস করবেন, বাজি! ভাড়া আছে তো? কিন্তু অপ্রত্যাশিত হুজুর আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতি নেই। সামনে রমযান মাস। তিলাওয়াত আর নাওয়াফেলে মশগুল থাকো।

আমি চলে গেলাম। ১৭ রমযানে আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, বাজি! দারুল উলূম দেওবন্দ যাবি? বললাম, হুজুর! যেতে মন চাইছে, কিন্তু সামর্থ্য তো নেই। হুজুর সাথে সাথে পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা আমাকে দিয়ে বললেন, এগুলো দিয়ে জরুরি পাসপোর্ট বানাও আর ভিসা লাগাও। আহ! আমার অশ্রু ঝরতে লাগলো। দু’কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যাহোক, দেওবন্দ যাওয়ার জন্য আমার আব্বা আমাকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে বললেন, আমার এতটুকুই সামর্থ্য। আমি সেটা নিয়েই বারিধারায় গেলাম। হুজুরের সাথে দেখা করলাম। সাথে সাথে হুজুর কিছু টাকা দিয়ে বললেন, টিকিট করে আস। যাওয়ার পূর্বক্ষণে আমাকে কয়েকশ ডলার দিয়ে বললেন, বাজি! আল্লাহ বরকত দিবেন।

এরকম আরো অনেক দৃষ্টান্ত আছে। আসলেই হুজুর ছিলেন আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি স্নেহশীল। সবসময় আমাদেরকে পিতৃস্নেহে আগলে রাখতেন।

সাধারণত দাওরা ফারেগ হওয়ার পর শাইখদের সাথে ছাত্রদের তেমন একটা সাক্ষাৎ হয় না। অথবা হুজুররাও তেমন একটা খোঁজ খবর রাখতে পারেন না। এক্ষেত্রেও আমাদের বাজি ছিলেন ব্যতিক্রম। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র নির্বাচন করে খেদমতে লাগিয়ে দেয়াার এক অঘোষিত দায়িত্ব যেন মাওলায়ে করীম আমাদের বাজিকে দিয়ে রেখেছিলেন। কোনো কমতি থাকলে সংক্ষিপ্ত একটি দরসে তার সে কমতিগুলো শুধরে দিতেন কিংবা দিকনির্দেশনা দিয়ে দিতেন। আর নতুন মুদাররিসদের বলতেন, বাজি! কাজ তিনটা। তিলাওয়াত করবা, জামাতে নামাজ আদায় করবা আর জমে মুতালাআ করে দরস দিবা। কর্মক্ষেত্রে পাঠিয়েই তিনি দায়িত্ব¡মুক্ত হয়ে গেছেন এমনটি কখনোই হতো না। সবসময় সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে থাকতেন। কী সুবিধা আর কী অসুবিধা এগুলো নিয়েও ভাবতেন। আহ! এমন মায়া-মমতা, নিঃস্বার্থ স্নেহ-ভালোবাসা, শাসন-সোহাগের মানুষকে হারিয়ে সত্যিই আমরা আজ এতীম হয়ে গেছি।

কোনো মুদাররিসের ব্যাপারে অভিযোগ এলে তাকে ডেকে বিভিন্ন উপায়ে সংশোধন করার চেষ্টা করতেন। এরপরও অভিযোগ আসলে তিনি অন্য উপায়ে তার সংশোধন করার চেষ্টা করতেন। যদি দেখতেন অভিযোগটা কোনো ভুল বুঝাবুঝির কারণে, তাহলে মুদাররিসের সেই যোগ্যতা থাকলে তাকে আরো আরো দিতেন। নিরুতসাহিত করতেন না।

অনেকেই বলেন, হযরত কাসেমী রহ. তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপারে ততটা মনোযোগি ছিলেন না। আমি বলবো তাদের এই ধারণা সঠিক নয়। আমার মাদরাসার সেক্রেটারী অভিযোগ করলেন, মাওলানা আবদুস সাত্তার বিকেল টাইমে কম্পিউটার শেখে। হুজুর আমাকে ডেকে কম্পিউটার এর খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করে এটা শেখার উপকারিতা আর অপকারিতা বিষয়ে বিস্তর জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। আমি যতটুকু সম্ভব সন্তোসজনক আলোচনা পেশ করলাম।

অতঃপর হযরত কাসেমী রহ. আমাকে উৎসাহ দিয়ে বললেন, বাজি! এই জগতে ভালো যা কিছু আছে শিখে নাও। ইংরেজী ভাষা শেখার ব্যাপারে অনুমতির জন্য হুজুরের কাছে গেলাম। হুজুর সাথে সাথে অনুমতি দিয়ে বললেন, বাজি! ইংরেজি শেখ; কিন্তু ইংরেজ হয়ে যাস না। আহ!। আমি সাভারে এক মাদরাসায় খেদমতকালীন এক মুদাররিসের ব্যাপারে শেকায়েত হলো। আমি তখন বারিধারায় হুজুরের সামনে বসা।

লোকজন চলে গেলে আমি পূর্বাপর না ভেবে বল্লাম, হুজুর! সে তো মাযূলের যোগ্য। এর কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। সে আপনার আর বারিধারা মাদরাসার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আহ! হুজুর বললেন, বাজি! আমি তো তার কলবের মালিক নই। তার বাহ্যিক অবস্থা বিবেচনা করেই পাঠিয়েছিলাম। চেয়েছি যদি তার একটু উপকার হয়; কারণ তার পরিবার আছে। সে তো মানুষ। ভুলভ্রান্তির উর্ধ্বে নয়। চেষ্টা করি যদি কোনো উপায়ে সংশোধন করা যায়। এরপর না হলে মাওলার হাতে সোপর্দ।

শুধু মুদাররিস হিসেবে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হতেন না, কিভাবে দরস দিতে হবে সে কায়দা কৌশলও শিখিয়ে দিতেন। আমরা দেওবন্দ থেকে আসার পর বেশ কয়েকজনকে ডেকে বললেন, এই ছ্যামরারা! আয়! আজ তোদেরকে ‘মিযান মুনশাইব’ পড়াবো। সেদিন হুজুর আমাদেরকে প্রায় ২ ঘন্টার একটি দরসে পুরা মিযান ও মুনশাইব বুঝিয়ে পড়িয়ে দিয়ে বললেন, বাজিরা! এইটা হলো মুদাররিসী। এখন তো আগের মতো পারি না। না হলে দেখিয়ে দিতাম মুদাররিসী কাকে বলে। ছাত্র গড়বে না কেনো! তাদেরকে মুশফিকানা আন্দাজে মেযাজ বুঝে দরস দিতে হবে। ইবারত ঠিক করিয়ে দিতে হবে। এমনি এমনি মুদাররিস হওয়া যায় না। খোদার কসম! ঐদিনের পূর্বে মিযান মুনশাইব পড়ার বা পড়ানোর মজা বুঝে আসেনি। এমনি আরো অনেক কিছুই ছিলেন আমাদের বাজি।

তালিবে ইলম আর মুদাররিসদের পাশাপাশি জাতির ফিকিরেও তিনি থাকতেন সদা মশগুল। জাতির ফিকিরে আল্লামা কাসেমীর হৃদয় থাকতো সদা বে-চাইন। কোমলতা তার হৃদয় ছুঁয়ে যেত। মানুষ গড়ার তন্ময়ে ছুটতেন বন্ধুর প্রান্তর। রাতভর নিমগ্ন থাকতেন ইবাদত কিংবা তিলাওয়াতে। দিনের বেলায় তাঁর গর্জনে ভন্ডুল হয়ে যেত বাতিলের তাসের ঘর।

তিনি প্রায়ই বলতেন, বাজি! আমি আমার ছেমরাদের ব্যপারে গাফেল নই। তিনি আরো বলতেন, কারো উন্নতি অগ্রগতি দেখে ঈর্ষান্বিত না হয়ে অধ্যাবসায় করো। কামিয়াবির পিছনে না দৌড়ে জাতির হেদায়েতের পেছনে দৌড়াও। আরও বলতেন, নিজের ফিকির না করে জাতির ফিকির করো, কারণ তোমার বিষয় তো মালিকের সংরক্ষণেই আছে।

তিনি বলতেন, বাজি! বড়দের সমালোচনায় লিপ্ত হয়ো না। বড়দের সমালোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করো। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব দেশ ও জাতিসত্ত্বা এসবই তোমার উপর অর্পিত আমানত। এগুলোর যথাযথ হেফাজত করো। তিনি প্রায়ই বলতেন, বড়রা সাগরের পানির মতো। হাজারো নাপাকীতে যেমন সাগর নাপাক হয় না, ঠিক বড়দের আস্তিনও নাপাক হয় না। আর আমি তুমি লোটার পানির মতো, এক ফোটাতেই নাপাক হয়ে যাবো।

হুজুরের ইন্তেকালে জাতীয় অঙ্গনতো বিশাল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেই। সাথে সাথে এমন দরদী আর স্নেহময়ী মানুষের বিদায়ে ইলমী অঙ্গন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তা আর কোনোদিন কোনোভাবে পূরণ হবে না। প্রকৃতপক্ষে আমরা একজন দায়িত্ব¡শীল ও সচেতন অভিভাবক আর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এক দায়ী হারিয়ে বস্তুত এতীম হয়ে পড়েছি। জাতি আজ খুব ভালোভাবেই তা অনুভব করছে।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.) কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। আজীবন নীতি ও হক আদর্শে উপর অটল অবিচল থেকে ঈমান ও তওহীদি জনতার পক্ষে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় রেখে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। টঙ্গীর ধউর এলাকায় তার প্রতিষ্ঠিত জামিয়া সুবহানিয়ার গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

তিনি এখন আমাদের মাঝে নেই, এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। আমরা দারুণভাবে তার শূন্যতাবোধ করবো। আসমানের মালিকের কাছে দু‘আ করি, তিনি আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী (রহ.)কে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

লেখক: জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা থেকে ২০০৪ সালের ফারেগ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।